কুড়িগ্রাম প্রতিনিধী : দায়িত্বে অবহেলা ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে ফোনালাপে দুর্ব্যবহারের কারনে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারসহ ৪কর্মকর্তা ও ১ কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপের কারনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার সরকারী কর্মসুচিকে পুঁজি করে স্থানীয় কিছু দালাল দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারের সাথে যোগসাজোস করে বিদ্যুৎ নিতে আগ্রহী মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ‘ওপেন সিক্রেট’ এ দুর্নীতির বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকলেও তাদের নিরবতা ছিল রহস্যজনক।
জানা গেছে গত ৩০ মার্চ দুপুরে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে পল্লী বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। এতে বিপুল সংখ্যক গ্রাহক বিদ্যূৎ সংযোগ বিচ্চিছন্নের কারনে অন্ধকারে থাকে। কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পারলেও গত সোমবার ঘটনার ৪ দিন পরও বেশ কিছু এলাকা অন্ধকারেই থেকে যায়। স্থানীয় জনৈক একজন গ্রাহক সোমবার রাতে বিদ্যূৎ এর বহাল অবস্থার সর্বশেষ খবর জানার জন্য নাগেশ্বরী জোনাল অফিসের অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করেন। এ সময় দায়িত্বে থাকা এলটি আমজাদ হোসেন তার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ঐ গ্রাহক তার সাথে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মচারীর দুর্ব্যবহারের বিষয়টিসহ পল্লী বিদ্যুতের সাম্প্রতিক সীমাহীন দুর্নীতি ও কর্তব্যে অবহেলার ঘটনা তার পরিচিত একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান। তিনি কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সার্বিক অবস্থা বিদ্যুৎ,জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে অতিরিক্ত সচিবকে অবহিত করেন। তিনি বিষয়টি জানার পর পরিচয় গোপন রেখে নাগেশ্বরী জোনের ঐ অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করলে ঐ কর্মচারী তার সাথেও অসদাচরন করেন। এরপর তিনি আরইবি’র চেয়ারম্যানকে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুতের সার্বিক বিষয় অবহিত করেন। এর পরই তিনি নড়েচড়ে বসেন। কর্তব্য পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে আরইবি’র চেয়ারম্যান গত মঙ্গলবার বিকেলে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেলারেল ম্যানেজার মোঃ আলীহোসেন, নাগেশ্বরী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ আসাদুজ্জামান, এজিএম (ও এন্ড এম)মোঃ খোরশেদ আলম, এলটি আমজাদ হোসেনকে ও ভুরুঙ্গামারী এরিয়া অফিসের এজিএম (ও এন্ড এম) মোঃ বাজলুল করিমকে বরখাস্ত করে তাৎক্ষনিক প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এ ছাড়াও ঘটনা তদন্তের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেন। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের বিষয়টি জানাজানি হলে পল্লী সমিতিতে কর্মরত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও অধিকাংশ কর্মচারীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে কুড়িগ্রাম জেলার গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে সরকারের বিদ্যুৎ বিতরণ কর্মসুচীর সুযোগে এক শ্রেনির স্থানীয় দালাল,ঠিকাদার ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তারা ঠিকাদারের সহায়তায় মাষ্টার প্লানের আওতায় থাকা আগ্রহী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে দালালদের মাধ্যমে নিরবে চাঁদাবাজী করছে। এ সব ব্যাপারে স্থানীয় সাধারন মানুষ প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদের লাইন দেয়া হবে না বলে হুমকী দেয়া হচ্ছে। উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের কাশিয়াগাড়ী, কৈ-পাড়া, নাওড়া নতুন গ্রামে ২০৭ নম্বর লটের ঠিকাদার শামসুল (জামাই) এর মাধ্যমে সেখানে স্থানীয় দালাল লিপন, সুজন ও উজ্জল এর মাধ্যমে গ্রাহক প্রতি ২হাজার ২শ থেকে ৩হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। নাওড়ার নতুন গ্রামের কাফীর সাথে যাদুপোদ্দার গ্রামের একটি সিন্ডিকেট বাহিনীর গ্রাহক প্রতি ৫ হাজার টাকা প্রদানের নন-জুডিসিয়াল ষ্টাম্পে চুক্তি হয়েছে বলে একটি সুত্র জানিয়েছে। এ সব এলাকার প্রায় ৪শ নতুন বিদ্যুৎ গ্রাহক দালালদের প্রচন্ড চাপের মূখে রয়েছে। এছাড়াও উলিপুর জোনাল অফিসে সব সময় দালালদের দৌরাত্বের কারনে সাধারণ গ্রাহকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। দালালদের টাকা না দিলে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে না বলে প্রকাশ্যে হুমকী দেয়া হচ্ছে। একই অবস্থা জেলার সর্বত্র বিরাজ করছে।
এতে করে সরকারের বিনা খরচে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার কর্মসুচী প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ আথিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেলারেল ম্যানেজার মোঃ আলী হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে (০১৭৬৯৪০০০৪২) যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।