ব্যবসায়ী দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে — জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলো ব্যবসায়ীদের তিন শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ। সংগঠন তিনটির নেতারা বলেছেন, তাদের পক্ষ থেকে এমন কোনও দাবি অর্থমন্ত্রীর কাছে জানানো হয়নি।
শনিবার (৮ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ এর যৌথ সংবাদ সম্মেলন তারা এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ’কলোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে’; আপনাদের পক্ষ থেকে আসলেই এমন কোনো দাবি ছিল কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই তিন ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতিই বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং বলেন, ‘আমাদের এ সংক্রান্ত কোনো দাবি ছিল না।’
এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান বলেন, শুল্ক ০ থেকে ১ শতাংশ নির্ধারণ নতুন বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক বা শিল্পাঞ্চলের বাইরে বিনিয়োগ করার জন্য আরও পাঁচ বছর যেন সময় দেয়া হয় সেই দাবিও আমরা জানিয়েছি। এই সুযোগ যদি না দেয়া হয় তাহলে বিনিয়োগে বড় বাধা হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না এবং রপ্তানি আয়ও বাড়বে না।
তিনি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, মজুরি খরচে সরকারি সহায়তা না দিলে তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে টিকে থাকা সম্ভব নয়। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করার পাশাপাশি এনবিআরের হয়রানি বন্ধ করা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক কিছু নীতি সহায়তা থাকবে। বিশেষ করে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে আমাদের গভীর প্রত্যাশা ছিল, তা হয়নি। আগামী অর্থবছর থেকে তৈরি পোশাক শিল্পে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে অর্ধেক করার দাবি তাদের।
পাশাপাশি আরও কিছু প্রত্যাশা ছিল তিনটি সংগঠনের। যেমন, বাজেটে প্রণোদনার ওপর আয়কর অব্যাহতি, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, এইচএস কোড ও ওজন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, ইআরকিউয়ের ওপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানি কর রেয়াত, পোশাকশিল্পের ঝুট থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসবে। কিন্তু এসব ঘোষণা না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছে তিন সংগঠন।
সংগঠন তিনটি মনে করে, শিল্প টিকে থাকলে রাজস্ব আসবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের। ভবিষ্যতে রপ্তানি বৃদ্ধির আরও সম্ভাবনা আছে। সরকারের অব্যাহত সহযোগিতায় রপ্তানিতে কাঙ্ক্ষিত সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে কর হার না বাড়িয়েও রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব। এতে অর্থনীতি বেশি উপকৃত হবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে।
তিনটি সংগঠনের দাবি, কাস্টমস আইন ২০২৩-এর ১৭১ ধারায় আমদানি করা পণ্যের এইচ এস কোড ভুল হলে যে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান করা হয়েছে, সেটা তারা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে। ভুলের জন্য অতি উচ্চ হারে মাশুল নেয়া কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। পাশাপাশি নতুন কাস্টমস আইন বাস্তবায়নের আগে সব অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ বলেছে, তাদের মূল দাবিগুলো আমলে নেয়া না হলেও কিছু কিছু প্রস্তাব শিল্পের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সেগুলো হলো:
১. আগে ভ্যাট আপিলের ক্ষেত্রে দাবিকৃত অর্থের ২০ শতাংশ জমা দিতে হতো; সেটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
২. ১৭টি বিভিন্ন টেক্সটাইল পণ্য রেয়াতি হারে আমদানির সুবিধা দেয়া।
৩. শিল্পকারখানায় ৫০ টন বা অধিক ক্ষমতার চিলার আমদানির ক্ষেত্রে সর্বমোট কর ১০৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আগে এটি ১ শতাংশ রেয়াতি হারে আমদানির বিধান ছিল। তারা আবারও এই রেয়াতি হারে আমদানির অনুমোদন দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
৪. নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসাহিত করতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেয়া।
৫. পলিয়েস্টার ফাইবার ও পেট চিপস উৎপাদনে ব্যবহৃত দুটি কাঁচামালের আমদানি শুল্ক ১০ ও ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।
এ সময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী।