সজিবুল ইসলাম হৃদয়ঃ নাটোর জেলা শহরের অদূরে পিটিআই মোড় সংলগ্ন বড় হরিশপুর ইউনিয়নের বড়ভিটা বিল এখন হাজার হাজার অতিথি পাখি বা পারিযায়ী পাখির মেলায় রুপান্তরিত হয়েছে।
পাখির কিচির মিচির ডাক, মুক্ত আকাশে পাখীর ডানা মেলে উড়ে চলা, খাদ্যের সন্ধ্যানে যেখানে সেখানে পাখীর অবাধ বিচরণ দেখতে কার না ভাল লাগে! আর অতিথি বা পারিযায়ী পাখি হলে তো কোন কথাই নেই। এমনই হাজার হাজার অতিথি পাখির দেখা মেলে এখন বড়ভিটা বিলে।
এসব অতিথি পাখির অাবস্থল এখন বড়ভিটা বিল । অবাধে বিচরণ করে এসব অতিথি পাখি প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে চলেছে নীরবে। প্রতিবছর এখানে অতিথি পাখির সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে।
নাটোর জেলায় হাওর-বাওর না থাকলেও রয়েছে ছোট বড় বেশ কয়েক টা বিল। এখানে অতিথি পাখিদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতের সময় প্রতিবছর হাজার হাজার অতিথি পাখির দেখা মেলে এইসব বিলগুলোতে। মূলত সোল্লি, বদর, লালমোন, শামুকখোল, বক, বালিহাঁস, কাইয়ুমসহ নানা প্রজাতির পাখির কিচির মিচির ডাকে মুখরিত থাকে বড়ভিটার এই বিলের সর্বত্র। বিলের দেশী ছোট ছোট মাছই মূলত এসব পাখির প্রধান খাদ্য।
বড়ভিটা বিলে প্রতিদিনই সকাল-বিকাল অনেক দর্শনার্থীই আসেন এই পারিযায়ী পাখীর কলতান, মুক্ত নীলাকাশে রাশি রাশি পাখির ডানা মেলে উড়ে চলা, আবার বিলের পানিতে নামা, খাবার সন্ধানের মোহময় দৃশ্য উপভোগ করতে। মনের অজান্তেই কিংবা অতি উৎসাহ আর ভাল লাগায় পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে অতিথি পাখীর অবাধ বিচরণের মনোমুগ্ধকর, মোহময় দৃশ্য ধারনের লোভ সম্বরণ করতে পারেন না দর্শনার্থীরা। বিকালে এখানে এসে অনেককেই কোলাহল মুক্ত, প্রাকৃতিক মুক্ত পরিবেশে অতিথি পাখির প্রেমে হাবুডুবু খেতে দেখা যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও ঘুুুুরতে অাশা পাখি প্রেমীদের ধারণা বর্তমানে বড়ভিটা বিলে বিচরণ করা পারিযায়ী পাখির সংখ্যা ৫-৬ লক্ষ। বিগত ৩/৪ বছর আগেও নাটোর শহরের পাদদেশে অবস্থিত বড়ভিটা বিলে এত পাখি দেখা যায়নি। । চলতি বছর হঠাৎ করে এখানে বেড়েছে এসব অতিথি পাখির সংখ্যা।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বড়ভিটার এই বিলের অতিথি পাখি পরিদর্শনে গিয়ে এত পাখি একসাথে দেখে উচ্ছসিত, রোমাঞ্চিত হয়ে তিনি নিজে মোবাইল ফোনে নীলাকাশে পাখির অবাধ বিচরনের দৃশ্য ধারন করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেই ভিডিও ও ছবি আপলোড করেন। সেখানে অবস্থানকালেই সাংবাদিকদের সামনে তিনি বড়ভিটা বিলকে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম ঘোষণা করেন। সেই সাথে এখানে পাখির অভয়ারণ্য তৈরী ও সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন।
একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের সফর সঙ্গী অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজ্জাকুল ইসলাম আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে জানান, তিনি একসঙ্গে এত পাখি কখনও দেখেননি। নিজের ফেসবুক পেজে এ্যামাইজিং বলে অভিহিত করে একটি ভিডিও পোস্ট দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, এইসব পাখিরা যাতে এখানে অবাধে বিচরণ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখেন। এর আগে অনেক শিকারীরা বন্দুক, জাল, ফাঁদ দিয়ে এইসব অতিথি পাখী শিকার করতে এসেছে কিন্তু তারা পাখি শিকার করতে দেয়নি। এজন্য শিকারীদের সাথে ঝামেলা হয়েছে, অনেক হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই প্রশাসন যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় তবে এই অতিথি পাখি সংরক্ষনে আর কোন সমস্যা থাকতো না।
এছাড়া পাখি প্রেমীরা, খুব দ্রুতই পাখির অভয়ারণ্য তৈরী ও সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
আরো পড়ুন: বিপুল ইয়াবা সহ র্যাবের হাতে.