অপূর্ব চৌধুরী, জবি প্রতিনিধি:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার খাতায় নাম্বার জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভাগের ৩০তম একাডেমিক কমিটির সভায় বাংলা বিভাগের অন্যান্য সকল শিক্ষকরা এই অভিযোগ তোলেন।
সেই সাথে অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় সহকর্মীর কাছে উড়োচিঠি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাজে মন্তব্য করা, একাডেমিক কাজে অবহেলাসহ আরও অনেক অভিযোগ তোলেন শিক্ষকরা।
পরীক্ষায় খাতায় নাম্বার জালিয়াতি করায় অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের বহিষ্কারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) এর শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার (৩১অক্টোবর) তাদের মিডটার্ম পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এই বিক্ষোভ মিছিলটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবন থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
এই বিক্ষোভ মিছিলের সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় খাতায় নাম্বার জালিয়াতি করায় অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের বহিষ্কারসহ ৪ দফা দাবি জানায়।শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবিগুলো হলঃ
১.মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) এর ৫১০১ কোর্সটির মিডটার্মসহ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার খাতা তৃতীয় পরীক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন করতে হবে।
২. মিডটার্মের খাতা মুল্যায়নের পর আজ (বৃহস্পতিবার -৩১ অক্টোবর) দুপুর ৩ টার মধ্যে বাংলা বিভাগের নোটিশ বোর্ডে টানাতে হবে।
৩. অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসকে বাংলা বিভাগ থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
৪. ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের স্নাতক পর্বের সকল কোর্সের পরীক্ষার খাতাগুলো পুনরায় মূল্যায়ন করতে হবে।
এদিকে অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস তার নামে আনিত অভিযোগসমূহ সত্য নয় বলে দাবি করে বলেন পরিকল্পিতভাবে একাডেমিক কমিটি আলোচ্য বিষয় ছাড়াই তার নামে অভিযোগ আনেন।
জানা যায়, গত ১ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বাংলা বিভাগের ৩০ তম একাডেমিক কমিটির সভা হয়। সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) এর শিক্ষার্থীদের বাংলা কবিতা (৫১০১) কোর্সে অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেশি নাম্বার ও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কম নাম্বার দেওয়ার বিষয়টি উপস্থাপিত হয়।উক্ত শিক্ষক তার একান্ত ঘনিষ্ঠ ৩ জন শিক্ষার্থীকে মিডটার্ম পরীক্ষায় ১০ এর মধ্যে ১০ এবং তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের ঘনিষ্ঠ আরোকয়েকজন শিক্ষার্থীকে ১০ এর মধ্যে ৩ নাম্বার দেয় বলে জানা যায়।বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. চঞ্চল কুমার বোসকে অশালীন ভাষায় একটি উড়োচিঠি ও দেন তিনি।
এছাড়াও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা জলির নামে চিঠি, সহকারী অধ্যাপক সোহেলী জান্নাতের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন পোস্ট দেওয়া,ক্লাসে কথা বলার অভিযোগে এক ছাত্রীকে নগ্ন হয়ে নাচতে বলা,পরীক্ষার খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করা সহ আরো কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ উথ্বাপিত হয় অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। এসময় ৩০তম একাডেমিক কমিটির সভায় বিভাগের শিক্ষকরা তাকে বিভাগের পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ না দেয়ার পক্ষে কথা বলেন।
নিয়োগ দেয়া হলে তার সাথে কাজ করবেন না বলে জানান। এদিকে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আরজুমন্দ আরা বানু,অধ্যাপক ড. হোসনে আরা জলির নামে গত ২০ অক্টোবর ও ২৯ অক্টোবর পৃথক আইনজীবির মাধ্যম্যে আইনি নোটিশ পাঠান।
২৮ অক্টোবর বাংলা বিভাগের ৩১ তম একাডেমিক সভায় অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ছাড়া সবাই পূর্ববর্তী বিষয়গুলো আবার উত্থাপন করে তাকে চেয়ারম্যানর হিসাবে না মানার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে বিভাগের শিক্ষকরা দেখা করতে গেলে উপাচার্য অধ্যাপক ড.মীজানুর রহমান বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাষ্টার্সের ১ম সেমিষ্টারের বাংলা কবিতা (কোর্স নং-৫১০১) এর মিডটার্ম পরীক্ষার খাতা তার কাছে জমা দিতে বলেন।
এবিষয়ে বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের (স্নাতকোত্তর) শিক্ষার্থী পারভেজ মোশারফ বলেন,আমি মাস্টার্স ১ম সেমিষ্টারে মিল্টন বিশ্বাসের প্রতিটি ক্লাস ও মিড টার্মে অংশগ্রহন করেছি। কিন্তু আমাকে সেখানে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। উপস্থিতির কোন নাম্বারই দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েল বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাষ্টার্সের (স্নাতকোত্তর)১ম সেমিষ্টারের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. চঞ্চল কুমার বোস বলেন, অধ্যাপক ড.মিল্টন বিশ্বাস বিভাগের একাডেমিক কাজে অসততার আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি বিভিন্ন সেমিষ্টারে শিক্ষার্থীদের নাম্বার প্রদানে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.আরজুমন্দ আরা বেগম বলেন,অধ্যাপক ড.মিল্টন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একাডেমিক কাজে গাফিলতি, সহকর্মীদের অশালীন চিঠি,শিক্ষার্থীদের নাম্বর জালিয়াতির ঘটনাসহ কয়েকটি অভিযোগ একাডেমিক কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়। পরবর্তীতে সেগুলা আমরা উপাচার্যেও কাছে জানিয়েছি। উপাচার্য মহোদয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন। আর লিগ্যাল নোটিশের বিষয়ে উপাচার্যের পরামর্শে কোন ব্যবস্থা নিবনা।
এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের বলেন,আমরা ইতিমধ্যে এই কোর্সটির খাতা অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে মূল্যায়ন করতে দিয়েছি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫০ শিক্ষক মিডটার্মের ফলাফল শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ করে না। তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।এ বিষয়ে ড.মিল্টন বিশ্বাস বলেন, আমি কাউকে নাম্বার কম দেইনি, যারা কম পেয়েছে তারা তাদের মেধার ভিত্তিতে পেয়ছে।একদল শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে ভড়কে দিচ্ছেন।যা খুব দুঃখজনক।