অলরাউন্ডার ; ইতিহাসের সেরা দশ সব্যসাচী ক্রিকেটার ।

 

অলরাউন্ডার অলরাউন্ডার শব্দটি বাংলা ভাষায় জনপ্রিয় করে তোলার পুরো কৃতিত্ব বর্তমান বিশ্ব সেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান এর। বাঙ্গালী এই ক্রিকেট পরিভাষাটি আপন করে নেওয়ার নেপথ্যে এই নাম্বার ওয়ান সাকিব।

পরিশ্রম আর সাধনার খেলা ক্রিকেট। ব্যাটিং আর বোলিং দুই শ্রেণির মিশেলে গড়া অলরাউন্ডার নামের এই সব্যসাচী খেলোয়াড়রা সম্ভবত ক্রিকেটের সবচেয়ে সুন্দর অংশের একটি। বোলিং এবং ব্যাটিং দুই বিভাগেই দক্ষ এই বিশেষ শ্রেণি দলের সাথে মানিয়ে যেতে পারেন খুব সহজেই। যেকোন দলের ব্যাটিং ও বোলিং এর ভারসাম্য আনয়নে অলরাউন্ডারদের ভুমিকা অনন্য।

 

নিচে এক নজরে দেখে নেয়া যাক ক্রিকেট বিশ্বের সেরা ১০ অলরাউন্ডার ।

১. জ্যাক ক্যালিস (দক্ষিন আফ্রিকা):

সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত এই কিংবদন্তী প্রায় দুই দশক ধরে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আপের স্তম্ভ।ব্যাটিং এর পাশাপাশি তার মিডিয়াম পেস বোলিং এর পরিসংখ্যান ও রীতিমত ঈর্ষনীয়।

বয়সের সাথে সাথে বলের গতি কমে গেলেও পঞ্চম বোলার হিসেবে গুরুত্বপুর্ণ জুটি ভাঙ্গার কাজটি করে গেছেন নিয়মিতই।টেস্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হবার সাথে ক্যারিয়ারে ৫৬৫ উইকেট নিয়ে ১৮ বছরের বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানেন জ্যাক ক্যালিস।

২. শহিদ আফ্রিদি( পাকিস্তান) :

এক সময় মারমার কাটকাট ব্যাটিং এর প্রতিমূর্তি হয়ে যাওয়া শহিদ আফ্রিদির পারফরম্যান্স সবসময়ই অনিশ্চিতার জালে আবদ্ধ। ভয়-ডরহীন ব্যাটিং, মাঝে মধ্যেই পেস বলের গতিতে স্পিন, অসংখ্যবার অবসরে গিয়ে আবার ফিরে আসা এসব মিলিয়েই অলরাউন্ডার আফ্রিদি।ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকভাবে অধারাবাহিক আফ্রিদির ব্যাট হেসেছে খুব কমই।

তবে যখনই হেসেছে অবাক হয়ে দেখেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। চার ছক্কার ফুলঝুড়িতে ‘বুমবুম’ নামের খেতাব অন্তত তাই বলে।তবে তার বোলিং ফর্ম ব্যাটিং থেকে অনেকটাই আলাদা। ঘুর্ণি লেগ স্পিন, গুগলি দিয়ে অহরহই ঘায়েল করেছেন বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যানদের।তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৮০০০ ওডিআই রানের পাশাপাশি ৩৯৫ উইকেট।টেস্ট ও ওডিআই থেকে অবসরে গেলেও অভিষেকের ২০ বছর পরও এখনো প্রতাপে খেলে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি।

৩. ইমরান খান (পাকিস্তান):

পাকিস্তান ক্রিকেটের পুনর্জন্ম যার হাত ধরে সূচিত তিনি আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার ইমরান খান।৩৯ বছর বয়সে ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে এসেও দোর্দাণ্ড প্রতাপে পাকিস্তানকে জিতিয়েছেন ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ।প্রায় ২০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গন দাপিয়ে অবসর নেন এই পাকিস্তান কিংবদন্তী।

৪. ক্রিস কেয়ার্নস  (নিউজিল্যান্ড):

নব্বই দশকের শেষ ও নতুন শতাব্দীর শুরুতে বেশ কয়েকজন ধারাবাহিক পারফর্মারের মিশেলে দারুন একটি দল পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড।কিন্তু তার মধ্য থেকে যেকোন মুহুর্তে বল কিংবা ব্যাট হাতে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার দক্ষতায় আলাদাভাবে সবার নজর কেড়েছিলেন ক্রিস কেয়ার্নস।

২০০৪ সালে ভিভ রিচার্ডসের টেস্ট ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড ভেঙ্গে তাক লাগিয়ে দেন ক্রিকেট বিশ্বে। ইনজুরির কারণে বলের কিছুটা গতি হারালেও শেষ পর্যন্ত একজন মিডিয়াম পেসার হিসেবে কার্যকর ছিলেন কেয়ার্নস।

৫. স্যার গ্যারি সোবার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ):

বারবাডোজে জন্ম নেয়া এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তীকে অনেকেই ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বলে মনে করেন।প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বপ্রথম এক ওভারে ছয় ছক্কার রেকর্ড গড়া সোবার্স ৫৭.৭৮ এর ঈর্ষনীয় গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন ৯৩ টেস্ট।।তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিচরণের বয়স ছিল ২০ বছর।

৬। শন পোলক (দক্ষিণ আফ্রিকা) :

অ্যালান ডোনাল্ডের নতুন বলের সঙ্গী শন পোলক তার দুই দিকেই বল সুইং করানোর অসাধারণ দক্ষতা নিয়ে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলে।লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচ বের করে আনার সাথে সাথে দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা তাকে দিয়েছে অলরাউন্ডারের মর্যাদা।

৭।কপিল দেব (ভারত) :

ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার কপিল দেবের হাত ধরেই এসেছিল ১৯৮৩ এর বিশ্বকাপে ভারতের শিরোপা সাফল্য।বোলিং এর পাশাপাশি তার ব্যাটিং দক্ষতাও ছিল দেখার মতো কখনো কখনো লোয়ার অর্ডারে নেমে একাই খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারতেন কপিল।১৯৮৩ এর বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাবার পর তার ১৩৮ বলে ১৭৫ রানের ইনিংসটি আধুনিক ক্রিকেটেরই সেরা ইনিংসগুলোর একটি।

৮। ড্যানিয়েল ভেট্টরি (নিউজিল্যান্ড):

অবসরের পুর্বে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কিউই দলে নিয়মিত এই ‘চশমাধারী’ খেলোয়াড় মাত্র ১৮ বছর বয়সে সবচেয়ে কম বয়সী কিউই ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অভিষিক্ত হন।নির্ভুল লাইন, লেন্থ আর বৈচিত্রে ভরা বোলিংয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘায়েল করেছেন ৬৬৭ জন ব্যাটসম্যানকে।টেস্টে ৩০০ উইকেট আর ৩০০০ রান করা দুর্লভ ৮ জন ক্রিকেটারের মধ্যে অন্যতম ভেট্টরি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন কার্যকর মিডল-লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে।

৯। ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড):

ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা এই অলরাউন্ডার নিজের মাঠের পারফরম্যান্স আর অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন ইংল্যান্ডের মহাতারকার আসনে।তার বিখ্যাত আউটসুইঙ্গার কিংবা আগ্রাসী ব্যাটিং যেকোনটি দিয়েই যেকোন মুহুর্তে ম্যাচ বের নিয়ে আসতে পারতেন বোথাম।শেষ দিকে কিছুটা স্থুলকায় এবং অকার্যকর হয়ে পড়লেও ১৯৯২ বিশ্বকাপ খেলে অবসর নেবার পুর্বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন ১৫ বছর।

১০। রিচার্ড হ্যাডলি (নিউজিল্যান্ড):

বর্তমান সময়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের যত অর্জন বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে তার জন্য কিউইরা চিরকাল ঋনী থাকবে স্যার রিচার্ড হ্যাডলির কাছে।দুর্দান্ত গতি আর বাউন্সারের সাথে আগ্রাসী ব্যাটিং করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কিউই ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায়। ৩৯ বছর বয়সে অবসরে যাবার পূর্বে দ্রুততম ৪০০ টেস্ট উইকেটের রেকর্ড করেন হ্যাডলি।

অলরাউন্ডার হলেন ক্রিকেটের সব্যসাচী খেলোয়াড়।তাদেরকে ব্যাটিং বোলিং উভয় ক্ষেত্রে সমান পারদর্শী হতে হয়। ইতিহাসের সেরা এই দশ কিংবদন্তী বিশ্ব ক্রিকেটকে উত্তরসুরী হিসবে দিয়ে গেছেন বর্তমান সেরা সাকিব আল হাসান এর মতো কালজয়ী অল্রাউন্ডার।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে [sharethis-inline-buttons]

Check Also

কোটি বাঙালীর মাশরাফি এবং কিছু কথা।

মাশরাফি, নামটা শুনেন নাই এমন মানুষ দেশের বুকে নেই বল্লেই চলে। শুধু দেশে নয় দেশ …

error: Content is protected !!