কেরানীগঞ্জ বাসির নতুন এক যন্ত্রনার নাম ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা

ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা কেরানীগঞ্জ বাসীর জন্য যন্ত্রনার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। দিনভর অটোরিক্সার পিপ-পিপ,প্যা-পু,চ্যা-চু বিভিন্ন প্রকার শব্দে বিরক্ত এখানকার জনগন।

বিশেষ করে  রাস্তার পাশে যাদের বাড়িঘর তাদের বিরক্তির পরিমানটা একটু বেশিই । এ অটোরিক্সাগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রাস্তায় জানজট সৃষ্টি ও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অতিষ্ঠ করে তুলছে জনজীবন।

এদের নেই কোন লাইসেন্স ,নেই কোন গতিসিমা আবার নেই কোন ট্রেনিং। নিয়ন্ত্রনহীন এ রিক্সার কারনে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ঝুকে পড়ছে এ ব্যবসায়।

এলাকাবাসী অনেকেই অভিযোগ করেন, বেশ কিছু রিক্সার গ্যারেজে অটোরিক্সায় ব্যবহৃত ব্যাটারীগুলো অবৈধ ভাবে চার্জ করা হয়। অনেক গ্যারেজ মালিক বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রতিদিন অটোরিক্সা গুলো চার্জ করে থাকে।

এতে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে,  অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়া ও লোড সেডিং এর কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারন জনগন।

অথচ এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। মাঝে মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রশাসন থেকে অটোরিক্সা বন্ধে উদ্যোগ বা গ্রেরেজে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও তা অজ্ঞাত কারনে বন্ধ হয়ে যায়। এ যন্ত্রনা থেকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারন মানুষ। এ যন্ত্রনা থেকে সবাই পরিত্রান চায়।

তবে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর জি এম মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন কোন গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় না। যদি কোন গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রমান পান তা হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

অটোরিক্সা নিয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞানের কল্যানে ও প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন যানবাহন আবিস্কার করছে। সম্প্রতি রির্চাজেবল ইলেকট্রিক ব্যাটারি ও মোটর এবং বিভিন্ন ধরনের চায়না যন্ত্রনাধায়ক বাশি (হর্ন) লাগিয়ে একটি রিক্সা কেরানীগঞ্জের প্রতিটি অলি গলিতে চলতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন রঙের এই রিকশা গুলো প্রশাসনের নাকের ডগার সামনে দিয়েই হর হামেশা চলছে। সাধারণ রিক্সার সাথে বাজার থেকে কেনা ছোট ছোট ইউপিএস এর ব্যাটারি এবং মটর সংযোগকরে এসব রিক্সা তৈরী করছে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী। এর ফলে পায়ের প্যাডেলের সাহায্যে রিক্সা চালানো কষ্ট বিধায় রিক্সা চালকরা ব্যাটারি চালিত রিক্সা ব্যবহার করতে উৎসাহিত হচ্ছে এবং এ রিক্সা দ্রুতগামী হওয়ায় যাত্রীরাও আরোহনে স্বাচ্ছন্দ মনে করছে। এর কারনেই এ এলাকায় এধরনের রিক্সার হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা বিষয়ে আগানগরের লালবানু বাইতুল আমান জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম শফিকুল ইসলাম সগির বলেন, আমাদের মসজিদের সামনে রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ছোট বড় অনেক গাড়ি চলাচল করে। প্রায় সব ধরনের গাড়ি ই মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সাধারনত হর্ন বাজায় না। কিন্তু এই অটোরিক্সা গুলো এর ব্যাতিক্রম। এরা কোন কিছুই মানে না। মসজিদের সামনে দিয়ে যাবার সময়ও এরা হর্ন বাজাবেই এমন কি নামাজ চলা কালীন সময় হর্ন দেয়। অহেতুক হর্ন বাজানোটা এদের স্বভাব হয়ে দাড়িয়েছে।

সিটি স্কুলের ক্লাস নাইনের এক শিক্ষার্থী সানমুন আহমেদ বলেন ক্লাসে যখন স্যার আমাদের গুরুত্বপূর্ন লেকচার দেন তখন রাস্তায় বাজতে থাকা অটোরিক্সার প্যা পু শব্দ প্রচুর ডিস্টার্ব করে। আগে পুরাতন রিক্সা গুলোই ভালো ছিলো। অটোরিক্সা চলুক সমস্যা নেই। তবে হর্ন গুলো পরিবর্তন করা উচিত। হর্ন পরিবর্তন করে আগের এনালগ বেল লাগালে মনে হয় ভালো হবে।

জিনজিরার বাসিন্দা আমির হোসেন জানান, অটোরিক্সা চালকরা এখন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে, বাধ্য হয়েই আমাদের চরতে হয়। কোন আইন কানুন না থাকায় ছোট ছোট কিশোররাও রাস্তায় এখন রিক্সা চালাচ্ছে। আর এরা রাস্তায় নামলে কে আর আগে যাবে তার প্রতিযোগিতা আর হুরাহুরি করে। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এরা হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দির, স্কুল কলেজ কোন কিছুই মানে না, অহেতুক কারনেই সারাদিন হর্ন বাজায়। এদের হাইড্রলিক হর্ন খুলে অন্য পরিবেশ বান্ধব যে কোন বেল লাগিয়ে দেয়া উচিত।

সামাজিক সংঠন কেরানীগঞ্জ গ্রাজুয়েট সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ম.ই মামুন বলেন, দ্রুত আইনের মাধ্যমে ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও অটোরিক্সায় সৌর বিদ্যুত ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করা উচিত। রিক্সা চালকদের ও বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষনের আওতায় আনা যেতে পারে।  সেই সাথে যত্র তত্র হর্ন বাজনো ও আইন অমান্য করলে যদি জরিমানার ব্যবস্থা করা গেলেও ভালো হবে।অটোরিক্সা যদি এভাবে নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে বাড়তে থাকে তাহলে একটা সময় বিদ্যুৎ নিয়ে আমাদের যে কি পরিমান ভোগান্তি হবে তা বলে বোঝানো যাবে না।

১৫/১৬ বছর বয়সী অটোরিক্সা চালক সাদ্দাম জানান, অটোরিক্সা চালাতে কোন পরিশ্রম হয় না। সারাদিনে কাজ করে গ্যারেজে জমা দেয়ার পরে ৪০০-৫০০ টাকার মতো থাকে তার। তাই সে অটোরিক্সা চালায়। তার কোন রকম প্রশিক্ষন আছে কিনা যানতে চাইলে সে মুচকি হেসে বলে রিক্সা চালাইতে প্রশিক্ষনের দরকার পরে না। দরকার হয় অভাবের। ৬০ উর্দ্ধো বয়সী আমির হোসেন নামক এক রিক্সা চালকের সাথে কথা হলে তিনি যানান, পেটের দায়ে তিনি রিক্সা চালাতে নেমেছেন। অটোরিক্সায় পরিশ্রম কম হয় তাই তিনি রিক্সা চালান । রিক্সার হর্নে পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, হ্যা তা তো মানিই। কিন্তু কি করার। সরকার হর্র্নের বিকল্প কোন কিছু ব্যবস্থা করে দিক। ১০ জনের যা হইবো আমার ও তাই হইবো। আমি একা বন্ধ করলে তো আর কিছু হইবো না।

ঢাকা জেলা দক্ষিন ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো: নুরুল ইসলাম মল্লিক অটো রিক্সার ব্যাপারে বলেন, দিন দিন অটোরিক্সা গুলো খুব বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কেরানীগঞ্জের অধিকাংশ দুর্ঘটনা ও জ্যাম এই অটো রিক্সার কারনেই হয়ে থাকে। এদের কোন কাগজপত্র না থাকায় আমরা এদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে যতোটুকু সম্ভব এদের নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে থাকি।

এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, অটো রিক্সা আসলেই কেরানীগঞ্জবাসীর ভোগান্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। অটোরিক্সার চালকরা বেপরোয়া ভাবে চালায় যার কারনে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া এর হাইড্রোলিক হর্ন শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। আমিও চাইনা এভাবে বেপরোয়া ভাবে অটোরিক্সা কেরানীগঞ্জে চলুক। এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি।

নিউজ ঢাকা

আরো পড়ুন,কেরানীগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল

Check Also

বুড়িগঙ্গায় তেলবাহী ট্রলারে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

বুড়িগঙ্গায় তেলবাহী ট্রলারে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে তেলবাহী ট্রলারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে …