মুমিনের হৃদয়ে কারবালা র কান্না

সূফি কবি নজরুল বলেন,  কাদে কোন ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে /সে কাদনে আসু আনে সিমারেরও ছোরাতে,   নিয়ে তৃষা সাহারার দুনিয়ার হাহাকার/কারবালার প্রান্তরে কাঁদে বাছা আহাকার, মোহররম! কারবালা! কাদো হোসেনা!/দেখো মরু-সূর্য এ খুন যেন শেষে না।

আজ সেই মহররমের চাদ। এই দেখলেই মনে পরে ফোরাতের কান্নার ঢেউয়ের কথা।কাদঁছে কারবালার মাটি হোসাইনের জন্য। কারবালার বালি কনার চোখে রয়েছে তার চিকচিকে রক্তের ফোঁটা। কারবালা শব্দটি শুনলেই শিউরে উঠে মুমিন ব্যক্তির শরীর। ব্যথিত হয় তার হৃদয়। প্রকৃতি জুড়ে কান্নার এই মহানায়ক নবী নন্দিনী মা ফাতিমার কলিজার টুকরা। শেরে খোদা আলীর বীর পুত্র ইমাম হোসাইন।

রক্তে লাল হয়েছিল তার দেহ মোবারক। কিয়ামত পর্যন্ত মুমিন হৃদয়ে এই টক টক খুন লাল ঘা ফোটাবে। এই চাঁদ যত প্রখর হল, তত মুমিনের আত্মায় তেতে উঠে বেদনার বালি। অন্তর কেপে উঠে। মুমিনের চোখে পানি ঝরে তার জন্য। আবেগে অশ্্রু সিক্ত হয় চোখ। হ্যা গেল রাতের কথা বলছি। চৌদ্দশ বছর পূর্বে যখন চাঁদটি আলো দিচ্ছিল মরুর অঞ্চলে। একটি কোনে অল্প কয়েকটি তাবুতে জ্বলছিল সত্যের উজ্জল মশাল। চারদিকে নামধারী মুসলিম আটকিয়ে রেখেছে সত্যের মুসলিমদের। আনন্দে মেতে উঠেছে তারা। কাল শেষ করে দিব সবদের। বিদায় করে দিব জীবনের তরে। মানতে হবে আমাদের কথা। রক্ত নিয়ে খেলতে প্রস্তুত ইয়াজিদ অনুসারী। না এমনটি হতে পারেনা। মিথ্যার সাথে আপোশ করেনা প্রকৃত মুসলিম। তেমনি বাপকে বেটা হোসইন। জীবন দিতে প্রস্তুত। ইয়াজিদ বাহেনীর অবৈধ শর্ত মান সম্ভব নয়। তিনি রয়েছেন সত্যের পথে। তাবুর আলো বন্ধ করে দিলেন হোসাইন। হে সাথিরা চলে যাও মাতৃঘরে। বলেন হোসাইন। আমরা আবাদ্ধ। ফোরাতের তীর শত্র“র দখলে। মুসলিম গন তারাই যারা অন্যেকে বিপদে ফেলে চলে যায় না। তাই আমরা আপনকে ছেড়ে চলে যাবনা। হে আওলাদে রাসুল(সা:),হে বীরের ছেলে, বীর হোসাইন, আমরা প্রতিহত করব শত্র“দের, জীবনে বিলিয়ে দিব। থাকব মোরা রাসুলের দলে। আলোর পথে,ভালবাসা বিলিয়ে দিব রাসুলের ভালবাসাকে হে হোসাইন। জান্নাতে যেতে আমরা প্রস্তুত আপনার সাথে।এমনটি বললেন হোসাইনের তাবুর সাথীরা। রাতের বেড়ে চলছে। চাঁদ তত রক্তের আলো দিচ্ছে চারপাশ। কাদছে হোসাইন মোনাজাতে। একদল রুকুতে অন্যরা সিজদায় লুটিয়ে কাঁদছে যেহেতু তাদের দূত মুসলিম বীন আকিলকে নির্মম ভাবে শাহাদাত করেছে ইয়াজিদরা। রেহাই পায়নি তার দুই ছোট সন্তান। বদ্ধ ছিল হারেশের নিকট। চাচা আমায় মের না। আমার মা নেই ও চাচা হারেশ আমার বাবও মুসলিম বিন আকিলকে ইয়াজিদরা হত্যা করেছি। হারেশ তোমার পায়ে পরি। আমাকে যেতে দেও মদিনায়। সংবাদ দিব হোসেনকে। হোসেন যেন না আসে কারবালায়। তাদের করুন কথা গলেনি হারেশের মন। দেহ থেকে মস্তক বিছিন্ন করে দিল নিষ্ঠুর হারেশ। হোসাইন প্রার্থনা করছে প্রভূর কাছে। রাত শেষে পূর্বদিকে লাল সূর্য উকি মারছে। শুক্রবার সকাল। চারদিকে কিচমিচি আওয়াজ। ঠান্ডা জান্নাতী বাতাস বইসে হোসাইনের তাবুতে। আশায় রয়েছে সাথীগন জান্নাতে যাওয়ার। খাবার নেই তাবুতে। পানি নেই কারবালায়। পানির অভাবে অন্তর শুকিয়ে যাচ্ছে। ছোট ছেলে মেয়েরা কাদছে পানির অভাবে অথচ বের হচ্ছেনা চোখের পানি। নেই বুকে দুধ মায়ের।

একি পানির জন্য এত কষ্ট। হাহাকার চলছে কারাবালায়। আজ আমরা পানিকে করছি অপচয়। হোসাইনের ছয় মাসের শিশু আলি আজগরের কান্না বন্ধ হয়ে গেছে পানির অভাবে। কাদতে পারেনা সে। পানি অভাবে। ওগো! আমার আলী আজগরকে একটু পানি পান করিয়ে আন। পানির অভাবে সে খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমার পানির প্রয়োজন নেই। কিন্তু ছয় মাসের সন্তানের কষ্ট আমি কিভাবে সইতে পারি। বললেন হোসাইনকে তার স্ত্রী। যাও মহান স্বামী একটু পানি। সন্তানকে বুকে নিয়ে ফোরাতের তীরে উপস্থিত হোসাইন। একটু পানি আমার জন্য নয়। ছয় মাসের আলি আজগরের জন্য। হে ফোরাতের পানি দখলকারী! ভূলে যেওনা তোমরা আমার নানার উম্মত। আমি তার নাতি হোসাইন। পরিস্কার পানির ঢেউ চোখে পড়ছে হোসাইনের। একটি তীর আসতে শুরু করল হোসাইনের দিকে। বিদ্ধ হল আলি আজগরের বুকে। রক্তে কোল ভিজে গেল। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন সন্তানের দিকে। ওহে ঐ ইয়াজিদ বাহেনী? কি দোষ করেছে আমার ছয় মাসের সন্তান আলি আজগর? কেন তাকে অন্যায় ভাবে হত্যা করেছ। পানির জন্য জীবন দিল ছয় মাসের সন্তান। আহ কি নির্মম পরিনিতি আমার। এত পরিক্ষা আমার জন্য হে আাল্লাহ। হে আমার স্ত্রী আর পানি চাইবেনা তোমার সন্তান। বিরক্ত করবেনা পানির জন্য। কোলে নেও সন্তানকে। আনন্দ চিত্তে কোলে নিয়ে চেহারার দিকে তাকালেন হোসাইনের স্ত্রী। কি হল। চোখ বন্ধ তার। জিহবাটা বের হয়ে গেছে। তীরের সাথে কলিজা বের হয়ে গেছে। বুকে রক্ত কেন তার। বুজার বাকি রইল না যে আমার ছয় মাসের সন্তান আর নেই এ ধরায়। চোখে পানি রাখতে পারলেন না আলি আজগরের মা। ওঠ বাাবা আলি আজগর। চাহিয়া দেখ বাবা আমি মা তোমাকে ডাকছি। ওগো এনে দেও আমাকে। আমার কাছে আমার আলি আজগরকে। কাদছে সাথীরা। শোকের মাতম তাবুতে। দাড়ি ভিজে যাচ্ছে হোসাইনের। সকালের ঠান্ডা বাতাস আর পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তাপ্ত কারবালা। শত্রুরা ভূলে গিয়েছে রাসুলের ভালবাসাকে।

মনে মায়া নেই হোসাইনিদের জন্য। মুনাফিক মুসলিম ঝাপিয়ে পরল সত্যের বিরুদ্ধে। অন্যায়ের পক্ষে। দ্বীনের আলো নিভিয়ে দিতে। রক্তে লাল কারবালা। অন্যায়ের পক্ষে নেই হোসাইনি মুসলিমরা। জান্নাতের পথে হাটছে হোসাইনের সাথীরা। রক্তের মিিিছলে ১৯ বছরের সুদর্শন পুত্র আলি আকবার। শত্র“দের বিপক্ষে সে মাঠে। রক্তে ঝরছে শরীর থেকে। ও বাবা আর পারছিনা। একটু পানির ব্যবস্থা করতে পারলে আমি পারব। বাবা ব্যবস্থা কর হৃদয় ঠাšডা করার জন্য একটু পানি। নেই এক ফোটা পানি। রক্ত পিপাশু জালিমের দল থেমে নেই। মুররা ইবনে মুনাকিয বর্শার আঘাত দেয় আলি আকবরকে। লুটিয়ে পড়েন সে। জীবন দেন আলী আকবর। শরীরকে টুকরা টুকরা করে দেয়। আহ কি করুন অবস্থা। সইতে পারছে না কেউ। ফুফু জয়নব দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে পাগল প্রায়। অলি আকরের শরীরের টুকরাগুলো এখন হোসাইনের তাবুতে । তাবুতে কান্নার রোল বইছে। সইতে পারছে না কেউ। থেমে নেই হাসানের পুত্র। ময়দানে তিনি লড়ছেন সত্যের পক্ষে। আমর ইবনে সাদ তার ঘারের উপরে তরবারি দিয়ে আঘাত দিলে। মাটিতে শুয়ে পরলেন তিনি। আমি বিদায় হে চাচা আমি চলে যাচ্ছি। আর পারছিনা চাচা বললেন কাশেম। চাচা হোসাইন চিৎকার সইতে পারলেন না। কিছু করার নেই চোখের সামনে ছেলে,ভাতিজা,সাথীদের মৃত্যু দেখে শোকে পাথর। আলীর ছেলে আব্বাস দেখলেন আহলে বাইয়াতের একে এক জীবন উৎসর্গ করছে। তিনি বলেন-হে আব্দুল্লাহ,জাফর ও উসমান প্রস্তুত হও জান্নাতে দিকে। চলছে ভীষন লড়াই। বীরেত্বের সাথে শত্র“দের উপর অপূর্ব বীরত্ব ও আক্রমন চালালেন ইমাম হোসাইন। ক্ষত বিক্ত তার শরীর। যে শরীরে রাসুল (সা:) চুমু দিয়েছে ঝড়ছে রক্ত সেই শরীর থেকে। ভীষন পিপাসার্ত হোসাইন। এগিয়ে গেলেন ফোতের দিকে একটু পানির জন্য। পানি হাতে নিলেন তিনি। চুমুক দেওয়ার জন্য মুখের সামনে পানি। কিন্তু মনে পরে যায় তার ছেলের কথা, ভাতিজার কথা, তাবুর সাথীদের কথা। আহ কন্ঠে পানি ছিলনা। আমি কিভাবে পানি দিয়ে হৃদয় জুরাই । তা হতে পারেন। পানি খাওয়া হল না তার। নুমাইয়েরর এক পুত্র তাতে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করলে কন্ঠ নালীতে বিদ্ধ হয় তীর। তীরটি বের করে তাবুতে ফিরে আসেন হোসাইন। ইয়াজিদ বাহেনী ঘিরে ফেলল তাকে। আজ তোমার রক্ষা নেই হে হোসাইন। বললেন সীমার। সূর্য রক্তের উত্তাপ্ত দিচ্ছে। চারদিকে রক্তের বন্যা। লাশের মিছিল। আক্রমন শুর হল হোসাইনের উপর। তীর,বর্শার,তরবারির আঘাত বইছে হোসাইনের শরীর মোবারকে। চেহারা মোবারকে রক্তের জমাট। দাড়ি ভিজে গেল রক্তে। শরীর থেকে অজোর ধারায় বইছে রক্তের ঝর্না। আহ কি করুন পরিস্থিতি। নামাজের সময় হল। দুই রাকাত নামাজ পড়তে দেও হে ইয়াজিদ বাহেনী। তীর বিদ্ধ হোসাইন সিজদায়। ডাকছে প্রভূকে। নানা মোহাম্মাদকে। ও নানা কোথায় তুমি? আজ চলে আস নানা। তোমার উম্মতেরা আমার নির্মম পরিনিতি করছে। ও নানা ভাই আমি পিপাসিত। তোমার উম্মেতেরা আমায় পানি দিল না। কাঁদছে হোসাইন উম্মতের জন্য। সত্যে প্রতিষ্ঠার জন্য। তবুও মায়া জন্মাইনি ইয়াজিদদের। ভূলে গেছে আমি কার শরীর থেকে রক্ত ঝড়াচ্ছি। সানানা ইবনে আনাস নাখাঈ তার নিষ্ঠুরতার সাথে একটি বর্শা নিক্ষেপ করে হোসাইনের দিক। বর্শাটি হোসাইনের পেট ভেদ করে চলে যায়। কারবালার জমিনে লুটিয়ে পড়েন বীর হোসাইন। নিভে গেল সত্যেও প্রদিপ। জান্নাতের যুবকদের সর্দার। দেহ থেকে মস্তক বিছিন্ন করা হল হোসাইনের। দেহকে দলিদ মথিত করা হল ইবনে জিয়াদের নির্দেশে। কাঁদছে পৃথিবী। সুর্য আপন পানে চাহিয়া দেখছে মুনাফিক মুসলিমদের নিষ্ঠুরতা। কারবালা গ্রহন করতে পারছেনা এত রক্ত। জয়নব বলে হে আল্লাহর রাসুল দেখুন, আপনার হোসাইন রক্ত ও মাটির উপরে টুকরো টুকরে দেহ মরুভূমিতে পড়ে আছে। তার মেয়েরা আজ বন্দী জালিমদেও উপর তার লাশের উপর ধূলিকনা উরছে। তার এই হৃদয়মাখা কান্না জরিত কন্ঠেরআওয়াজ শুনে কেউ চোখে পানি রাখতে পারিনি। হৃদয় ব্যথিত হয়েছে হোসাইনের জন্য। বিদায় হল হোসাইন। তবুও অন্যায়ের পক্ষে ছিলেন না। নানার পথে ছিলেন তিনি। উম্মাতে মুহাম্মাদের জন্য বিলিয়ে দিলেন জীবন। আজ সেই হোসাইনরে জীবনের মূল্য কি দিচ্ছে উম্মতে মহাম্মাদি? উম্মতে মুহাম্মাদিদের জন্য তিনি কি দিয়েছিলেন ইমাম হোসাইন। উম্মতে মুহাম্মাদিদদের তরে বিলিয়ে দিয়েছেন তার শরীরের তাজা রক্ত। তারপরও মাথা নত করেননি অন্যায়ের পক্ষে। জীবনের শেষ সময়ে নামাজ ছেড়ে দেননি। আমরা আজ মহাররমে হোসাইনের ভালবানা সিক্ত হয়ে মসজিদে মিলাদ দিব,দোয়া হবে, তবারক নিয়ে বিদায় হব। কিন্তু সারাটি বছর হোসাইনের আদর্শে আদর্শিত হলাম না। এমনটি চলবে না। । প্রিয় পাঠক আসুন আমরা সত্য বলি,ন্যায় প্রতিষ্ঠা করি,অন্যের হক নষ্ট না করি,হালাল অর্জন করি,হৃদয়কে প্রসস্ত করি। হে হৃদয় কষ্ট পেয়েছ হোসাইনের জন্য? যদি না পাও হৃদয় আমার তুমি পাশান হয়েছ। তাই হৃদয় দিয়ে আল্লাহর সৃষ্টিকে ভালবাসতে শিখি ,ভালবাসি নিজের দেশকে, মানুষের মত মানুষ হই,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে সৃষ্টি কর্তার নিকট দুই হাত ভিক্ষুকের মত তুলে দোয়া করি, কারবালায় শহীদান আহলে বাইয়াতদের জন্য,নিজের জন্য,অন্যের জন্য আর নিজ মাতৃভূমির জন্য।

মো: আবু তালহা তারীফ

Check Also

হজ শেষে দেশে ফিরলেন

হজ শেষে দেশে ফিরছেন ২৮ হাজার ৯৪১ হাজি, মৃত্যু ৫৪ বাংলাদেশীর

পবিত্র হজ পালন শেষে এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৯৪১ হাজি দেশে ফিরেছেন। হজে গিয়ে মারা …