রাত পোহালেই পয়লা ফাল্গুন। এদিনেই আবার ভালোবাসা দিবস। ফাগুনের ফুরফুরে হাওয়া আর কোকিলের কুহু কুহু গান গাওয়া যেমন থাকবে, ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও তেমন থাকবে।প্রিয়জনের হাতে কিংবা খোঁপায় ফুল পরিয়ে দিনটা শুরু করতে পারেন। তাই তো সকাল থেকেই ফুলের দোকানে, বাজারে ভিড় জমে যাবে।
১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফুল এর দাম যা ছিল, এখানে সেটাই দেওয়া হলো। তবে আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুলের দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।
দোকানে দোকানে বিক্রি হচ্ছে ফুলের রানি গোলাপ থেকে শুরু করে রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা, গাঁদা, জিনিয়া, ডালিয়া, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকা, এস্টার, লিলিয়াম, বোতাম ফুল, অর্কিড ফুল।
আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুলের জায়গা হচ্ছে শাহবাগ, শাহবাগের একজন ব্যবসায়ী মোতালেব মিয়া । তিনি জানান, এ মাসেই রয়েছে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান—রোজ ডে, পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রভৃতি।
এ কারণে ফুলের চাহিদা থাকে উল্লেখ করার মতো। দেশের নানা জেলা থেকেও ফোনের পর ফোন আসে। ফলে এই সময়ে ব্যস্ততা একটু বেশিই থাকে।
মোতালেব মিয়া বলেন, সাভার, মানিকগঞ্জ, যশোর থেকে শুরু করে চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় ফুল আসে। গভীর রাতে এগুলো জমা হয় রাজধানীর ফুলবাজারে। সকাল হতেই সেই ফুল আবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
কোন ফুলের কী দর
টকটকে লাল থেকে শুরু করে সাদা, গোলাপি ও হলুদ দেশি গোলাপ প্রতিটি ২০ থেকে ৫০ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় গোলাপি গোলাপের দাম প্রতিটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ২০টি গোলাপের একটি তোড়া ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। জারবেরা ২০ থেকে ৩০ টাকা। সাদা, গোলাপি, হলদে চন্দ্রমল্লিকা ৫ থেকে ১৫ টাকা। আমদানি করা সবুজ রঙের একথোকা চন্দ্রমল্লিকা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। ধবধবে সাদা থেকে টকটকে লাল, বেগুনি, গোলাপি, হলুদ, কমলা রঙের গ্ল্যাডিওলাস ৩০ টাকা।
ডালিয়া ২০ টাকা। রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ১০ থেকে ৩০ টাকা। চায়না জিনিয়া ৩০ থেকে ৫০ টাকা। চায়না চন্দ্রমল্লিকা ২০ টাকা। গোলাপি রঙের অর্কিড ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। জিপসি দেশি ২০ টাকা আঁটি আর আমদানি করা বোতাম ফুলের মতো বড় আকারের জিপসি ২০০ টাকা আঁটি। দেশে উৎপাদিত লিলিয়াম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
আমদানি করা লিলিয়াম ৩০০ টাকার ওপরে পড়বে। হালকা সবুজাভ হলদে রঙের সিঙ্গেল পাপড়ির দেশি লিলিয়ামে সাধারণত ঘ্রাণ থাকে না। বিপরীতে ডাবল পাপড়ির আমদানি করা লিলিয়াম মৃদু সুগন্ধযুক্ত। আবার ফুলও আসে থোকা থোকা।
আসল ফুলে কৃত্রিম রঙের ছোঁয়া
কোনো কোনো দোকানে ফুলের ওপর কৃত্রিম রং স্প্রে করে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাদা চন্দ্রমল্লিকায় আকাশি নীল রং পড়ে হচ্ছে স্নো বল। কোনোটায় পড়ছে হালকা গোলাপি কিংবা বেগুনি রং।
দেশে কালো গোলাপের দেখা না মিললেও দোকানে স্প্রে করার বদৌলতে মিলে যাচ্ছে কুচকুচে কালো গোলাপের দেখা। কেউবা চায় গোলাপে আসুক নীল রঙের দেখা, তখন সাদা গোলাপের গায়ে ওঠে স্প্রে করা নীল রঙের জামা। অনেকে আবার কয়েক রঙে রাঙানো গোলাপের তোড়াও বানিয়ে নিচ্ছেন।
সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ফুলের চেয়ে কিছুটা বাড়তি খরচ পড়ে। তবে বিশেষ দিনগুলোয় ফুলের দাম বেড়ে যায়। চাহিদার কারণেই দাম বেড়ে যায় বলে জানালেন বিক্রেতারা।
ঢাকার ফুলের বাজার
ঢাকায় বড় ফুলের বাজারে যেতে চাইলে আসুন আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনসংলগ্ন ফুলবাজার কিংবা শাহবাগে। খুচরা ও পাইকারি দরে এখানে ফুল বিক্রি চলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা। এখান থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে, এমনকি দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুল যায়। আগারগাঁও ও শাহবাগের বাইরে ফুল পাবেন তাজমহল রোড-মোহাম্মদপুর, বনানী, উত্তরা রাজলক্ষ্মী বাস স্টপেজের পাশে।
একটু দূরে যেতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ‘গোলাপ গ্রাম’খ্যাত সাভারের বিরুলিয়ার সাদুল্লাহপুরে। ঘুরে ঘুরে বেছে বেছে নিজ হাতে তুলে প্রিয়জনকে উপহার দিতে পারেন গোলাপ। পাশেই ফুলের পাইকারি বাজার আকরাইন—গোলাপের পাশাপাশি এখানে পাবেন গাঁদা আর চন্দ্রমল্লিকার দেখা।
এ ছাড়া গত ১ সেপ্টেম্বর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের কাছে বেড়িবাঁধে উদ্বোধন করা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পাইকারি ফুলের আধুনিক বাজার ও প্রসেসিং সেন্টার। তবে এখনো সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুলের বাজার বসেনি। অদূর ভবিষ্যতে সেখানেও পড়বে ফুলপ্রেমীদের পা।
আরো পড়ুনঃ মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পরও হত্যা, আসামী গ্রেফতার – র্যাব ১০