পদ্মা সেতু ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু বৃহস্পতিবার দুই প্রান্ত ছুঁয়েছে। দেশের যোগাযোগের ইতিহাসের এই বিশেষ দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশের মানুষ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এমন অভিমত ব্যক্ত করছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং জনপ্রতিনিধিরা।
তারা বলছেন, এ সেতুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
শুক্রবার অসংখ্য মানুষ ছুটে আসে পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা প্রান্তে। তারা সেতুর সংযোগ সড়ক, রেল প্রকল্প ও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সময় কাটান। দূর থেকে সেতু দেখে তারা ফিরে যান। নিরাপত্তা ভেদ করে অনেককে দেখা গেছে নাওডোবায় সেতুর প্রান্তে সেলফি তুলছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যান বসানো উপলক্ষে দিনভর জাজিরার নাওডোবা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পদ্মা নদী ছিল নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে। সাধারণ মানুষের প্রবেশ ছিল সংরক্ষিত। প্রশাসনের এই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির এই বিশাল অর্জনকে উদ্যাপন করে জাজিরার মানুষ। তারা আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর উদ্যোগে এ উৎসবের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সন্ধ্যায় এ আয়োজন করা হয়। নাওডোবায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার পাশে সেতুর সংযোগ সড়কে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত চলে এ উৎসব।
শুক্রবার ঘুরতে আসা তরুণদের একটি দল বলে, ‘আমরা ভাবতেও পারছি না নিজেদের টাকায় এত বড় অবকাঠামো বানাতে পারব। বিজয়ের মাসে এমন বিজয় আমাদের উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত করেছে। কাল আসতে পারিনি, ইতিহাসের সাক্ষী হতে আজ এসেছি’।
জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের প্রাণের দাবি ছিল। জাজিরায় সেতু নির্মাণের জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হয়েছে, অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। আজ সেই স্বপ্নের সেতুটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে’।
শরীয়তপুর–১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, ‘পদ্মা নদী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে কষ্টই দিত। এখন আমাদের কষ্টের দিন শেষ হওয়ার পালা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হওয়ায় আমরা গর্বিত। করোনার কারণে ব্যাপকভাবে উদ্যাপন করতে পারিনি’।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানো হয়। প্রথম স্প্যান থেকে শুরু করে ৩৯তম স্প্যান বসানো পর্যন্ত সময় লেগেছে তিন বছরের ওপর।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।