মিটফোর্ড হাসপাতাল

মিটফোর্ড হাসপাতাল এর চিকিৎসা সেবা চলছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে

মিটফোর্ড হাসপাতাল এর চিকিৎসা সেবা ফিকে হয়ে এসেছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে।

পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা তীর ঘেষে অবস্থিত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ। হাসপাতালটি সবার কাছে মিটফোর্ড হাসপাতাল নামে পরিচিত। নিন্ম আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্তদের চিকিৎসা সেবার জন্য অন্যতম ভরসাস্থল এই মিটফোর্ড হাসপাতাল । প্রতিদিন পুরান ঢাকা, কেরানীগঞ্জ ও আশেপাশে থেকে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে এ হাসপাতালটিতে।

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নিম্নবিত্ত থেকে নিয়ে শুরু করে মধ্যবিত্ত, সবার কাছে অন্ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এই মিটফোর্ড হাসপাতাল । অথচ  অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলছে এখানের চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাসা বেধেছে নানান ধরনের পোকামাকড়। নোংরা পরিবেশ রয়েছে টয়লেটগুলোতেও। হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন হওয়ায় অসোন্তষ রয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতাল এ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।

মিটফোর্ড হাসপাতাল বেসিনের সামনে ময়লার ডাটবিন

সরেজমিন মিটফোর্ড হাসপাতাল এ গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলোতে তেলাপোকা, ছাড়পোকা, মশা মাছিসহ বিভিন্ন ধরনের পোকা মাকড়ের উৎপাত। মিটফোর্ড হাসপাতাল এর জরুরী বিভাগের ঠিক পাশেই রয়েছে খোলামেলা ময়লার ডাস্টবিন। ডাস্টবিনের চারপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনা।

মিটফোর্ড হাসপাতাল ময়লা সিড়ি

ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা পথচারী ও রোগীরা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালের টয়লেটগুলোর সামনে দিয়ে যাতায়াতের সময় লোকজনকে দ্রুত নাকে কাপড় চেপে যেতে দেখা গেছে। পুরো বাথরুমের ফ্লোর স্যাতসেতে হয়ে গেছে। ওয়ার্ডগুলোর মেঝেতে টিস্যু, ফলের খোসা,তুলা কাগজের টুকরো যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভবনগুলোর দেয়ালগুলোও নোংরা। এ অবস্থাতে মিটফোর্ড হাসপাতাল কে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর ভরসার স্থান এর থেকে একটি পরিত্যাক্ত হাসপাতাল বলেই বেশী মনে হয়।  যার যত্ন নেয়ার বা দেখভাল করার মত কেউ নেই।

মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রবেশমুখে আবর্জনার স্তুপ

যেখানে সেখানে কফ থুথু পানের পিকের ছোপ। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের ফ্লোরে ফোম বিছিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে রোগীদের। এমন পরিবেশে নোংরা ময়লা মেঝেতে রোগী রাখার কারনে, সুস্থ হওয়ার চেয়ে রোগীর অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। রোগীদের বেডে বিছানো চাদরগুলোও যথেষ্ট পরিমান নোংরা। কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতাল এ সপ্তাহে ১ বার চাদর পরিবর্তন করে দেয়া হয়।মিটফোর্ড হাসপাতাল পরিষ্কার করা হয়নি রক্ত

বেশ কয়েকজন রোগী অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নকর্মীরাও ঠিক মতো কাজ করে না। তারা শুধু লোক দেখানো পরিষ্কার করে। তারা তাদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করলে হাসপাতাল আরো বেশি পরিষ্কার থাকতো।

মিটফোর্ড হাসপাতাল নোংরা বিছানার চাদর
১৮৫৮ সালে পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা তীরে প্রতিষ্ঠিত হয় মিটফোর্ড হাসপাতাল।

১২.৮ একর জায়গা উপর নির্মিত মিটফোর্ড হাসপাতাল ই ঢাকার প্রথম জেনারেল হাসপাতাল। ১৯১৭ সালে মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রথম শ্রেনীর হাসপাতাল হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। হাসপাতালটিতে বর্তমানে বেড রয়েছে ৯০০ টি। প্রতিদিন আশে পাশের প্রায় ৪ হাজার রোগী হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসে।

দিন দিন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও এখনো পরিবেশগত মান উন্নয়ন হয় নি মিটফোর্ড হাসপাতাল এর। যেখানে সেখানে আবর্জনা, নোংরা থাকার কারনে অসহনীয় পর্যায়ে পৌছেছে পরিবেশ। হাসপাতালের টয়লেটগুলো যেন রোগ জীবানু তৈরীর কারখানা। নোংরা পরিবেশের কারনে শুধু রোগীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না। রোগী দেখতে আসা আত্মীয় স্বজনদের জন্যেও প্রতিদিন নানান রোগ জীবানুর সরবরাহ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই মিটফোর্ড হাসপাতাল ।

মিটফোর্ড হসপাতাল এ সেবা নিতে আসা রোগীদের বক্তব্যঃ

শ্রাবনী আক্তার নামে ২২ বছর বয়সী এক তরুনী জানান,মধ্যবিত্ত হওয়ার কারনে নিরুপায় হয়েই সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসি। কিন্তু মিটফোর্ড হাসপাতাল এ যা পরিবেশ এখানে রোগী সুস্থ হওয়ার বদলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে। টয়লেট উপচে ময়লা পানি পরে। টয়লেটগুলো ঠিকমতো পরিষ্কারও করা হয় না। বেসিনের সামনে ময়লা ভর্তি ড্রাম। দুর্গন্ধে বেডে থাকা যায় না।

হাসপাতালের সামনে আবর্জনার স্তুপ খায়রুল হক নামে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অপর আরেকজন জানান,মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা আরো বাড়ানো উচিত। বাথরুমে গেলে বমি এসে পড়ে। বেসিনের সামনে ময়লার ডাস্টবিন রাখা। বাথরুমের ফ্লোরগুলোও স্যাতসেতে। সিট পাই নি বিধায় এখানে ফ্লোরেই ফোম বিছিয়ে রেখেছে। ফ্লোর ঠিক মতো ঝাড়– পোছা করা হয় না। এটা কি একটা হাসপাতালের পরিবেশ। হাসপাতারে পরিবেশের যদি এই অবস্থা হয় মানুষজন কোথায় যাবে। কেউ তো আর শখ করে হাসপাতালে ঘুরতে আসে না।

হাসপাতালে নোংরা পরিবেশ হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ দেখতে দেখতে প্রশাসনিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এখানকার পরিবেশ সম্পূর্ন ভিন্ন। হাসপাতালের এই অংশটি অন্যান্যা জায়গার থেকে দারুন পরিষ্কার। বেশ পরিপাটি।

মিটফোর্ড হাসপাতাল এর এই দুর্দশার কারণ কি?

হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে মিটফোর্ড হাসপাতাল এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ-উন-নবী বলেন, “আউট ডোরে সেবা নিতে আশা রোগী এবং যারা করোনার টিকা আসে তাদের জন্য ৪ টা নতুন টয়লেট নির্মান করা হয়েছে । আউট ডোরের রোগীদের অসোন্তষ থাকার কথা নয়। ভর্তি রোগী প্রতিটা ওয়ার্ডে বেড ৪০ টা হলে রোগী ভর্তি থাকে ১২০ জন। এই রোগীদের সাথে ২/৩ করে এটেন্ডনেস ও থাকে।

এ ছাড়াও তিনি আরো বলেন, “বাথরুমটা করা হয়েছে কিন্তু ৪০ জনের জন্য। কিন্তু ব্যবহার করছে ৩০০ জনের বেশি মানুষ। এতো বেশি লোক হলে তাদের মেইনটন করাও কষ্টকর। এছাড়া উন্নয়ন কাজ চলার কারনে কিছু বাথরুম বন্ধ আছে। এজন্য হয়তো একটু কষ্ট হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারনে বিছানার চাদর অনেক সময় ঠিকমত দিতে পারি না। পরিচ্ছন্নকর্মীরা ঠিকমতো কাজ করে, তবে এটেনডনেসদের কারনে হাসপাতাল ঠিক মতো পরিষ্কার থাকে না। অতিরিক্ত রোগী এবং তাদের এটেনডনেসরা হাসপাতাল অপরিচ্ছন্ন থাকার সবচেয়ে বড় কারন।

নিউজ ঢাকা ২৪  

আরো পড়ুন: ইসলামে রোগীর সেবা।

Check Also

২য় বুড়িগঙ্গা সেতু

১৭ দিন বন্ধ থাকবে পোস্তগোলা সেতু, যেসব পথে চলবে যানবাহন

সংস্কার কাজের জন্য আগামী  ১৭ দিন বন্ধ থাকবে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের অন্যতম ব্যস্ত পোস্তগোলা সেতু । …