বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা এখন প্রায় ১১ লাখে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে অব্যাহত আছে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ।
এছাড়া ঢোকার অপেক্ষায় বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন কোনারপাড়া জিরো পয়েন্ট নোম্যানস ল্যান্ডে প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে গেল পহেলা মার্চ মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্তে সৈন সমাবেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে পুলিশ ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে যৌথ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের কাছে প্রথম পর্যায়ে ৮ হাজার ৩২ জন নাগরিকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেয়া হয়।এই প্রতিবেদনে প্রায় ৪০ হাজার অনাথ ও এতিম শিশু পুনর্বাসনে পৃথক আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ ত্রাণ ও অবকাঠামো সহায়তার বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হয়। সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি ৭৬০ কোটি টাকার ৩শ’টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ১১৬টি এনজিও।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান রোববার যুগান্তরকে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সম্প্রতি জেনাভায় একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। একই সঙ্গে মিয়ানমার সরকার যাতে তাদের নাগরিকদের দ্রুত ফেরত নেয়, সেজন্য আমাদের সরকার আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রেখেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই পরিস্থিতিতে তাদের এখানে আশ্রয় না দিলে বড় ধরনের মানবিক সংকট তৈরি হতো। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত মানবিক একজন মানুষ। তাই তিনি এসব নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এজন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তিনি ভূয়সী প্রশংসিত হয়েছেন।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের তুলনায় ফেরত পাঠানোর প্রথম তালিকার সংখ্যা একেবারে নগণ্য। তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের যথাযথ নিরাপত্তা ও মর্যাদা দেয়ার বিষয়ে কার্যত মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক বৈঠকের পর মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে সাংবাদিকদের জানান, প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের খুব শিগগির রাখাইনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। যদিও বিশ্লেষকদের কেউ এ আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না।
সীমান্ত পরিস্থিতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনারপাড়ায় বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সীমান্তে কাঁটাতারের কাছাকাছি এলাকায় সৈন সমাবেশ করার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কোনারপাড়া জিরো পয়েন্টে নোম্যানন্স ল্যান্ডে ৫ হাজার ৮৬৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক এখনও অবস্থান করছে।
সূত্র জানায়, জিরোলাইন থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তমরু সীমান্তে বৈঠক করে চাপ সৃষ্টি করা হয়। জবাবে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও এখনও কিছুই করেনি। বরং সেখানে তাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত চার পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা এখন ১০ লাখ ৯৬ হাজার ১৫৬ জন। এর মধ্যে ২ লাখ অবস্থান করছে রামু, কক্সবাজার পৌরসভাসহ বান্দরবান ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং-বালুখালীতে এবং টেকনাফ উপজেলায় ৮ লাখ ৯৬ হাজার ১৫৬ জন।
এরা অবস্থান করছে হাকিমপাড়া, জামতলী, পুটিবুনিয়া, কেরনতলী, উনচি প্রাং, লেদা আলীখালী, শামলাপুর, নয়াপাড়া, জাদিমুরা ও দমদমিয়া এলাকায়। এখন পর্যন্ত ক্যাম্প করা হয়েছে ১৪টি, ব্লক আছে ২৩টি। ক্যাম্পের জন্য নির্ধারিত জায়গার পরিমাণ ৪ হাজার একর।
২ লাখ শেল্টার বা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর (জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা), আইওএম (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন) এবং এসিএফের (অ্যাকশন এগেইনেস্ট হাঙ্গার) সহায়তা অবশিষ্ট সেল্টার নির্মাণ অব্যাহত আছে।সরকার এবং দেশীয় বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রাপ্ত ত্রাণ বিতরণের মধ্যে রয়েছে সরকারি চাল ৪৯০ মেট্রিক টন, অন্যান্য খাত থেকে পাওয়া চাল ২ হাজার ১১৪ মেট্রিক টন, ডাল ২০ মেট্রিক টন, তেল ৭৬ হাজার ৩২৬ লিটার, লবণ ২৮৫ মেট্রিক টন ও চিনি ৩৮৪ মেট্রিক টন।
এছাড়া সরকারি জিআর ক্যাশ দেয়া হয়েছে ৩০ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকা, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে দেয়া হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৬ টাকা। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক।
সূত্রঃ ডেইলি বাংলা.নেট