বিয়ের নয় মাসের মধ্যে স্বামীর শারীরিক নির্যাতন ও যৌতুকের চাপ সহ্য করতে না পেরে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এক গৃহবধু।
নিহত গৃহবধু র নাম ফিরোজা বেগম (১৮)। তার স্বামীর নাম মোঃ সাদ্দাম হোসেন। সে পেশায় একজন আচার বিক্রেতা। নিহতের পরিবারের দাবী স্বামী ফিরোজাকে হত্যা করে ঘরের ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যার নাটক করছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন বন্ধডাকপাড়া খালেক কসাইয়ের ভাড়াটিয়া বাড়িতে। পুলিশ শুক্রবার রাতেই লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট করে ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করেছে।
নিহতের মা জোছনা বেগম জানান, আমার পাঁচ মেয়ে দুই ছেলে। মেয়ের বাবা আলামিন গ্রামের বাড়িতে থাকেন। আমাদের কোন খোজ খবর নেন না। আমি ছেলে-মেয়ে নিয়ে শুভঢ্যা উত্তর পাড়া এলাকায় জনৈক আবুল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকি। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমার গরীবানা সংসার। কোন ছেলে-মেয়েকে পড়া লেখা করাতে পারি নাই। সব ছেলে মেয়েই কোন না কোন কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করে। মেয়ে ফিরোজা প্রায় দশ বছর যাবত বুড়িগঙ্গা ২য় সেতুর উপর হকারী করতেন।
সেখানে ওর স্বামী সাদ্দামও হকারী করতেন। ফিরোজা পাপর আর সাদ্দাম আচার বিক্রি করতেন। সে সুবাধে তাদের চেনা জানা। গত নয় মাস আগে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পরে সাদ্দাম বিভিন্নভাবে ফিরোজাকে টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। পাপর বিক্রি করে ফিরোজার জমানো আশি হাজার এবং বড় মেয়ে সম্পার কাছ থেকে ধার করে বিশ হাজার টাকা নিয়ে দেওয়ার পরও সাদ্দামের টাকার চাহিদা মেটাতে পারেনি ফিরোজা।
এর মধ্যে হঠাৎ সাদ্দাম রাতে বাড়িতে আসা বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে ফিরোজা খুব চিন্তায় পড়ে যায়। স্বামী রাতে কোথায় যান, কোথায় থাকেন এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে জানতে পারে সাদ্দামের আগের আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। সেখানে তার সন্তানও আছে। গোপনে ফিরোজা সাদ্দামের আগের স্ত্রীর কাছে গিয়ে দেখা করে তাদের বিষয়টি জানান। সাদ্দাম এ ঘটনা জানান পর শুরু হয় ফিরোজার উপর শারীরিক নির্যাতন। পাশাপাশি যৌতুকের চাপ।
স্বামীর নির্যাতন সহ্য করেও পাষন্ডটাকে খুব ভালবাসতো আমার মেয়ে। কয়েকদিন আগে আমার মেয়ে আমাকে ফোন করে বলে মা আমি কাজে লাগবো, ওরতো দুটো সংসার, একার রোজগারে চলে না। আমি কাজ খুজছি। এরপর মেয়ে গত দু’দিন আগে আমাকে ফোন করে আমার বাড়িতে আসেন কয়েকদিন থাকার জন্য। ঘটনার দিন সাদ্দাম দুপুরে ফোন করলে মেয়ে আমাকে বলে চলে আসে। আমার মেয়ে রোজাছিল । আমি বলেছিলাম ইফতার করে যা। এরপর রাত সাড়ে ১০ টার সময় মেয়ের বাড়ির আশপাশের ভাড়াটিয়ারা ফোন করে আমাকে জানান আমার মেয়ে ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস লাঘিয়ে জুলে রয়েছে।
এ খবর পেয়ে আমরা সাথে সাথে মেয়ের বাড়িতে আসি। মেয়ের লাশ ঘরের মেজেতে পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় তার পাষন্ড স্বামীকে পাওয়া যায়নি। সে এ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। পুলিশ খবর পেয়ে লাশ থানায় নিয়ে আসার পর রাতে সাদ্দাম আমাকে ফোন করে হুমকীদেন যে চলে গেছে সে আর আসবে না। তাকে নিয়ে মামলা মোকদ্দমা করে কি লাভ। আমার ধারনা পাষন্ড সাদ্দাম আমার মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা চালানোর জন্য ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে জুলিয়ে রাখেন। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। সাদ্দামের ফাসি চাই।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ আমিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতেল লাশ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখি। পরে ময়না তদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করেছি। নিহতের গলায় লালচে দাগ ছাড়া শরীরে অন্য কোন আঘাত দেখা যায়নি। এ ঘটনার পার থেকেই স্বামী পলাতক রয়েছে।
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের জানান, এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মোঃ আলামিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। তবে প্রকৃত ঘটনা ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না হত্যা না আত্মহত্যা।
এ এইচ এম সাগর: নিউজ ঢাকা ২৪