এখন ঈদ সাধারনত গরমের সময় হয়ে থাকে । সারাদিন গরম থাকে। গরমের মধ্যেও ইফতারের আগমুহূর্তে আকাশ থেকে কেমন যেন আরামের সুবাতাস বইতে শুরু করে। মনে হয় পৃথিবীর বুকে জান্নাত থেকে হাওয়া নেমে এসেছে। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পরে মহান আল্লাহ আমাদের জন্য, আমাদের জীবনে রহমত, বরকত, প্রশান্তি ও ক্ষমা দান করেন। দীর্ঘ এক বছর পর পর আমাদের মাঝে ঈদ আসে। খুশির ঈদ, ঈদ আনন্দ বয়ে আসে আমাদের জীবনে।
আনন্দ কথাটা ভাবলেই, আনন্দে মনটা ভরে যায়। তখন কত কী করতে ইচ্ছা করে। ঈদ মানেই সেই আনন্দ, যে আনন্দের বিশেষ কোনও নাম বা বিশেষণের প্রয়োজন নেই। ঈদ মানেই আনন্দ!
ঈদের আনন্দ সবার মধ্যে উচ্ছাস বয়ে যায়। অনেক বেশি কষ্টে যে মানুষটি থাকে তার মনেও থাকে খুশির উচ্ছাস। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে বন্ধু বান্ধবের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।
আনন্দিত হই, যখন দেখি, মা-বাবা, পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পরিচিতজন, দূরের কাছের, দেশের বিদেশের সবাই ঈদ আনন্দে মুখর। তখন সবার চোখে মুখে বিশেষ এক ধরনের মায়া পরিলক্ষিত হয়। সবাই সবার দিকে খুশি মনে তাকাচ্ছে। সবার জন্য সবার ভালোবাসা, মায়া, সবার জন্য সবার আনন্দ। এ আনন্দে কোন ভেদাভেদ নেই।
এই সুখটুকু ভীষন আরাম দেয় আমাকে, মনকে প্রশান্তিতে পরিপূর্ন করে তোলে। বছরের প্রতিটি দিন যদি ঈদের দিনের মতো এমন থাকতো কতোই না ভালো হতো।
কারো সাথে কোন মন মালিন্য নেই, রেষারিষি নেই, ঝগড়া বিবাদ নেই , আছে শুধু সবার জন্য সবার ভালোবাসা ও দারুন বোঝা পড়া। সবাই তো আসলে তাই চায়। প্রতিটা মানুষ ই চায় একে অপরের সঙ্গে মিলে মিশে থাকতে। আর আমাদের প্রতিদিনের চর্চা তাই হওয়া উচিত।
ঈদের সময় কর্মব্যস্ত মানুষগুলো অপেক্ষা করতে থাকে কবে ঈদের ছুটি দিবে, কবে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা হবে। বাড়ি গিয়ে প্রিয় মুখদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা যে কতটা তৃপ্তির আর আনন্দের তা ভাবতেই মন ভালো হয়ে যায়।
ঈদের সময় গ্রামের দিকে ছুটে যাওয়া প্রতিটি মানুষ এক একটি ঘুরি আর নাটাইয়ের সুতো হলো সেই টান যে টানে মানুষগুলো ঘরে ফেরে, স্বপ্ন দেখে, ভালোবাসে, সংগ্রাম করতে পারে, বাঁচতে শেখে।
ছোট বেলার ঈদ স্মৃতি মনে পড়ে এখনো। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। দেখতে পেলেই জোরে চিৎকার! সেই কথাগুলো খুব মনে পড়ে। মনে আছে, আমাদের বাসার পাশে একটি খেলার মাঠ ছিলো। সন্ধ্যায় ইফতারে শুধু পানি খেয়েই ছুটে যেতাম সেই মাঠে। ছোট-বড় সমবয়সী সবাই মিলে ঈদের চাঁদ দেখার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ভাবতাম, চাঁদটা আমিই যেনো আগে দেখতে পাই’।
যদি কেউ চাঁদ দেখতে পেতো, সে জোরে চিৎকার করে উঠতো। চাঁদ দেখা না গেলেই বাসায় চলে আসতাম। অপেক্ষা করতাম ঈদের চাদ দেখার খবর শুনার জন্য।
রোজা আসলেই অপেক্ষায় থাকতাম কখন বাবা নতুন জামা কাপড় কিনে দিবে। নতুন কাপড় নিয়ে ভাই বোনদের মধ্যে আগ্রহের কমতি ছিলো না। নতুন কাপড় লুকিয়ে রাখতাম যেন ঈদের আগে কেউ না দেখতে পারে।
ঈদের দিন খুব সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতাম। অন্যদিন ঘুম দেড়িতে ভাংলেও ঈদের দিন খুব সকাল বেলাই চোখ খুলে যেত। তার পর গোসল করে নতুন পাঞ্জাবী পরে বাবার সাথে ঈদের নামাজ পরতে যেতাম। ঈদের দিন সকাল বেলায় এলাকার সবার সাথে দেখা হতো এটা ছিলো খুব ই আনন্দের।
ছোটবেলায় সমবয়সীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোজা রাখা হতো। তখন নিজেদের মধ্যে হিসেব হতো, কে কয়টা রোজা রেখেছি। মাকে বলতাম, সেহেরির সময় যেন আমাকে ডেকে দেন। যেদিন আমাকে সেহেরির সময় ডাকা হতো না, সেদিন না খেয়েই রোজা রাখতাম। দিনের বেলায় মা পেছন পেছন খাবার নিয়ে দৌড়াতেন, কিন্তু আমি খেতে চাইতাম না
কতো সুন্দর ছিলো ছোট বেলার দিন গুলো। দিন বদলে গেছে, কিন্তু পুরানো ঈদের আবেদন আজো তেমন ই রয়ে গেছে। কেউ সেই অভ্যস্ততা ভোলেনি, ভোলেনি ছোট বেলার ঈদ আনন্দ।
বর্তমানের ইয়াং জেনারেশন আগের দিনের ঈদের ঐতিহ্যে ও আনন্দের কথা বাড়ির মুরব্বিদের কাছ থেকে শুনে শুনে একই রকম ভাবে উদযাপন করে। কিছু কিছু জিনিস কখনো বদলায় না। ঈদের আনন্দও ঠিক তেমনিই।
যান্ত্রিক যুগে কর্ম ব্যস্ততায় আজকাল হয়তো অনেক কিছুই আগের মতো করা হয়ে ওঠে না। তবুও সবাই চেষ্টা করে ছোটবেলার সেই আনন্দকে ধরে রাখতে।
সময়ের বিবর্তনে ঈদের আনন্দগুলো ঠিক ই রয়েছে তবে আনন্দগুলোর উদযাপনের মাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। যেমন আগের দিনে বাসার ছোট ছেলে মেয়েরা পাটায় বেটে মেহেদী লাগাতো এখন ছুটে যায় পার্লারে।
আগে ক্যাসেট কিংবা সিডিতে ঈদের গান বাজানা হতো, এখন সেটা ইউটিউবে বাজানো হয়। আগে সবার সাথে সরাসরিই দেখা করতে হতো। এখন তো ফেসবুক আছে, সরাসরি দেখা না করলেও চলে। সবাই ফেসবুকে একটিভ থেকে আর ফটো আপলোড করেই সময় পার করে দেয়। তারপরেও সবটাই ঈদের সরল আনন্দ।
তবে এখন একটু এডভান্টেজ ও আছে। আগের ঈদের মুহুর্তগুলো মনে আছে। আর এখন ঈদের প্রতি মুহুর্তের ছবি আছে। তবে পুরানো ঈদ গুলোর কিছু বিষয়, কিছু ছবি মনের গভীর ক্যানভাসে আপলোড করা আছে যা ফেসবুকে নেই।
আনন্দ উদযাপনের অনেক কিছু বদলে গেলেও ঈদের আনন্দ আগের মতোই সুখের আর সরল উচ্ছ্বাসের। এখনকার প্রযুক্তিতে সবাই সবাইকে খুঁজে পাই। দুরে থেকেও দুরে নয়। সেটা এক ধরনের আনন্দ। তাই প্রযুক্তিকে দূরের করা যাবে না। তবে কষ্ট করে প্রিয়জনদের কাছে যাওয়াটা অন্যরকম উপলব্ধি । প্রিয়জনদের কাছে গিয়ে সময় দেওয়া, ভালোবাসা আনন্দ ভাগাভাগি করা নিজের দায়িত্ব। দায়িত্ব অবশ্যই পালনীয় একটা বিষয়। তা পালন করতেই হয়
কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-২ ও সবার জন্য অসীম ভালোবাসা, ঈদ আনন্দ আরও প্রাণখোলা হোক, সুখে থাকুক সকল প্রাণ। এই শুভ কামনা। সকলকে জানাই ঈদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
নিউজ ঢাকা ২৪।
আরো পড়ুন: নসরুল হামিদ বিপুর নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে কেরানীগঞ্জ।