সাংবাদিককে নির্যাতন-হুমকি,

ছয় মাসে ১৪৫ সাংবাদিককে নির্যাতন-হুমকি, হেফাজতে ৮ মৃত্যু

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ১৪৫ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন-হুমকি ও হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে অন্তত দুজন নারীসহ আটজনের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া একই সময়ে সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও ১১ জন।

গত বৃহস্পতিবার আসকের প্রকাশিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন

গত ছয় মাসে দেশের জাতীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে অন্তত ২ জন নারীসহ ৮ জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

এর মধ্যে, যশোরের অভয়নগর থানায় পুলিশ হেফাজতে আফরোজা বেগম (৪০) মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ, ঘুষের দাবিতে তাকে পুলিশ নির্যাতন করে হত্যা করেছে।

গত ১ জুন রাত দেড়টার দিকে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রাম থেকে তাকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ২ জুন সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে আফরোজা বেগম থানা-হাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তাকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর সুস্থ বোধ করলে তাকে থানায় ফিরিয়ে আনা হয়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গণমাধ্যমে পাঠানো আসকের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নার সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির পরিসংখ্যানগত পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, সীমান্তে হত্যা, সাংবাদিক নিপীড়নসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে।

আফরোজা বেগমের ছেলে অভিযোগ করেন, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র‌্যাবের হেফাজতে গৃহবধূ সুরাইয়া বেগম (৫২) মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ, তাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় শারীরিক নির্যাতনের ফলে তার মৃত্যু হয়।

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানা এলাকার ফিরোজ হোসেনকে গত ৯ জুন শৈলকুপা থানা পুলিশ মারধর করে এবং এক পর্যায়ে গুলি করে। গুলির ঘটনায় ফিরোজ হোসেন গুরুতর আহত হন এবং ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে তার হাত কেটে ফেলতে হয়।

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে ঢাকার লালবাগ এলাকায় মো. ফারুক হোসেনের কারাগারে মৃত্যুর অভিযোগ করেছে পরিবার। পরিবারের পক্ষ থকে এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে পুলিশের নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়ে কারা হেফাজতে রুবেল দের মৃত্যুর অভিযোগ করেছে পরিবার। এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সীমান্ত হত্যা

আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১১ জন।

গত বছরের প্রথম ছয় মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ১০ জন, আহত ১৪ জন।

সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি

গত ছয় মাসে ১৪৫ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে আসক জানিয়েছে।

শেরপুরের নকলা উপজেলায় দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদক শফিউজ্জামান রানা গত ৫ মার্চ উপজেলা কার্যালয়ে গিয়ে কিছু তথ্য না পাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে ইউএনও মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠান।

জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের বরাতে প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ছয় মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ৪৪০টি। এতে নিহত হয়েছেন ৪১ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ৭৩৬ জন।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

এই সময়ে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৪৬ জন। তাদের মধ্যে কয়েদি ২০ জন এবং হাজতি ২৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১৩ জন হাজতি এবং ১০ জন কয়েদির মৃত্যু হয়।

গণপিটুনিতে নিহত

ছয় মাসে গণপিটুনিতে নিহত হন মোট ৩২ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ২ জন, বরিশাল বিভাগে ১,ময়মনসিংহ বিভাগে ২ এবং সিলেট বিভাগে ১ জন নিহত হন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুন ছয় মাসে গণপিটুনিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৪।

আসক জানিয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ সংখ্যাগত প্রতিবেদন ১০টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও আসকের নিজস্ব সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্ধু ভারত, উন্নয়নের বন্ধু চীন : কাদের

Check Also

ডা. মোহাম্মদ ইউনুস

শনিবার আবার ৭ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

সংস্কারের বিষয়ে শনিবার (১৯ অক্টোবর) দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. …