বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। কিন্তু নদীমাতৃক দেশে দখল ও দুষণের প্রতিযোগিতায় বিলিন হয়ে যাচ্ছে দেশের নদ-নদী, খাল ও শাখা খালগুলো।
ঠিক তেমনি দখল ও দূষণ থেকে মুক্তি পাচ্ছেনা কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সিংহ নদ, খাল ও শাখাখালগুলো। সিংহ নদ দখলের পাশাপাশি খাল ও শাখাখালগুলো বালু ভরাট করে ভূমিদস্যুরা গড়ে তুলছে অবৈধ স্থাপনা।
যে কারণে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু খাল অপরিকল্পিতভাবে ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করেছে। বাকি খালগুলোতে চলছে দখলের পাঁয়তারা।
বুড়িগঙ্গা ও সিংহ নদর শাখাখালগুলোর অধিকাংশ বয়ে গেছে কেরানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে। গত ১০ বছরে বুড়িগঙ্গা নদী ১৫ বার উচ্ছেদ অভিযান হলেও একবারের অধিক অভিযান চালানো হয়নি সিংহ নদতে।
সর্বত্র ভরাটের হিড়িকের ফলে ঐতিহ্যবাহী কেরানীগঞ্জ মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়েছে। এছাড়া সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ছে এলাকাবাসী।
নদ-নদী ও খাল-বিলে নাব্য রক্ষা পানির গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে নদী-খাল রক্ষার্থে একাধিকবার বৈঠক করলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মোগল আমল থেকে আজ পর্যন্ত সিংহ নদর সীমানা নির্ধারণ করে নদীটি দখলমুক্ত করা হয়নি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিংহ নদ ভরাট করে ভূমিদসু্যরা গড়ে তুলেছে বহুতল ভবন ও মার্কেট। খরস্রোতা এই নদীর গর্জন ছিল সিংহের মতো। যে কারণে এই নদীর নাম রাখা হয়েছে সিংহ নদ। নদীটি ধলেশ্বরীর আকসাইল এলাকা দিয়ে রামেরকান্দা, অগ্রখোলা, শিকারীটোলা, খাড়াকান্দি হয়ে পুনরায় ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশেছে।
এই নদীর ওপর একটি শাখা খাল রামেরকান্দা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিশেছে। নদীটির কলাতিয়া, আকসাইল, বেলনা, রামেরকান্দা ও রোহিতপুরের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা। স্থানীয়রা অভিযোগে বলেন, নদীটি অনেক স্থানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। কৃষকরা পাচ্ছে না সেচের পানি ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে জমির উর্বরতা।
এ ব্যাপারে বাস্তা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল হক বলেন, ছোটবেলায় ঝাঁপিয়ে গোসল করেছি সিংহ নদতে। দুর্গাপুজোতে অনেক মূর্তি বিসর্জন দিত এখানে। তাছাড়া প্রতিবছর নৌকাবাইচ হতো। একসময় ব্যবসায়ীরা বড় বড় নৌকায় (গয়না) ধান-পাট বোঝাই করে এক জেলা থেকে অন্য জেলা এমনকি ভারতে ব্যবসা করত। তখন সিংহ নদই ব্যবহার করা হতো। কালের বিবর্তনে সিংহ নদর ঐতিহ্য ও সিংহের গর্জন হারিয়ে তা আজ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে । বর্তমানে নতুন প্রজন্মের কাছে সিংহ নদ মরা খালের আরেক নাম।
বর্তমানে কেরানীগঞ্জের তিনটি নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সিংহ নদের। আশে পাশে গড়ে উঠছে প্রতিনিয়তই অবৈধ স্থাপনা। বিশেষ করে ইটের ভাটা গুলো খালের বেশি ক্ষতি করছে।
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহে এলিদ মাইনুল আমিন বলেন, নদী বা খালের তীর ভরাট অথবা দখল করা অপরাধ। যারা এই কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।