কেরানীগঞ্জে মুক্তিপন এর দাবীতে মোঃ সোহাগ (১১) নামের এক ৫ম শ্রেনীর ছাত্রকে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানাধীন মিরেরবাগ বালুর মাঠ এলাকায় হত্যাকারীর ঘরের খাটের নিচ থেকে পুলিশ ঐ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইয়াসিন মোঃ শাহিন (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের মা সখিনা বেগম সখি বলেন, আমার ছেলে ওরিয়েন্টাল টেক্সটাইল মিলস স্কুল এন্ড কলেজের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র। গতকাল সোমবার সকালে স্কুল থেকে ফিরে বেলা ১২ টার দিকে গেইম খেলার কথা বলে আমার মোবাইল ফোন নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। দুপুরে সে আর বাসায় ফিরে আসেনি। দুপুরে আমার ছেলের কাছে থাকা আমার মোবাইল থেকে আমার স্বামীর মোবাইল ফোনে, ফোন করে এক অজ্ঞাত নামা লোক আমার ছেলেকে অপহরনের কথা জানায়। এবং সে বিকেল ৩টার মধ্যে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে।
বিষয়টি থানা পুলিশ বা অন্য কোন ঝামেলা করলে আমার ছেলেকে খুন করবে বলে হুমকি দেয়। কোন উপায় খুজে না পেয়ে আমরা র্যাব-১০ অফিসে যাই। সেখান থেকে আমাদেরকে থানায় ডিজি বা অভিযোগ করার কথা বলে থানায় পাঠিয়ে দেন। আমরা থানায় গেলে পুলিশ আমার ছেলেকে খুজে বের করার জন্য তল্লাশী শুরু করে।
পরে পুলিশ আমাদের পাশ্ববর্তী ইয়াসিন মোঃ শাহিন নামে এক যুবককে আটক করে। ঐ যুবকের বাসার খাটের নিচ থেকে আমার ছেলের হাত পা বাধা লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ইয়াসিন, মোঃ শাহিনের বরাত দিয়ে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, শাহিন একসময় কসমেটিক্স ব্যবসা করতো। ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে সে প্রায় ৩ লাখ টাকা ধার করে ফেলে। পাওনাদাররা প্রায় সময়ই তাকে ধারের টাকা শোধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
শাহিন জানতো সোহাগের বাবার টাকা আছে। সে সুবাদে শাহিন পরিকল্পনা করে সোহাগকে আটকে রেখে তার বাবার কাছে মুক্তিপন চাইলে সে এই সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সোহাগ তাদের বাসায় আসলে শাহিন কৌশলে কসটেপ দিয়ে সোহাগের হাত-পা ও নাক-মুখে বেধে ফেলে। এরপর সোহাগকে তার খাটের নিচে রেখে তার মোবাইল দিয়েই সোহাগের বাবার কাছে ফোন দেয়।
তিনি আরো বলেন, থানায় সোহাগের স্বজনরা আসার পর পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে আমরা শিশু সোহাগকে উদ্ধারের জন্য মাঠে নামি। এরপর দ্রুত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিকেলে আমরা শাহিনকে বাড়ির পাশে মাঠে ক্রিকেট খেলা অবস্থায় ধরে ফেলি। পরে শাহিনের স্বীকারোত্তি মোতাবেক তার ঘরের খাটের নীচ থেকে সোহাগকে হাত-পা, নাক-মুখ বাধা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করি এবং সোহাগের গলায় ও কোমরে লালচে দাগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, এটা একটি মর্মান্তি ঘটনা। যে ছেলেটি অপহরন করে মুক্তিপন চেয়েছিল আমরা তাকে গ্রেপ্তার করার পর শিশু সোহাগের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি এ ঘটনায় খুনি দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি পাবে। এঘটনায় শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।