এ.এইচ.এম সাগর: ” বড় লোক হওয়ার আশায় খুন করা হয় পোষাক শ্রমিককে ”
কেরানীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর পোষাক শ্রমীক জাকির হোসেন রুবেল (৩৫) হত্যার প্রায় ৫ মাস পর মূলহোতা শফিকুল ইসলাম বাহারকে গ্রেপ্তার করে খুনের রহস্য উদঘাটন করলো ঢাকা জেলা দক্ষিন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। শনিবার কেরানীগঞ্জর মডেল থানাধীন খোলামোড়া এলাকা থেকে ঘাতক শফিকুল ইসলাম বাহারকে (১৮) গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রবিবার বিঞ্জ আদালতে ৬৪ ধারা জবান বন্ধীতে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
ঢাকা জেলা দক্ষিন গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল হাসান জানান, গ্রেপ্তারের শফিকুল ইসলাম বাহার ৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে দুইজন মিলে জাকির হোসেনকে হত্যার দায় স্বীকার করে।
নাজমুল হাসান আরো জানান, গত ৩১ শে ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন পশ্চিম বড়িশুর এলাকার জনৈক ওহিদুল ইসলামের বাড়ির ৩ তলায় এক যুবক এলাপাথারী ছুরিকাঘাতে খুন হয়। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ যখন মামলার রহস্য উদঘাটন করতে পারছিলো না, তখন ঢাকা জেলা এসপি স্যারের নিদের্শে মামলার রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব ঢাকা জেলা দক্ষিন ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এবং তদন্তের দায়িত্ব আমার উপর দেয়া হয়। আমি মামলাটি পাওয়ার পর দীর্ঘ ২ মাস মামলার রহস্য বিশ্লেষন করতে করতে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আমরা আসামী শফিকুল ইসলাম বাহারের অবস্থান নির্নয় করি। এরপর শনিবার কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন খোলামোড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। গ্রেপ্তারের পরে বাহার আমাদের গুরুত্বপূর্ন তথ্য দেয়। তার দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, বড় লোক হওয়ার আশায় বাহার জাকিরকে খুন করে। তার বড় লোক হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোচ বেলা থেকেই। তাই জাকিরকে টার্গেট করে তার এক আরেক বন্ধুর সহযোগিতায় (মামলার সার্থে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না) জাকির হোসেন রুবেলকে হত্যা করে ।
গ্রেপ্তারের পর খুনি বাহার বিজ্ঞ আদালতে ৬৪ ধারাপর জবান বন্দিতে জানায়, তার সাথে জাকির হোসেনের সম্পর্ক বেশি দিনের ছিল না। জাকির একজন সমকামী ছিলেন। বাহার ও তার বন্ধুর সাথেও জাকিরের সমকামিতার সম্পর্ক ছিলো। জাকিরের সাথে সম্পর্কের পরে বাহার ধারনা করে জাকির হোসেন মোটামুটি ভাবে ভালো টাকার মালিক। এ ধারনা থেকে বাহার ও তার বন্ধু মিলে জাকির হোসেনকে ১৬ই ডিসেম্বরের দিন মারার প্লান করে। তাদের লক্ষ ছিলো জাকির হোসেনকে খুন করে তার ঘরে থাকা নগদ অর্থ লুট করে সে টাকা দিয়ে পিস্তল কিনবে এবং পরে বড়ো ধরনের অপরাধ কওে রাতারাতি বড় লোক হয়ে যাবে। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক ৩১ শে ডিসেম্বর রাতে বাহার ও তার বন্ধু মিলে জাকির হোসেনের বাসায় অবস্থান নেয়। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জাকির হোসেন যখন বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠে তখন বাহার পিছন থেকে জাকিরের মুখ চেপে ধরে। আরেক বন্ধু এলোপাতাড়ি ছুড়িকাঘাত করে। অনভিজ্ঞ থাকায় দুজনই ধস্তাধস্তিতে আহত হয়। পরে রশি দিয়ে জাকিরের হাত পা বেধে হত্যা নিশ্চিত করে,পরে ফজরের আযানের সময় তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এ ঘটনার অপর আসামীকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। খুব শীগ্রই তাকে গ্রেপ্তার সম্ভব হবে বলেও জানান ঢাকা জেলা দক্ষিন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক নাজমুল হাসান।
উল্লেখ্য: নিহত জাকির হোসেন (৩৫) কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কালিন্দি ইউনিয়নের পশ্চিম বড়িশুরের (মাদারীপুর গ্রাম) জৈনক ওহেদুল ইসলাম সেলিমের বাড়ির তৃতীয় তলায় ব্যাচেলর হিসেবে ভাড়া থাকতেন। তিনি কালিগঞ্জ আলম মার্কেটের মাহিম গার্মেন্ট এ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আসামী শফিকুল ইসলাম বাহার, পিতাঃ আব্দুল বাতেন কামরাঙ্গী চরে ভাড়া থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ওলিপুর উপজেলার গড়াইপুর গ্রামে। তিনি মেটাডোর বলপেন কোম্পানীতে চাকরী করতেন। বয়সের অনেক ব্যবধান থাকলেও তাদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। #