জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া পিএইচডির সনদ গ্রহণ করলেন জবি প্রক্টর

নিয়ম ভেঙে জালিয়াতির করে ‘পিএইচডি’ সনদ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রক্টর মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধূপখোলা মাঠে আয়োজিত সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় পিএইচডি ডিগ্রিধারী হিসেবে তিনি এই সনদ নেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম একাডেমিক কাউন্সিল সভায় উপস্থিত একাধিক ডিন ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোস্তফা কামালের ওই ডিগ্রি দেয়ার বিরোধিতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান তার নিজ ক্ষমতাবলে তাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেন।

মোস্তফা কামালকে এই ডিগ্রি প্রদানের আগে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করতে তিন বছরের সময়সীমা ছিল পিএইচডি ডিগ্রি জালিয়াতির এই সংবাদ ওই সময় বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জানা গেছে, একাডেমিক কাউন্সিল সভা ও সিন্ডিকেট সভায় পিএইচডি ডিগ্রি অনুমোদনের সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়েল সহকারী প্রক্টর ও বর্তমানে প্রক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন। এই শিক্ষক ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে ২য় শ্রেণিতে ৫১তম এবং ওই ব্যাচের ৯০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯তম হওয়ার পরও জবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান।

সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেতে হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে তিন বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। তার অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র ১ বছর ৯ মাস। তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন।

এখানেই শেষ নয়, অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই নিয়ম ভঙ্গ করা যেন তার প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন ভঙ্গ করে বাগিয়ে নিয়েছেন পিএইচডি ডিগ্রি।

রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, একজন থিসিস রেজিস্ট্রেশনের তারিখ থেকে তিন বছরের আগে পিএইচডি থিসিস জমা দিতে পারবেন না।

অথচ তিনি দুই বছরেই পিএচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি নীতিমালায় বলা হয়েছে, কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগের জন্য পিএইচডি করতে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। আর গ্রেডিং পদ্ধতিতে ন্যূনতম তিন দশমিক ২৫ সিজিপিএ থাকতে হবে। কিন্তু ওই শিক্ষকের প্রাপ্ত নম্বর মাত্র ৪৯ শতাংশ।

আর সবকিছুই করছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। জানা যায়, মোস্তফা কামাল পিএইচডি ডিগ্রিতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। তিনি ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর পিএইচডি গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

ডিগ্রি লাভ করেন ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর। ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে ‘বিভিন্ন ধর্মে নারীর অধিকার : পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণার জন্য তার পিএইচডি ডিগ্রি অনুমোদন দেয়া হয়। ঠিক চার দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম সিন্ডিকেট মিটিংয়ে তা চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।

এ সিন্ডিকেটের আদেশ অনুসারে ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট মিটিং উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজ ক্ষমতার প্রয়োগ করেন বলে জোর অভিযোগ উঠেছে।

ওই শিক্ষকের একাডেমিক কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষে মৌলিক কোর্স (বাংলা ও ইংরেজি) অকৃতকার্য হওয়ায় পরবর্তী ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করেন।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, আমার তিন শিক্ষাবর্ষেই পিএইচডি ডিগ্রি নেয়া হয়েছে।

আমার চেয়ে কম সময়েও একজন পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন। আর নিয়ম মেনেই আমি আবেদন করেছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, সিন্ডিকেট মেম্বাররা তার পিএইচডি ডিগ্রি অনুমোদন করেন।

আর একই মিটিংয়ে আইন সংশোধন করে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটেছে কি না, আইন বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন।

নিউজ ঢাকা

আরো পড়ুন,থমকে আছে জকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়ন

Check Also

স্কাউটস বন্যা ও ঘুর্ণিঝড়

কিশোরগঞ্জে স্কাউটস এর বন্যা ও ঘুর্ণিঝড় পরবর্তি উদ্ধার অভিযান প্রশিক্ষণ

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে ‘‘যথাযথ প্রস্তুতি, দুর্যোগে কমাবে ক্ষতি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চলমান ৩য় জাতীয় দুর্যোগ …