তরুন প্রজন্মের অনেকেই এখন নতুন উদ্যোগ হাতে নিচ্ছে । কেউ কেউ সফল হচ্ছে কেউ কেউ ব্যর্থ হচ্ছে । যারা সফল হচ্ছে তাঁদের সফলাতার রহস্য পত্র-পত্রিকা,ব্লগ,সোসাল মিডিয়ায় হরহামেশাই দেখা যায় । কিন্তু যারা ব্যর্থ হচ্ছে তাঁদের কি হাল ? তাঁদের বেহাল দশা তাঁরা ভিন্ন অন্য কেউ তেমন করে বোঝে না এমন কি প্রকৃত অবস্থাটা বর্ণনা করাও অন্যের পক্ষে দুষ্কর।
আমি আমার এই লেখায় সফলদের সফলতার রহস্য ভেদ করবো না । আমি ব্যর্থদের অবস্থানটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো । তাঁর আগে দেখি কেন এই প্রজন্মের তরুনরা উদ্যোগতা হচ্ছেন ।
১ উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবকরা উদ্যোক্তা হচ্ছেন ।
২ কাঠামো বদ্ধ জীবন যাপনে অনাগ্রহী যুবকরা উদ্যোক্তা হচ্ছেন । নয়টা পাচটা অফিস ও অন্যের অধীনে চাকরী মেনে নিতে পারছে না বলে অনেকে উদ্যোক্তা হচ্ছেন ।
৩ চাকরীর বাজারে দুর্নীতি, অনিয়ম ও লবিং এর দৌড়ঝাঁপ করার ইচ্ছা ও শক্তি দুটোর একটাও নাই তাই উদ্যোক্তা হচ্ছেন ।
৪ মানসম্মত জীবন যাপনের ব্যয় বৃদ্ধি ও অন্যন্য পেশায় সেই অনুযায়ী আয়ের দুরবস্থা দেখে হতাশায় ভোগে উদ্যোক্তা হচ্ছেন ।
৫ ঠিক মত পড়ালেখা করতে না পারার হতাশা থেকে উদ্যোক্তা হচ্ছেন।
৬ সফলদের গল্প শোনে উদ্যোক্তা হচ্ছেন ।
৭ পারিবারিক ঐতিহ্য ব্যবসা। তাঁদের অনেকেই পুরাতন ব্যবসার হাল ধরে তাঁকে সামনে এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তা হচ্ছেন।
যে যেই দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে উদ্যোক্তা হচ্ছেন তাঁরা হচ্ছেন । মোদ্দা কথা নতুন প্রজন্মের উদ্যোগ গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে । এই প্রবণতা বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ তথ্যের অবমুক্তি ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন। প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ এই ক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক । জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও উপর্যুক্ত কারণ সমুহের দরুন আমাদের দেশে নবীন উদ্যোগতার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এই ক্রমবর্ধমান উদ্যোগতা গোষ্ঠীর অধিকাংশ ব্যর্থ । আমার এই লেখার মুল প্রতিপাদ্য বিষয় তাঁদের ব্যর্থতার কারণ খুজে বের করা । আসুন দেখি কেন তাঁরা ব্যর্থ হচ্ছে।
১ নতুনদের ব্যবসায় ব্যর্থতার প্রধান কারণ তাঁরা উদ্যোগকে ভালবাসে উদ্যোক্তা হচ্ছেন না । তাঁরা অনেকেই বাধ্য হয়ে আসছেন বা বিকল্প পেশা হিসেবে উদ্যোক্তা হচ্ছেন । যেহেতু চাকরীতে এই সমস্যা বা যেহেতু চাকরী পাচ্ছি না সুতরাং ব্যবসা করবো এমন মনমানসিকতাও দেখা যায়।
এই মানসিকতা থেকে উদ্যোগতা হলে ব্যর্থতা স্বাভাবিক । ছোট বেলা থেকে সপ্ন দেখে আসছেন, এই চাকরী করবো, সেই চাকরী করবো, তাতে তাঁর কল্পনার জগতে ওঁই চাকরীর সাথে তাঁর প্রেম হচ্ছে । আমি অনেক কে দেখেছি আর্মিতে চাকরী করার সপ্নে বিভোর হয়ে “বুকের ছাতি” ফুলিয়ে রাস্তায় হাটে, সর্বদা “মাথার চুল” ছোট করে ছাটে । বিসিএস ক্যাডার হবে এই স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজের মধ্যে একটা অযাচিত গাম্ভীর্য ধরে রাখে । বিভিধ কারণে যারা তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারে না তখন ব্যবসায় আসে । তখন বিষয়টা আসলে কি দ্বাড়ায় ? রাত কাটাচ্ছি বউয়ের সাথে আর মনের অলিন্দে নাচে পার্বতী।
বলি ভাই প্রেমহীন এই জগতে কোন সপ্ন পূরণ হয় ? শচিন টেন্ডুকার ক্রিকেটকে ভালো না বাসলে কি শচিন হইতো ? আপনি কি এমন কোন সফল ব্যক্তির কথা জানেন যে সে তাঁর কর্মকে ভালো না বাসে সফল হইছেন ? আমার জানা নাই।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের কথা বাদ দিলাম। নিজের দিকে খেয়াল করুণ। টিন এজ (১২/১৩) থেকে আপনি (২০/২১) পর্যন্ত অন্য একটা পেশাকে ভালোবেসে আসছেন । আর ২৫/২৬ এসে উদ্যোক্তা হবেন মন স্থির করলেন। আপনি ৩০ এ সফল হতে চান । তাও সে কাজে আপনার ভালোবাসা নাই । বিষয়টা হাস্যকর দেখায় না?
উদ্যোগে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র উদ্যোগের প্রতি ভালবাসা । তাই ব্যবসায় সফল হতে হলে ব্যবসাকে ভালবাসুন । সে যত ছোট ব্যবসাই হোক ।
২.আমার প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার একটা কথা বলেছিলেন “বড় হওয়ার কোন শর্টকাট রাস্তা নাই ।” আমাদের নতুন উদ্যোগতাদের মধ্যে অনেকেই উদ্যোগ গ্রহণ করেই সফল হতে চান । রাতারাতি সফল হওয়ার চেষ্টা তাঁদের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় । মনে রাখবেন অধিক চাপ মাথায় নিয়ে খেললে অনেক ভালো ব্যাটসম্যানও ভুল খেলে । ব্যবসায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্যের বিকল্প নাই । রাতারাতি সফল হওয়ার বাড়তি চাপ না নিয়ে ধৈর্য ধরুন, সঠিক পরিশ্রম করুন, সফল হবেন।
৩ অনেকেই উদ্যোগের ধরণ নির্বাচন করতে ভুল করে । আপনার ভালো ধারণা না থাকলে সেই কাজে না যাওয়াই উত্তম । নিজের ভালো ধারণা না থাকলেও আপনার বিস্বস্থ ও খুব কাছে মানুষ কারো যদি অভিজ্ঞতা থাকে তবে তাঁর সাহায্য ও পরামর্শ নিন।
৪ সফল উদ্যোগ মানে রয়ালিটি । রয়ালিটি মানে অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজে শিকার করা । এই রয়ালিটি সুখ সারাজীবন পেতে চাইলে আগে নিজের কাধে বন্দুক রেখে অন্যকে গুলি করতে দেন । আপনি যে সেক্টরে ব্যবসা করতে চান সম্ভব হলে সেই সেক্টরে আগে কিছুদিন অন্যের অধীনে চাকুরী করুণ । এবং সেই চাকুরীর সময়টাকে আপনার প্রশিক্ষণ হিসেবে নিন ।
৫ ব্যবসা মানে ঝুকি । ব্যবসায় নেমে আপনি ফতুর, রাজা দুটোই হতে পারেন । এই দুটো ফলাফলকেই মেনে নিতে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ফতুর হলে সেই সময়ের কস্ট মেনে নেওয়ার মানসিকতা নিজের মধ্যে রাখুন।
৬ উদ্যোগতার ব্যর্থতা বলে কিছু নেই ।উদ্যোগ গ্রহণ করাই উদ্যোক্তার সফলতা। বাকিটা তাঁর ফসল। সমাজের বেধে দেওয়া সময়ে সফল না হলেই আপনি অনেক কিছু হারাতে পারেন ।
৭ ব্যবসার ক্ষেত্রে একনিষ্ঠা একান্ত প্রয়োজন । গার্লফ্রেন্ডের মতো ব্যবসা বার বার চেঞ্জ করবেন না । অন্তত সফল না হওয়া পর্যন্ত সে ব্যবসায় লেগে থাকুন।
ব্যবসায় যারা ইতোমধ্যে নেমে গেছেন তাঁরা জেনে রাখুন উদ্যোগ শুধু আপনার জীবিকা নয় , আপনার শ্রেনী শৃঙ্খল ভাঙার হাতিয়ার।
একটি প্রজন্ম একটি সমাজ শ্রেণীকে অতিক্রম করবে এটা স্বাভাবিক । এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম । মানব জীবনের লক্ষ্য তাই হওয়া উচিত। একজন নিম্নবিত্ত কৃষকের ছেলে পড়ালেখা শেষ করে চাকুরীজীবি হতেই পারে । অর্থাৎ নিম্নবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত হবে । এমন কি সুবিধাজনক চাকুরী না হলে আবার নিম্নবিত্তও হতে পারে। কেননা জীবন যাপনের লাগামহীন খরচ ও আমাদের দেশের মত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির দেশে আপনার চাকুরীর বেতন বৃদ্ধির হার, ব্যয় বৃদ্ধির তুলনায় যৎসামান্য । দীর্ঘদিন সফলতার সাথে চাকুরী করে আপনি একটি শ্রেনী অতিক্রম করে নিম্ন বিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত হতে পারেন।
আপনার উদ্যাগ সফল হলে আপনি একাধিক শ্রেণী অতিক্রম করতে পারবেন অতি সহজে । সমাজে এমন গল্প ভুড়ি ভুড়ি । মাথায় করে তেল বেচতে বেচতে এখন সময়ের সবচেয়ে দামী গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ান আর তাঁর সহপাঠী এখনো অফিসে মাথা ঠুকে সংসার চালাতে হিমশিম খায় । আপনাকে এই শ্রেনী শৃঙ্খল ভাঙাতে হলে যুদ্ধ করতে হবে । আমাদের দেশের এটা আরো কঠিন । কাঠামো বদ্ধ জীবনযাপন ও পেশা নির্বাচন এই চিন্তার বাইরে আমাদের অভিবাবকদের মন এখনো যায় নাই । আপনাকে পথ চলতে হবে বৈরী স্রোতে একা । সাহস হারাবেন না। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। সাফল্য আসবেই।
জয় হোক সকল উদ্যোগতার।