কর্পোরেট খাতে কমে নি নারীদের প্রতি বৈষম্য, হয়রানি!

কর্পোরেট খাতে কমে নি নারীদের প্রতি বৈষম্য, হয়রানি!

নারীদের প্রতি বৈষম্য ও হয়রানি এখনো দৃশ্যমান রয়েছে কর্পোরেট খাতে, যেখানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অংশগ্রহণ বাড়ছে নারীদের।  

 

কর্পোরেট খাতে এখন আর পিছিয়ে নেই নারীরা।  যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখানে অংশগ্রহণ বাড়ছে নারীদের। এক সময় যে খাতের প্রায় সম্পূর্ণটাই ছিল পুরুষদের দখলে সেখানে পুরুষ সহকর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাই এখানে নির্ভরশীলতা বাড়ছে নারী কর্মীদের। 

তবে খাতটিতে নারী পুরুষ সমান তালে এগিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন যে এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে করা হয় নারীর প্রতি বৈষম্য। একদিকে কাজ করতে গেলে যেমন শিকার হতে হয় বিভিন্নরকম হেনস্থা, তার উপর অফিসে যৌন হয়রানির শিকার হও্যার অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য।  বর্তমানে কর্পোরেট খাতে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ, বিগত দিনগুলোর তুলনায় যা ক্রমবর্ধমান। 

বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই  পেরিয়ে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেও অনেকে নিজেকে নিয়ে গেছেন এই খাতের শীর্ষ পর্যায়ে। সব বাধা আর হয়রানি কে হার মানিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সুনামের সাথে।
নারীদের প্রতি বৈষম্য

প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে এ দেশের ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন রোকেয়া আফজাল রহমান। বার্জার পেইন্টস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপালি চৌধুরী, শুরু করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ একজন কর্মকর্তা হিসেবে ধীরে ধীরে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে গেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এদিকে পরিবহন খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান নিটল নিলয় গ্রুপ গড়ে তুলেছেন সেলিমা আহমাদ, দায়িত্ব পালন করছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে।

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মাইডাস ফাইন্যান্সিং এর চেয়ারম্যান রোকেয়া আফজাল রহমান নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন দেশের শীর্ষ উদ্যোক্তাদের সারিতে। তিনি এই ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, একই সাথে দায়িত্ব পালন করছেন আর লিঙ্ক লিমিটেডের চেয়ারপার্সন হিসেবে। এর আগে তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এমন অনেক নারী কর্পোরেট খাতে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যারা আশা করেন এ প্রজন্মের নারীরা কর্পোরেট খাতে নারীদের এই অংশগ্রহণকে আরো ত্বরান্বিত করবে। 

স্কয়ার ফ্যাশনসের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আনিকা চৌধুরী, তিনি মনে করেন এদেশের নারীরা কর্পোরেট খাতে নিজেদের গুরুত্ব প্রমাণ করেছে। অনেক বাধা থাকা সত্ত্বেও নারীরা সাহসের সাথে কাজ করে চলেছে। চ্যালেঞ্জ নিতে যে নারীরা ভয় পায় না তারা তা তারা প্রমাণ করেছে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় অফিসে বেশি সময় মত আসেন, অফিস চলাকালীন সময় বাইরে বের হন না। তাই এ খাতে নারীরা গুরুত্ব পাচ্ছে।

মাল্টিমোড গ্রুপের প্রধান হিসেবে রক্ষক লিপি খন্দকার জানান কর্পোরেট খাতে নারী কোটার কোন সুযোগ নেই এখানে এগিয়ে যেতে হয় প্রতিযোগিতা করে। সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন আর কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই এই খাতে।

কর্পোরেট খাতে নারীদের প্রতি বৈষম্য ও হয়রানি বিষয়ে একটি কারণ জানান বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার অল পলিসি ডায়লগ এর নির্বাহী পরিচালক হামিদা খাতুন।  তিনি মনে করেনসমাজের যেসব পরিবারের পুরুষরা ছোটবেলা থেকে দেখেন যে তাদের মা-বোনকে সম্মান বা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা  দেওয়া হচ্ছে না, এসব পরিবার থেকে আশা পুরুষরা যখন কর্পোরেট খাতের দায়িত্ব পান তখন তারা নারীদের সাথে এমন ব্যবহার করেন। 

বিগত কয়েক বছরে কর্পোরেট সাথে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে অথচ কমে নি নারীদের প্রতি বৈষম্য, উলটো বেড়েছে হয়রানি। যেহেতু শিক্ষিত এবং কর্মক্ষম নারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই কর্পোরেট খাতেও বাড়ছে তাদের অংশগ্রহণ।  নিজেদের যোগ্য হিসেবে তৈরি করেই তারা আসছেন এ খাতে, নিরলস ভাবে অবদান রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে নারীদের প্রটি বৈষম্য আর হয়রানি রয়েছে এখনো। এ খাতে নারীদের নানাভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়। প্রতিমুহূর্তে সতর্ক থেকেও নানান ভাবে তাদের পড়তে হয় সাইবার সন্ত্রাসীদের কবলে। অনেক স্বার্থলোভী গোষ্ঠী ডিজিটাল মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুজব, ভুল তথ্য ও মিথ্যা ছড়িয়ে নারীবিরোধী ঘৃণ্য প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এবং অসহিষ্ণুতা উসকে দিয়ে সমাজে সম্প্রীতি ও সহনশীলতার পরিবেশ বিনষ্ট করে। নারীবিদ্বেষকে উসকে দিচ্ছে এবং বিদ্যমান বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করছে।

এ প্রেক্ষাপটে  আমাদের দাবি হওয়া উচিত-ডিজিটাল খাতে বর্তমান বিশ্বের অগ্রগতিকে নারীদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কাজে লাগানো হোক, যাতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা ও যৌন সহিংসতা মোকাবিলায় প্রযুক্তি হয় গণতান্ত্রিক, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সহায়ক ও সৃজনশীল।

রকি মেরাজের কবিতা ‘প্রিয় বাংলাদেশ’ 

 

Check Also

সমঝোতা স্মারক সই

বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে সাত ঘোষণাপত্র, ২১ সমঝোতা স্মারক সই

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সাত ঘোষণাপত্র ও ২১টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সম্পর্ক আরও এগিয়ে …