রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ হাউজিং সংলগ্ন রামচন্দ্রপুর খাল ভরাট করে গড়ে ওঠা বহুল আলোচিত খামার সাদিক এগ্রো মাটির সঙ্গে মিশেয়ে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
আজ শনিবার তৃতীয় দিনের মতো অভিযান চালিয়ে উচ্চবংশীয় গরু-ছাগলের খামারটি পুরো উচ্ছেদ করা হয়। এতে গবাদি পশু রাখার জায়গা না থাকায় তা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সাভার উপজেলার বলিয়াপুরের খামারে।
অভিযানের প্রথম দিন (বৃহস্পতিবার) যে ভবনে সাদিক এগ্রো এর খামার ছিল তার অংশিক উচ্ছেদ করা হয়। তৃতীয় দিন শনিবার পুরো স্থাপনাই মাটির সঙ্গে মিশেয়ে নগর কর্তৃপক্ষ৷
ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ এবং ডিএনসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন।
ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিএস নকশা অনুসারে খাল উদ্ধারে অভিযান চলছে। রামচন্দ্রপুর খালের এই অংশে চারদিনের উচ্ছেদ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীকাল রোববারও উচ্ছেদ অভিযান এবং খাল খননের কার্যক্রম চলবে।
বৃহস্পতিবার সাদিক এগ্রো এর খামারের একাংশ উচ্ছেদ করা হলেও আজ শনিবার পুরো খামার গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কোটি টাকার ‘অভিজাত’ গরু এবং ‘১৫ লাখ টাকার’ ছাগল নিয়ে আলোচনায় আসে এই খামার।
উচ্ছেদের ঘটনায় সাত মসজিদ হাউজিংয়ের স্থায়ী বাসিন্দা বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানে আমরা অনেক খুশি। আমরা চাই খালে আবার আগের মতো পানি আসুক। এতদিন সাদিক এগ্রোর ফেলা ময়লায় দুর্গন্ধে টিকে থাকা যেত না।’
সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে খাল দখল ছাড়াও অনেক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। ২০২১ সালে কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু আমদানি করেছিলেন ইমরান নিজেই।
জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ায় সরকার গরুগুলো জব্দ করে। সাভারে প্রাণিসম্পদের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে জব্দ থাকা এসব গরু পরে নামমাত্র মূল্যে নিলামে কিনে নেন ইমরান। শর্ত ছিল, গরুগুলো জবাই করে রমজানে সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রি করবেন। মাংস তিনি ঠিকই বিক্রি করেছেন, তবে অন্য গরুর। কৌশলে ব্রাহমা জাতের গরুগুলো নিজের কাছে রেখে দেন চতুর এই ব্যাবসায়ী। এই গরু থেকে কয়েক লাখ টাকার সিমেন বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে।
গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী’ পরিচালনায় আড়াই কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ইমরান হোসেন। প্রদর্শনীতে স্টল বরাদ্দের মাধ্যমে অন্য খামারিদের কাছ থেকে এই টাকা উঠিয়েও নিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রদর্শনী আয়োজনে প্রতিশ্রুত কোনো টাকাই ইমরান দেননি। ২০২৩ সালের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে একই রকম কান্ড ঘটিয়েছেন তিনি।
ইমরানের এসব প্রতারণায় ক্ষুব্ধ খামারিরা। আশেপাশের অনেক খামারির সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘ইমরানের প্রতারণার কারণে খামারিদের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের জায়গা নষ্ট হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে সে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু এনে বিমানবন্দরে ধরা পড়েন। কিন্তু সে সময় জালিয়াতির পরেও কোনো শাস্তি না হওয়ায় তাঁর সাহস দিন দিন বেড়েই চলছে।
আরো পড়ুনঃ হজ শেষে দেশে ফিরছেন ২৮ হাজার ৯৪১ হাজি, মৃত্যু ৫৪ বাংলাদেশীর