তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক বিতর্কিত ব্যাক্তি নৌকার প্রার্থী হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জের ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা ২ আসনের অন্তুর্ভূক্ত শাক্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন মো: হাবিবুর রহমান। গত কয়েক বছরে জোরপূর্বক ভ‚মি দখলের কারনে হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে এলাকায় ব্যাপক অভিযোগ। চিহ্নিত ভূমিদস্যু কিভাবে নৌকার মনোনয়ন পেলো, তা নিয়ে এলাকায় বিষ্ময় দেখা দিয়েছে। খোদ আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মী এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছেন। ভূমিদস্যু
সরেজমিন শাক্তা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, হাবিবুর রহমান ও তার ভাইয়েরা কেরানীগঞ্জের মধ্যের চর খাল, বড় মনোহরী খাল, খানবাড়ি খাল, নিমতলী খাল, লুটেরচর খালসহ আশে পাশের প্রায় আটশত একর সরকারি খাস জমি দখল করে বাবার নামে গড়ে তুলেছে কেরানীগঞ্জে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত মধু সিটি। গত ১০ বছরে অবৈধ এই মধু সিটি নিয়ে পত্র পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। এছাড়াও হাবিবের আরো রয়েছে মধু রিভার ভিউ সিটি, মিলিনিয়াম সিটি, কিংস্টার সিটিসহ একাধিক হাউজিং প্রকল্প যার অধিকাংশই নিয়ে রয়েছে অন্যের সম্পদ দখল, সরকারি খাস জমি দখলসহ নানা বিতর্ক।
হাবিব ও তার ভাইরা এতোটাই বেপরোয়া যে, বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখল করতে পর্যন্ত দ্বিধাবোধ করে নি তারা। বিআইডব্লিউটিএ একের পর এক উচ্ছেদ অভিযান ও মামলার পরেও দমেনি হাবিব, চালিয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা দখল করে মধু সিটি তৈরীর মহা উৎসব। আর এ কাজে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে হাবীবকে সহযোগীতা করেছেন প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি।
হাবীবুর রহমান ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী একাধিক বার মানববন্ধন করলেও তাদের বেপরোয়া দখল ঠেকাতে পারে নি কেউ। পত্রিকায় ও টিভিতে বেশ কয়েকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, ঢাকা জেলা প্রশাসক প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এতো কিছু হলেও কোন কিছুই হাবিবদের দখল মহা উৎসবে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে নি
স্থানীয় বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা ও এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, হাবিব মূলত হাইব্রীড, নব্য আওয়ামীলীগার। হাবিবের পিতা হাজী মো: মধু মিয়া ৪-৫টি গরু জবাই করে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। তিনি এলাকায় বিএনপির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ২০০৮ সালের পূর্বে হাবিবের বড়ো ভাই সলিম বিএনপির দলের একজন নিবেদিত দাতা ও সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলো। ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে হাবীবের পরিবার সরাসরি বিএনপির রাজনীতি করতো। ২০০৮ এ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরে ২০১০ সালে হঠাৎ করেই আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো আওয়ামীলীগের ঢাকা জেলার কমিটির উপ দপ্তর সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন হাবীব। এরপরেই হাবীব দলীয় নাম ভাঙিয়ে শুরু করেন বেপরোয়া দখল ও চাদাবাজি। গত ১০ বছরে হাবীব দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে যতটা সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। দীর্ঘ দিনের আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার শিকি ভাগও পায় নি।
শুধু সরকারি সম্পদ নয় বালুরচর,ঘাটারচর, কলমারচর, চন্ডিপুর, কাঠালতলী, বেলনা, শিয়াইল এলাকার নিরীহ কৃষকদের জমি জোরপূর্বক বালু দিয়ে ভরাট করে দখলের অভিযোগ রয়েছে হাবিব ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে। জোরপূর্বক মাটি ভরাটের কারনে একাধিক মামলাও রয়েছে হাবিবের বিরুদ্ধে, যা বর্তমানে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে ।
হাবীবদের অত্যাচারে একসময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারাও দিশেহারা ছিলো। হাবীবের দখল কাজে বাধা দেয়ায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রবীন নেতা হাজী আবু বকর সিদ্দিক তার হামলার শিকার হন। এ নিয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং-০২ ,০৫/০১/১৯)।
রহমত আলী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, গত ১ দশক ধরে আমাদের বড় আতঙ্কের নাম হলো হাবীব, ও জোড় পূর্বক ওর বাহিনী দ্বারা আমাদের ক্ষেতে রাতের আধারে মাটি ভরাট করে দখল করে নিচ্ছে। আমরা আতঙ্কে থাকি কবে কার জমিটা যেন ও দখল করে নেয়। এবার ওই নাকি চেয়ারম্যান প্রার্থী হইসে। যার হাতে আমরা সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ তাকেই করা হলো আমাদের চেয়ারম্যান। শাক্তায় কি আওয়ামীলীগের কোন যোগ্য প্রার্থী ছিলো না যে চিহ্নিত ভূমিদস্যু হাবীব কে দিতে হবে ?
মহিউদ্দিন ফারুক নামে অপর একজন স্থানীয় ভোটার জানান, হাবীব নিজের বসবাসের জন্য বেশ কয়েকটা আলীশান বাড়ি করেছে। স্বয়ং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বা কোন এমপি মন্ত্রীর বাস্ওা এতো আলীশান না। আর এগুলো সব ওর অবৈধ টাকায়। শাক্তা ইউনিয়ননে আওয়ামীলীগের অনেক যোগ্য ব্যাক্তিকে রেখে ওর মতো ভূমিদস্যু কে মনোনয়ন দেয়াটা উদ্বেগের। চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই ও এতো বেপরোয়া, চেয়ারম্যান হবার পরে হাবীব আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে আর বদনাম হবে আওয়ামীলীগের।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হাবীবের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদেবার্তা প্রেরন করলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। তার মধুসিটি অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বিপ্লব বলেন, হাবীব যখন ২০১০ সালে জেলার দপ্তর সম্পাদক হয় তখন থেকেই ওর বিরুদ্ধে সমালোচনা ছিলো। তখন ও যাদের সাথে পলিটিক্স করেছে তখন ও সমালোচনা ছিলো। এখন ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কমিটির সাথে কাজ করছে। এখন দেখলাম ও মোটামুটি ভালোই আসে, আগের মতো কিছু নাই। তাই ওকে থানা ও ইউনিয়ন ও জেলার নেতাদের সাথে আলোচনা করে প্রার্থীতা দেয়া হয়েছে। আমরা ওর উপর আশাবাদী ভবিষ্যতে সমালোচনা ছাড়া যেভাবে কাজ করা যায় ও সেভাবেই করবে।#
Read more: কেরানীগঞ্জে ব্যালট ছিনতাই এর চেষ্টা