সারা দেশের ন্যায় আসন্ন ঈদ উল আযহা উপলক্ষে কেরানীগঞ্জের পশুর খামারগুলোও প্রস্তুত রয়েছে পশু বিক্রির জন্য। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার লক্ষে বিভিন্ন নামকরন করা হয়েছে এক একটি পশুর। তবে করোনাকালীন সময়ে পশু বিক্রি নিয়ে কিছুটা উদিগ্ন খামারিরা। অনলাইনে পশু বিক্রির চেষ্টা করলেও তেমন সাড়া পাচ্ছেন না তারা। এ জন্য অনলাইন বিক্রিতে তেমন আস্থা নেই খামারিদের। তারা আশা করছে লক ডাউন শিথীল হলে বেচা বিক্রি বাড়বে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রানি সম্পদ কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের ৬৫৬ টি খামারে আসন্ন ঈদ উল আযহা উপলক্ষে প্রায় ১২ হাজার পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। এসব পশুর মধ্যে কেরানীগঞ্জে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮-৯ হাজারের মতো। কেরানীগঞ্জের চাহিদা মিটিয়ে বাকি পশু কেরানীগঞ্জের আশে পাশে বিভিন্ন উপজেলার যাচ্ছে।
কেরানীগঞ্জ রোহিতপুর ইউনিয়নে ছাড়াভিটা এলাকায় অবস্থিত ফীট এন্ড ফ্রেশ-২ এগ্রোর একজন সত্তাধিকারী শহিদুল ইসলাম রাজুর সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতি বছর ঈদের আগ মুহুর্তে এই সময়টাতে আমাদের সব গরু প্রায় বিক্রি হয়ে যায়। তবে এ বছর তার খামারে ৪০টি গরুর মধ্যে মাত্র ১০ টি গরু বিক্রি হয়েছে। লক ডাউনের জন্য ক্রেতারা আসতে পারছে না। তাই তেমন বিক্রি হয় নি। ফেসবুক, ইউটিউব সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইতে তিনি তার গরুগুলো বিক্রির চেষ্টা করেছেন। তবে অনলাইনে ক্রেতারা শুধু দেখে, কিনতে আগ্রহী হয় না। সবাই খামারে এসে যাচাই বাছাই করে কিনতে পছন্দ করে। লক ডাউন শিথিল হলে তার ক্রেতারা খামারে আসবে এবং তাদের গরুগুলো সব বিক্রি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
হযরতপুর ইউনিয়নে মাশ আল্লাহ এগ্রোর মালিক মো: ইউসুফ জানন, তার খামারে আসন্ন কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে বিক্রির জন্য প্রায় শতাধিক গরু প্রস্তুত রয়েছে। ইতি মধ্যেই বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও অনলাইন সাইট বিক্রি উদ্দেশ্যে তার গরু গুলোর ছবি তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনলাইন থেকে তেমন কোন সাড়া পান নি তিনি। তিনি আরো বলেন, কোরবানী পশু কেনার মধ্যে একটা আলাদা উদ্দীপনা কাজ করে। তাই হয়তো অনলাইনে ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ নেই। সবাই চায় নিজের কোরবানীর পশু ১০ টা সচোক্ষে দেখে ১ টা কিনতে। গত বছর তিনি ১৫০টি পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। সবগুলো পশুই ঈদের তিনদিন আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এবার দেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারনে বেচা কিনা নিয়ে উদ্বিগ্ন মো: ইউসুফ
শাক্তা ইউনিয়নের আবির ফার্মের মূল আকর্ষন ৭৫০ কেজি ওজনের ষাড়। শখের বসে মালিক এর নাম রেখেছেন ‘‘নেইমার’’। দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে সাত লাখ টাকা। সত্তাধিকারী মো: আবুল হোসেন জানান, এটি আমার শখের গরু। প্রতিদিন মাল্টা আপেলও খায় এটি। ফেসবুকে এর একটি ভিডিও ছাড়ার পরে, আশে পাশ থেকে অনেকইে গরুটি দেখতে আসে। ফেসবুকে আমাদের পেজে অনেকেই এর দাম জিঞ্জেস করে। কিন্তু কেনার কথা কেউ বলে না। তবে ঈদকে সামনে রেখে অনেক ক্রেতা এসেছে গরুটি দেখতে। এ পর্যন্ত ৫ লাখ আশি পর্যন্ত দাম উঠেছে। লক ডাউন শিথীল হলে আরো ক্রেতা আসবে, তখন এর আরো ভালোদাম পাবো। এছাড়াও আমার খামারে ছোট বড়ো বিভিন্ন সাইজের গরু রয়েছে। এখানে লাইভ ওয়েটে গরু বিক্রি করা হয়।
কেরানীগঞ্জের আরো বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়। লক ডাউনের কারনে ক্রেতা সাধারন আসতে না পারলেও, লক ডাউন শিথিলের পর পর ই ক্রেতারা খামারগুলোতে ভীড় করবে বলে তাদের ধারনা। অনেক খামারেই লাইভ ওয়েটে গরু বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারন লাইভ ওয়েটে প্রতি কেজির দাম নির্ধারন করা হচ্ছে ৪১০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। গত বারের মতো এবারের ঈদ উল আযহাতেও কোরবানীর বেচা বিক্রি ভালো যাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন খামারিরা।
উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন জানান, কেরানীগঞ্জে ১২ হাজার পশু ঈদ উল আযহা উপলক্ষে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ পশু বেচা কেনা হয়ে গেছে। আমরা অনলাইনে বিক্রির জন্য সোস্যাল মিডিয়াতে প্রায় ৭ টি পেজ খুলেছি। ৭টি পেজে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন খামার থেকে ২৫০০ কোরবানী পশুর ছবি ও বিবরন আপলোড করা হয়েছে । সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ১৪৭ টা পশু বিক্রি হয়েছে। অনলাইনে এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। #