বুড়িগঙ্গা নদীর পৃথক স্থান থেকে শনিবার দিবাগত মধ্যরাত ও রবিবার সকালে দুই শিশু-কিশোরের ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। নিহতদের নাম মোঃ আবির (০৮) ও মোঃ জিহাদ হোসেন (১৭)।
এদের মধ্যে শিশু আবিরের লাশ বিনা ময়না তদন্তে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও কিশোর জিহাদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহত শিশুর মা নাসিমা বেগম জানান, তাদের বাড়ি রাজধানীর চকবাজার থানাধিন ইসলামবাগ বেরীবাধ এলাকায়। শনিবার সকালে তার শিশু ছেলে আবির খেলার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ থাকে। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করে কোথাও পাই নাই। রবিবার সকালে লোকমুখে জানতে পারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ জিনজিরা ফেরীঘাট এলাকায় নদীকে ভাসমান অবস্থায় এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে। এ খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে আমার ছেলে আবিরের লাশ শনাক্ত করি। তিনি আরো বলেন, শিশু আবির মাঝে মধ্যেই গোসল করার জন্য নদীতে যেতো।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ ওবায়দুর রহমান জানান, রবিবার সকালে লোকমুখে সংবাদ পাই যে, বুড়িগঙ্গা নদীর জিনজিরা ফেরীঘাট সংলগ্ন নদীতে একটি ভাসমান লাশ। এমন সংবাদের ভিত্তিত্বে ঘটনাস্থলে গিয়ে অজ্ঞাত এক শিশুর লাশ উদ্ধার করি। শিশুর বয়স আনুমানিক ৮ বছর। এরপর নদীর পারে শিশু লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করার সময় শিশুর স্বজনরা চলে আসলে জানতে পারি শিশুটির নাম মোঃ আবির। তার পিতার নাম মোঃ কামরুল ইসলাম।
শিশুটি শনিবার সকালে খেলতে এসে পানিতে ডুবে নিখোঁজ থাকে। পরে শিশুটির স্বজনরা বিনা ময়না তদন্তে লাশ নেওয়ার আবেদন করলে আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করি। এ ঘটনায় নিহত শিশুর মা বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে।
অপরদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর শ্যামপুর ভাষানটেক ঘাট এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক কিশোরের ভাসমান লাশ উদ্ধার করে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে নিহতের স্বজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করার পর জানা যায় তার নাম মোঃ জিহাদ। শুক্রবার সকালে বন্ধুরা বাসা থেকে ডেকে আনার পর নিখোঁজ ছিল জিহাদ।
নিহতের পিতা মোঃ ইউসুফ আলী মৃঝি জানান, তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ থানার জগন্নাথপুর এলাকায়। তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানাধিন আগানগর ইউনিয়নের ইমামবাড়ি জনৈক নওশের মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। নিহত কিশোর জিহাদ তার একমাত্র ছেলে। সে পড়ালেখা ছেড়ে পুরান ঢাকার একটি হোন্ডা মেরামতের গ্যারেজে মেকানিক্যালের কাজ করতেন। গত শুক্রবার সকাল ১১ টায় জিহাদের বন্ধু রাজন, পাবেল, আসাদ, রুবেল ও রাতুল বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর দুপুরে বাসায় খেতে না আসলে বিভিন্ন জায়গায় খোজ করতে থাকি। এক পর্যায়ে তার বন্ধুদের বাসায় গিয়ে খোজ করলে তাদেরকেও পাওয়া যায়নি।
সারা রাত খুজে ছেলেকে কোথাও না পেয়ে পরদিন বিকেলে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। পুলিশ শনিবার রাতে জিহাদের ওই চার বন্ধুকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। এরপর রাত ১২টার সময় বুড়িগঙ্গা নদীর শ্যামপুর ভাষানটেক ঘাট বরাবর আমার ছেলে জিহাদের লাশ ভেসে উঠে। আমার ধারনা জিহাদের বন্ধুরা তাকে হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে দেয়। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার এস আই মোঃ মুযাম্মেল হোসেন জানান, শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১২ ঘটিকার সময় লোকমুখে খবর পেয়ে শ্যামপুর ভাষানটেক ঘাট এলাকা থেকে কিশোর জিহাদের ভাসমান লাশ উদ্ধার করি। পরে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। নিহতের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তিনি আরো বলেন, নিহত কিশোরের পিতা ইউসুফ আলী জিহাদের বন্ধুদের আসামী করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে আমি তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে নিয়ে আসি।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় বন্ধুরা সবাই মিলে থানার ঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে গোসল করতেছিল। তারা নদী দিয়ে বাল্কহেড যাওয়ার সময় লঞ্চে উঠে লাফিয়ে পানিতে ঝাপ দিয় গোসল করতে থাকে। এর এক পর্যায়ে জিহাদ লাফালাফি করতে করতে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়ে যায়। ভয়ে আমরা বিষয়টি কাউকে বলি নাই। বিষযটি আমি জানার পর তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেই। এ ব্যাপারে নিহতের পিতা বাদী হয়ে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। তবে ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসার পর যদি জানাযায় তাকে হত্যার পর পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে তাহলে তখন এটা হত্যা মামলা নেওয়া হবে।