সজিবুল ইসলাম হৃদয়, নাটোর প্রতিনিধি: নাটোর সদর উপজেলার গোয়ালদিঘি কৃষ্ণপুর গ্রাম এখন মুড়ি গ্রাম নামে পরিচিত। এখানকার বাসিন্দারা এখন মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
প্রাকৃতিকভাবে মুড়ি ভেজে বিক্রি করতে তাদের দম ফেলার সময় নেই। কোন রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে এবং ঐতিহ্যগতভাবে তৈরি এই মুড়ি সুখ্যাতি এনে দিয়েছে এখানকার বাসিন্দাদের।
কোনো প্রকার রাসায়নিক ছাড়া কেবল লবণ আর পানি দিয়ে মুড়ি তৈরি করায় এখানকার মুড়ির চাহিদা যেমন বেশি, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। তবে দেখতে কিছুটা লালচে। বর্তমানে মুড়ি ভেজে বিক্রি কাজের সঙ্গে জড়িত এই গ্রামের প্রায় ৩৫০টি পরিবার।
পবিত্র রমজানে মাসে মুড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় পুরো মাসই তারা এই কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। নারী পুরুষ উভয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মুড়ি ভাজার কাজে। যতই দিন যাচ্ছে ততই এখানকার ঐতিহ্যবাহী মুড়ির চাহিদা বেড়েই চলেছে।
এর আগে এই গ্রামের অনেকেরই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। তবে এই পেশায় এসে অনেকের দুঃখ ঘুচেছে। এখানকার মুড়ি রাসায়নিক মিশ্রণের তৈরি মুড়ি অপেক্ষা অনেক বেশি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। প্রতিটি পরিবার প্রতিদিন দুই মণ মুড়ি ভাজতে পারেন।
এতে খরচ হয় ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকা। অন্যদিকে পাইকারি বিক্রেতার কাছে প্রতি মণ মুড়ি বিক্রি করেন ৪ হাজার থেকে ৪২শ’ টাকায়।
প্রতিদিন নাটোর গোয়ালদীঘি ঢালসড়ক মুড়ির হাট থেকে ৫০ মণ থেকে ৬০ মণ মুড়ি ঢাকা, রাজশাহী, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। তবে রোজার সময় প্রতিদিন ১৫০ মণ থেকে ২০০ মণ মুড়ি বিক্রি হয়।
কারিগররা জানালেন, মুড়ি তৈরি করতে খুব পরিশ্রম হলেও তা সর্বদায় লাভজনক। তবে তাদের আসল সমস্যা পুঁজি সংকট। বিভিন্ন এনজিও আর স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তাদের লাভের গুড় পিঁপড়েতে খায়। স্বল্প সুদে সরকারী ঋণ সহায়তা পেলে এই শিল্পের আরও বিকাশ ঘটতে বলে মনে করেন কারিগর আর স্থানীয়রা।
তবে, মেশিনে ভাজা মুড়ির রাসায়নিকের কারণে চকচকে আর মোড়কজাত করে বিক্রিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে হাতেভাজা মুড়ির বাজারে। কিন্তু স্বাস্থ্য সচেতন লোকেরা হাতেভাজা মুড়িই কেনেন বলে জানান মুড়ি কারিগর ও সচেতন মহল।
এমতাবস্থায়, এই ঐতিহ্যবাহী মুড়ি ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে সরকারী ঋণ সহায়তার দাবি জানিয়েছেন এখানকার অধিকাংশ মুড়ি উৎপাদনকারীরা।
আরো পড়ুন,কেরানীগঞ্জে মোবাইল ব্যাংকিং অপব্যবহার রোধে এজেন্টদের নিয়ে থানা পুলিশের সমন্বয় সভা