কেরানীগঞ্জে র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতির মামলার রহস্য উদঘাটন; গ্রেপ্তার ৮

ঢাকার কেরানীগঞ্জে র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় ৮ ডাকাত গ্রেপ্তারসহ ডাকাতি হওয়া মালামাল উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। বুধবার ১৫ ফেব্রুয়ারী সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ।

পুলিশ সুপার জানান, গত কয়েকদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাতচক্র র‌্যাব পরিচয়ে ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোড এবং ঢাকা-মাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ীদেরকে বাস থামিয়ে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ডাকাতি করে আসছিলো। তাদের মূল টার্গেট ছিলো স্বর্ন ব্যবসায়ীরা।

গত ৩১ জানুয়ারী দুপুরে দোহারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকন স্বর্ণ বিক্রি করার জন্য ঢাকার তাতীবাজারে যায়। স্বর্ণ বিক্রি শেষে নাহিদ ৪০ লক্ষ টাকা ও খোকন ৩১ লক্ষ টাকা সাথে নিয়ে সন্ধ্যা অনুমান ০৫.৫০ ঘটিকার দিকে দোহারের উদ্দেশ্যে নবকলি বাসে উঠে।  অতঃপর সন্ধা অনুমান ০৬.৩০ টায়  তাদের বহনকারী নবকলি বাসটি ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডের কোনাখোলা নামক স্থানে পৌছালে একটি সাদা হাইএস মাইক্রো চলন্ত নবকলি বাসটিকে জোরপূর্বক থামায়। তারপর মাইক্রো হতে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ডাকাত (র‌্যাবের কোটি পরিহিত) বাসে উঠে যাত্রীদেরকে র‌্যাবের লোক পরিচয় দিয়ে ০২ জন আসামীকে ধরতে আসছে বলে জানায়। তারপর ডাকাত সদস্যরা বাসে বসে থাকা স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকনকে টাকার ব্যাগসহ জোরপূর্বক বাস থেকে নামিয়ে ডাকাতদের মাইক্রোতে তোলে।

 এরপর ডাকাতদল স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকনের চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ ৭১ লাখ টাকা ডাকাতি করে দুই স্বর্ণকারকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের নিমতলা নামক স্থানে হাইওয়ের পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে এই ডাকাতির ঘটনায় কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাতদের আসামী করে একটি ডাকাতির মামলা রুজু হয়। মামলা দায়েরের পরে এই ডাকাত চক্রকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম (ক্রাইম এন্ড অপস্ (দক্ষিণ))  এর তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত দল এই ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য ব্যাপক কার্ষক্রম শুরু করেন।

ঘটনাস্থলের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ এই ডাকাতচক্রকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

এরপরে কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীর, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ মামুন-অর রশিদ পিপিএম এর সমন্বয়ে গঠিত আভিযানিক দল কেরাণীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ এবং ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের ০৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো (১। সুজন (৩৯), ২। আলামিন @ রেহান, ৩। ড্রাইবার কবির (৪৬), ৪। মিল্টন (৪৩), ৫। জাবেদ @সিরাজুল (৪০), ৬। নয়ন @ বাবু (২৮), ৭। কামাল (৪৫), ৮। আঃ রহমান @সাজ্জাদ (৪৫)-

অভিযানকালে ডাকাত আলামিন@ রেহান এর স্বীকারোক্তিমতে ডাকাত সুজন মন্ডলের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশী রিভলবার (Made in Pakistan) ও ০২ (দুই রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গ্রেফতারকৃত বিভিন্ন ডাকাতের স্বীকারোক্তিমতে তাদের বাসায় তল্লাশি অভিযান করে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত, হাইএস মাইক্রো ও লুন্ঠিত নগদ টাকা উদ্ধার হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয় গ্রেফতারকৃত ডাকাত সদস্যরা গত ১৭/০১/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডে একইভাবে আরও একটি ডাকাতির ঘটনা স্বীকার করেছে। এর ফলে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় রুজুকৃত র‌্যাব পরিচয়ে অপর আরেকটি ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।

 গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা আছে। সংঘবদ্ধ এই ডাকাতচক্র ইতিপূর্বে র‌্যাবের পরিচয় ব্যবহার করে ঢাকা ও এর আশেপাশে, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ এলাকায় একাধিক ডাকাতি করেছে মর্মে তদন্তে জানা যায়।#

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে [sharethis-inline-buttons]

Check Also

আবারো মধু সিটির দখলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

আবারো কেরানীগঞ্জের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত মধু সিটির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে কেরানীগঞ্জের মডেল থানাধীন কাঠালতলী, …

error: Content is protected !!