ইউক্রেন, পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত দেশ রাশিয়ার পরে যেটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র।
রাশিয়ার কোলঘেষে থাকা এই রাষ্ট্রটির এর রাজধানী হল কিয়েভ (কিয়েভ), উত্তর-মধ্য ইউক্রেনের ডিনিপার নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯৯১ সালে সৌভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের আগ পর্যন্ত কিয়েভকে শুধু ইউক্রেন ই হয়, এমন কি রাশিয়ার ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর বলে বিবেচনা করা হতো।
ইউক্রেন এর স্বাধীনতার ইতিহাসঃ
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের ইতিহাস খুব বেশীদিনের নয়। ২০ শতকের শেষের দিকে, ১৯৯১ সাথে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ইউক্রেন রাষ্ট্রটি আবির্ভূত হয়। এর আগে দীর্ঘসময় ধরে দেশটি পর্যায়ক্রমে পোল্যান্ড-লিথুয়ানিয়া, রাশিয়া এবং ইউনিয়ন অফ সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকস (U.S.S.R.) এর ধারাবাহিক আধিপত্যের সময় পার করে। যদিও ইউক্রেন ১৯১৮-২০ সালে স্বল্প সময়ের স্বাধীনতার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল।
দুটি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে পশ্চিম ইউক্রেন এর কিছু অংশ পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং চেকোস্লোভাকিয়া দ্বারা শাসিত হয়েছিল। এরপর প্রতিষ্টাতা সদস্য হিসেবে ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হয়ে ওঠে।
১৯৯০-৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হলে, ১৯৯০ সালের ১৬ ই জুলাই ইউক্রেন এর আইনসভা সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে এবং পরবর্তীতে ১৯৯১ সালের ২৪ শে আগস্ট সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালের ১লা ডিসেম্বর একটি গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের জনগন এই সিদ্ধান্তের সাথে সম্মতি জানায় এবং এর ই মাধ্যমে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে, ইউক্রেন পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।
এ সময় দেশটি তার অফিসিয়াল নাম পরিবর্তন করে ইউক্রেন করে, এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অধিভুক্ত দেশগুলিকে নিয়ে Commonwealth of Independent States (CIS) গঠনে ভূমিকা পালন করে।
ইউক্রেন এর ভৌগলিক অবস্থানঃ
ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত এই দেশটির উত্তরে বেলারুশ এবং পূর্বে রাশিয়া। দক্ষিণে রয়েছে আজভ সাগর
র এবং কৃষ্ণসাগর। ইউক্রেন দক্ষিণ-পশ্চিমে মলদোভা এবং রোমানিয়া আর পশ্চিমে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া এবং পোল্যান্ড দ্বারা বেষ্টিত। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেন কের্চ স্ট্রেইট দ্বারা পৃথক করা হয়েছ দেশদুটিকে যা কি না আজভ সাগরকে কালো সাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে।
ইউক্রেনের আয়তন ৬০৩০০০ বর্গ কিলোমিটার (২৩১০০ বর্গ মাইল) যার বেশীরভাগ ই সমতল ভূমি নিয়ে গঠিত দেশটিতে ৯৫ ভাগ সমতল ভূমি এবং ৫ ভাগ পাহাড়ী ভূমি রয়েছে।
একনজরে ইউক্রেনঃ
- নাম: ইউক্রেইনা
- আন্তর্জাতিক নাম: ইউক্রেন
- পূর্বের নাম: কার্পাথিয়ান ইউক্রেন, ইউক্রেনীয় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র।
- রাজধানী শহর: কিয়েভ (কিভ)
- অন্যান্য শহরগুলো: Dnipropetrovsk, Donetsk, Kharkiv, Lviv, Odesa
- সরকার প্রকার: রাষ্ট্রপতি-সংসদীয়।
- স্বাধীনতা: ২৪ আগস্ট, ১৯৯১।
- সংবিধান: সোভিয়েত-পরবর্তী প্রথম সংবিধান গৃহীত হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২৮ জুন।
ইউক্রেন এর মানুষঃ
- জাতীয়তা: ইউক্রেনীয়(গুলি)
- জনসংখ্যা: ৪ কোটি ১৩ লক্ষ (২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী)
- গোষ্ঠীসমূহ: ইউক্রেনীয়, রাশিয়ান, বেলারুশিয়ান, মোলডোভান, হাঙ্গেরিয়ান, বুলগেরিয়ান, ইহুদি, পোল, ক্রিমিয়ান তাতার এবং অন্যান্য গোষ্ঠী।
- ধর্ম: ইউক্রেনীয় অর্থোডক্সি, ইউক্রেনীয় গ্রীক ক্যাথলিক, ইহুদি ধর্ম, রোমান ক্যাথলিক, ইসলাম
- ভাষা: ইউক্রেনীয় (অফিসিয়াল), রাশিয়ান, অন্যান্য
- সাক্ষরতার হার: শতকরা ৯৮ ভাগ
ইউক্রেন সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্যঃ
- প্রধান কৃষি পণ্য: শস্য, চিনি বিট, সূর্যমুখী বীজ, শাকসবজি, গরুর মাংস এবং দুধ।
- প্রাকৃতিক সম্পদ: তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ম্যাঙ্গানিজ, কয়লা, লৌহ আকরিক, পারদ, নিকেল, কেওলিন, ম্যাগনেসিয়াম, টাইটানিয়াম, গ্রাফাইট, সালফার এবং লবণ।
- শিল্প: কয়লা, বৈদ্যুতিক শক্তি, লৌহঘটিত এবং অ লৌহঘটিত ধাতু, যন্ত্রপাতি এবং পরিবহন সরঞ্জাম, রাসায়নিক এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ।
- রপ্তানি পণ্য: লৌহঘটিত এবং অ লৌহঘটিত ধাতু, জ্বালানী এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি এবং পরিবহন সরঞ্জাম, খাদ্যদ্রব্য।
- আমদানি পণ্য: শক্তি, যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম, রাসায়নিক।
ইউক্রেন এর সামরিক শক্তিঃ
“দি আর্মড ফোর্সের অফ ইউক্রেন” হলো ইউক্রেন এর সামরিক বাহিনী।
ইউক্রেন এর সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে “দি আর্মড ফোর্সের অফ ইউক্রেন” হলো প্রধান প্রতিরোধক শক্তি। সশস্ত্র বাহিনী সহ সমস্ত সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির অধীন।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী ইউক্রেনীয় স্থল বাহিনী, ইউক্রেনীয় নৌবাহিনী, ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী এবং ইউক্রেনীয় এয়ারমোবাইল বাহিনী নিয়ে গঠিত।
ইউক্রেনের নৌ বাহিনী তাদের নিজস্ব ছোট ইউক্রেনীয় নৌ পদাতিক বাহিনীর পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ইউক্রেনীয় নৌ বিমানবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ করে। ইউক্রেনীয় সী গার্ড ছিল ইউক্রেনের কোস্ট গার্ড সার্ভিস; এটি ইউক্রেনের স্টেট বর্ডার গার্ড সার্ভিসের অংশ ছিল ।
২০১৪ থেকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপের ফলস্বরূপ, ইউক্রেন এর রাষ্ট্রপতি সেই দেশের ও ব্লাস্টের গভর্নরদেরকে সরকারী প্রোগ্রাম টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ফোর্স এর অধীনে স্বেচ্ছাসেবক ইউনিট তৈরি করার জন্য কমিশন দিয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে এই ইউনিটগুলি আঞ্চলিক বাজেট থেকে আসা ন্যূনতম তহবিল পেয়েছিল এবং বেশিরভাগই অনুদানের উপর নির্ভর করত। নভেম্বর ২০১৪ এ বেশিরভাগ আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্যাটালিয়ন ইউক্রেনের স্থল বাহিনীর সাথে একীভূত হয়।
ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ড দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে কাজ করে।
সৈন্য সংখ্যাঃ
রাশিয়ার সাথে শত্রুতার পর, ইউক্রেন ২০১৪ সালে তার সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে রয়েছে,
সৈন্যঃ ২০৪০০০ জন (+৪৬০০০ বেসামরিক কর্মচারী),
বর্ডার গার্ডঃ ৫৩০০০ জন,
ন্যাশনাল গার্ডঃ ৬০০০০ জন।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে ২৫০০০০ (২১৫০০০ সামরিক কর্মী) নিয়ে গঠিত যা কি না রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর পরে এই অঞ্চলে দ্বিতীয় বৃহত্তম।
অন্যান্য রাজ্যের সামরিক ইউনিট নিয়মিত ইউক্রেন এ ইউক্রেনীয় বাহিনীর সাথে বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে অনেক মহড়া ন্যাটো সহযোগিতা কর্মসূচি পার্টনারশিপ ফর পিস-এর অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৬ সালের ৩রা জুন, মহিলাদের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ ইউনিটে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সামরিক অস্ত্রঃ
আকাশপথে প্রতিরক্ষার এবং আক্রমণ এর জন্যে ইউক্রেন এর কাছে আছে, বিমান রয়েছে মোট ৩১৮ টি, যার মধ্যে যুদ্ধ বিমান রয়েছে ৬৯ টি। এছাড়া ইউক্রেনের কাছে রয়েছে ২৬০০ টি ট্যাঙ্ক এবং ১২০০০ টি সাঁজোয়া যান রয়েছে৷ ইউক্রেন এর আর্টিলারি বন্দুক, এর সংখ্যা মোট ৩০০০ এর বেশি। ইউক্রেন এর নৌবাহিনীর কাছে রয়েছে মোট ৩৮ টি জাহাজ। তবে দেশটির কাছে কোন সাবমেরিন নেই। এছাড়া ইউক্রেন এর রয়েছে বহনযোগ্য এন্টিট্যাংক মিসাইল।
বিশেষ প্রতিবেদন ।। ২৭শে ফেব্রুয়ারী, ২০২২
নিউজ ঢাকা ২৪ – সত্য প্রকাশে সাহসী
আরো পড়ুনঃ ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ – ইউক্রেনের চার শহর রাশিয়ার দখলে