কেরানীগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল

» নেই কোন প্রশিক্ষিত শিক্ষক।
» কিন্ডার গার্টেনগুলো চলছে তাদের মনমতো।
» সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
» অর্থ বানিজ্যই যেন এসব স্কুলের মূল উদ্দেশ্য।
» লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়েই অভিভাবকদের আকৃষ্ট করছে।
» বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে, দেখার যেন কেউ নেই।

রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জের ১২টি ইউনিয়নেই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন স্কুল। অধিকাংশ কিন্ডার গার্টেন গুলোতে নেই প্রশিক্ষিত শিক্ষক, যার কারনে এসব স্কুলগুলোর অধিকাংশের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের।

মূলত শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে নানা উপায়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করাই এই সব কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোর মূল উদ্দেশ্য। শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে বেছে নেয়া এসব স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষকদের অর্থ বানিজ্যে দিশেহারা হয়ে পরেছে ছাত্রছাত্রী ও অভিবাবকরা।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা জুড়ে কিন্ডার গার্টেন আছে প্রায় পাচশয়ের কাছাকাছি । যদিও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে কিন্ডার গার্টেন আছে ২৬৭টি। এর মধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসে নিবন্ধন আছে ৯০ টির মতো। কোন সরকারি স্কুলের ২ কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোন স্কুল প্রতিষ্ঠার নিয়ম না থাকলেও একাধিক কিন্ডার গার্টেন গড়ে উঠেছে কেরানীগঞ্জের বেশ কয়েকটি সরকারি স্কুলের পাশে। এসব কিন্ডার গার্টেন চলছে তাদের নিজস্ব মনগড়া নিয়ম অনুযায়ী।

সরকারী অনুমোদন না থাকায় মানহীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিপাকে পড়েছে কেরানীগঞ্জবাসী । কোন প্রকার নিয়ম নীতি না থাকায়, বাসা বাড়িতে কয়েকটি ফ্লাট অথবা অল্প পরিসরে কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়েই গড়ে উঠেছে এক একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল। অভিভাবকরা এসব কিন্ডার গার্টেন শিক্ষার্থীদের পিছনে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করলেও অনেক কিন্ডার গার্টেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না সঠিক শিক্ষা। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব কিন্ডার গার্টেন শিক্ষকরা অধিকাংশ এসএসসি পাশ। কিন্ডার গার্টেন মালিকরা শিক্ষকদের নামমাত্র সম্মানী দিচ্ছেন। ফলে এসব শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়ান। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, যে সকল ছাত্র ছাত্রীরা এদের কাছে প্রাইভেট পড়ে তারা প্রতিটা পরীক্ষায় ই ভালো নাম্বর পায় । যারা প্রাইভেট পড়ে না তারা ভালো লেখা পড়া করেও শিক্ষকদের দৃষ্টিগ্রাসে খারাপ ফলাফল করে।

আগানগরে ইস্পাহানী এলাকায় গৃহকর্মীর কাজ করেন দিলারা। তার সন্তানকে এবার ইস্পাহানীর একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন আড়াই হাজার টাকায়। দিলারা জানান, তার সন্তানের সমবয়সীরা ঐ কিন্ডারগার্ডেনে পরে তাই তার সন্তানকেও তিনি এ স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।

শুভাঢ্যার বাসিন্দা মো: শরিফুল হক। তার ছেলে শুভাঢ্যা একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে তৃতীয় শ্রেনীতে গোল্ডেন এ+ পেয়েছে। এতো ভালো রেজাল্ট করার পরেও কেন ছেলেকে সরকারী স্কুলে দিচ্ছেন না এমন প্রশ্ন করতেই শরিফুল হক বলেন, সরকারী স্কুলে শিক্ষকরা ঠিক মতো পড়ায় না, পরীক্ষার খাতাও ঠিক মতো দেখে না। অন্যদিকে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা ঠিক মতো পড়ায় আর পরীক্ষার সময় ও বেশি মার্কস দেয় । তাই সে তার সন্তানকে কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে পড়ানোর পক্ষে।

আমবাগিচার সামসুল ইসলাম তার সন্তানকে ভর্তি করিয়েছেন একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে। অথচ তার বাসার পাশেই আমবাগিচা সরকারি স্কুল। সামসুল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান কিন্ডার গার্ডেনের পরিবেশ অনেক সুন্দর, এই কিন্ডার গার্ডেনের ছাত্রছাত্রীরা ভালো মার্কস পায় তাই তিনি কিন্ডারগার্ডেনে দিয়েছেন।
মূলত বিভিন্ন প্রতিক’লতা, লোভনীয় বিজ্ঞাপন, চাকচিক্যপূর্ন পরিবেশ, প্রতিযোগীতা আর পরীক্ষায় বেশি নাম্বার দেয়ার কারনেই অনেক অভিভাবক আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে এসব কিন্ডারগার্ডেনের ওপর।

এ বিষয়ে ১০০ নং আমবাগিচা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াসমিন বলেন প্রতিবছর ই আমাদের স্কুলে কিন্ডার গার্টেন গুলো থেকে অনেক বাচ্চা ভর্তি হয়। দেখাযায় ওরা ঠিক মতো রিডিং ও পড়তে পারে না। কিন্ডার গার্ডেন গুলোতে শুধু ইংরেজির ওপর বেশি জোড় দেয়া হয়। ফলে বাচ্চারা অন্য সাবজেক্টে অনেক দুর্বল হয়। কিন্ডার গার্টেন স্কুল দরকার আছে কিন্তু অবশ্যই তা মান সম্মত ও সঠিক নিয়মনীতি মেনে তৈরী করতে হবে।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাজেদা সুলতানা এ বিষয়ে বলেন, কিন্ডার গার্টেনের বিষয়ে সরকারী ভাবে আমাদের কোন দায়িত্ব দেয়া হয় নাই। তারপরেও উপজেলার স্বার্থে প্রশাসনকে সাথে নিয়ে ডিসেম্বর মাসে একটি রেজুলেশন করা হয়েছে। আশা করি কেরানীগঞ্জের সব কিন্ডার গার্টেন দ্রুত সময়ের মধ্যে রেজুলেশনের আওতায় চলে আসবে। সরকারী স্কুলের শিক্ষকরা ঠিকমতো বাচ্চাদের পড়ায় না, একটা সময় এ অভিযোগ সত্য ছিলো, কিন্তু এখন দিন দিন তার পরিবর্তন হচ্ছে। অভিভাবকদেরকেই কিন্ডার গার্টেনের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া দরকার । অনিবন্ধিত কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোকে কেন সরকারী বই দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এদেরকে সময় দিয়েছি এরা রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলবে।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, নতুন করে অনুমোদন ছাড়া কোন কিন্ডার গার্ডেন করতে দেয়া হবে না। যেগুলা আছে খুব শীঘ্রই সবগুলো কিন্ডার গার্ডেন নির্দিষ্ট আইন ও নিয়ম নিতীর মধ্যে নিয়ে আসা হবে।

একদিকে সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নানান কর্মসূচি গ্রহন করছে। অন্যদিকে নামে বেনামে অলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কিন্ডার গার্টেন স্কুল কোমলমতি বাচ্চাদের শিক্ষার ভবিষ্যৎ শুরুতেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই।

নিউজ ঢাকা

আরো পড়ুন,রাজবাড়ীর উড়াকান্দা গ্রামে বিশাল আকৃতির হাতির অবস্থান

Check Also

কেরানীগঞ্জে-দখলকৃত-বাড়ি-ফিরে-পেল-ভুক্তভোগী-পরিবার

কেরানীগঞ্জে আব্বা বাহিনীর বাড়ি দখল,১০মাস পর বাড়িতে ঢুকলো দম্পতি

ঢাকার কেরানীগঞ্জে আলোচিত আব্বা বাহিনীর হাতে দখল হওয়ার ১০ মাস পরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের …