কিছু উদ্ভিদ বা গাছ-গাছড়া আছে যাদের স্পর্শও বিপজ্জনক।দয়ার গুড়ো তেমনি একটি লতা জাতীয় গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Mucuna pruriens. বোটানিক্যাল নামের Pruriens শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে, যার অর্থ চুলকানির অনুভূতি। ফলের খোসা ও পাতায় আছে- সেরাটোনিন, যার কারণে চুলকানির উদ্রেক হয়। তার দয়ার সংস্পর্শে যে এসেছে সেই জানে দয়ার গুড়োর দয়ায় কি মাহাত্ম্য…!!! সামান্য ছোঁয়া লাগলেই সর্বনাশ। সারা গায়ে শুরু হবে চুলকানি। লাল হয়ে যায় ত্বক। আগুনের মত জ্বলে আর চুলকায়।
দয়ার গুড়ো বাংলায় বিলাই-খামচি নামেই বেশী পরিচিত। অবশ্য অঞ্চলভেদে এটি আলকুশি ও বান্দরহলা নামেও পরিচিত। তবে আমি আঞ্চলিক সূত্রে দয়ার গুড়ো নামে চিনি বলে শিরোনামে দয়ার গুড়ো লিখেছি। এটি ইংরেজি ভাষায় Velvet bean, Cowitch, Cowhage ইত্যাদি নামে পরিচিত। দয়ার গুড়ো Fabaceae বা শিম জাতীয় উদ্ভিদ পরিবারের একটি সদস্য।
দয়ার গুড়ো একটি গুল্ম জাতীয় গাছ। ফল অনেকটা শিমের মতো, থোকায় থোকায় ধরে। বীজপড ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম দ্বারা আবৃত থাকে যা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। এগুলি ত্বকের সংস্পর্শে এলে প্রচণ্ড চুলকানি সৃষ্টি করে। বানরের সঙ্গে এদের সম্পর্ক হল, যখন দয়ার গুড়ো ফল পুষ্ট হতে থাকে তখন চুলকানির ভয়ে বানরের দল ঐ এলাকা ছেড়ে চলে যায়, কারণ এর হুল বাতাসেও ছড়িয়ে পড়ে। বানরেরা ফিরে আসে যখন মাটিতে ফল পড়ে যায়। তখন তারা সেগুলো খায় বিশেষ দৈহিক কারণে।
দয়ার গুড়ো ফলে রয়েছে নানান আয়ুর্বেদীয় উপাদান। যুগ যুগ ধরে এটি ভারতবর্ষে পার্কিনসন রোগের মহৌষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৪ সালে লন্ডনের ন্যাশনাল হসপিটাল অব নিউরলজি এর গুনাগুনের উপর নিরীক্ষা চালায় এবং সফলভাবে প্রমানিত হয় যে এর বিচি সিদ্ধ করে একটি নির্দিষ্ট পরিমানে খেলে পার্কিনসন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চীন কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে এই ফলের উচ্চতাবর্ধক কিংবা যৌন উত্তেজক হিসাবে জনপ্রিয়তা রয়েছে। মধ্য আমেরিকায় দয়ার গুড়োর বীচি আগুনে ভেজে চূর্ণ করা হয় কফির বিকল্প হিসেবে। এ কারণে ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশে এর প্রচলিত নাম হচ্ছে নেস ক্যাফে। গুয়েতেমালায় কেচি সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও খাদ্যশস্য হিসেবে এটি আবাদ করে।
গাছটির শিকড় বাকরও ফেলনা নয়। দেশে দেশে মানুষের বিশ্বাস যে এর শিকড় বেটে খেলে কাশি, এজমা, জ্বর অথবা গল্ড ব্লাডার স্টোন জাতীয় রোগ সেরে যায়। অনেকে আবার মনে করেন এটি রক্ত পরিশোধক এবং ডায়াবেটিক সমস্যায় এটি ব্যবহৃত হয়। এতে নার্ভাসনেস কেটে যায়, বিষন্নতা দুর করে।
