গতকাল ঐতিহাসিক কার্ডিফে, আগে ব্যাট করতে নেমে ২৬৬ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ দলকে । কিন্তু, ৩৩ রানের গন্ডি পেরুনোর আগেই বাংলাদেশ শিবিরে একে একে ৪ টি উইকেট এর পতন। তখন কে ভেবেছিলো যে এখান থেকেই আবার ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ? কে ভেবেছিলো,আজ বাংলাদেশ রচনা করবে নিউজিল্যান্ড বধ এর নতুন এক ইতিহাস? কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইতিহাস রচিত হলো। আর সেই ইতিহাস এর নেপথ্যে রইলো সাকিব আর মাহমুদুল্লাহ নামের দুটি নির্ভরযোগ্য নাম।।

গতকাল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে কার্ডিফের মাটিতে নিউজিল্যান্ড এর বিপক্ষে খেলতে নামে বাংলাদেশ। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই ছিলো নিউজিল্যান্ড এর। অসামান্য তবে বিপর্যয় টা আসে ৪১ ওভার শেষে। যদিও বাংলাদেশ এর জয়ের পেছনে সাকিব আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অবদান সবচেয়ে বেশী। তবে ক্যাপ্টেন মাশরাফি ও কম যান না। তার বিচক্ষণ ও সাহসী সিদ্ধান্তে বোলিং এ আসেন মোসাদ্দেক হোসেন। যদিও ম্যাচের শেষের দিকে অফ স্পিনারকে প্রথমবার বোলিংয়ে আনা ছিল দারুণ সাহসী সিদ্ধান্ত। তবে, সেই সিদ্ধান্তই তৈরি করে দিল বাংলাদেশের জয়ের পথ।মাত্র ৩ বলের মধ্যে ব্রুম ও কোরি অ্যান্ডারসনকে সাজঘরের পথ দেখান মোসাদ্দেক। এরপর ফেরালেন জিমি নিশামকেও। ৩ ওভারের এ বিধ্বংসী বোলিং শেষসময়ের রান আটকে রেখেছে অনেকটা। শেষ ১০ ওভারে তুলতে পারে তারা মাত্র ৬২ রান।
২৬৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ০ রানেই ফর্মের তুঙ্গে থাকা তামিম ইকবাল কে আউট হতে দেখে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশী ভক্তরা। এরপর মাত্র ৩ রান করে আউট হন সৌম্য ও । সাব্বির আর মুশফিক ও যখন মাত্র ৮ আর ১৪ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন, তখন জয়ের আশা অনেকটাই ম্লান।কিন্তু ঠিক তখনি সাকিব আল হাসান মনে করিয়ে দিলেন যে আমাদের দলেই আছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। পিছিয়ে থাকলেন না প্রয়োজন এর সময় দলের হাল ধরা মিঃ কুল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও। দুজনে মিলে রচনা করলেন নতুন মহাকাব্য। ক্রিকেট মহাকাব্য।

সাকিব আর মাউমুদুল্লাহ রিয়াদের কার্ডিফ মহাকাব্যঃ
গতকাল চতুর্থ উইকেট এর পতনের পর জুটি বাধেন সাকিব আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দুজনের চমৎকার বোঝাপড়া আর হিসেবী ইনিংস খেলে মাত্র ১০৭ বলে ১০০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন এই দুই খেলোয়াড়। ২০০ রানের পার্টনারশিপ টা আসে আরো দ্রুত। মাত্র ২০৪ বলের ব্যয়। সাথে দুজনই প্রায় একই সময়ে করলেন সেঞ্চুরী। শেষপর্যন্ত পার্টনারশিপ যখন ২২৪ রান তখন ট্রেন্ট বোল্টকে জায়গা বানিয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড সাকিব। কিন্তু মাত্র ১১৫ বলে ১১৪ রান এর বিশাল ঝুলি নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। বাংলাদেশ ওয়ানডে দল এর সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ এটি। সাথে প্রথম দুইশ রানের পার্টনারশিপ ও। এর আগে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ এর রেকর্ড ছিলো তৃতীয় উইকেট জুটিতে তামিম-মুশফিকের। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে ১৭৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন এ দুজন ব্যাটসম্যান। এছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এখন দ্বিতীয় সেরা জুটি এটি। ম্যাচ শেষে সাকিব আল হাসান কে ম্যান অফ দা ম্যাচ ঘোষনা করা হয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৬৫/৮ (গাপটিল ৩৩, রনকি ১৬, উইলিয়ামসন ৫৭, টেলর ৬৩, ব্রুম ৩৬, নিশাম ২৩, অ্যান্ডারসন ০, স্যান্টনার ১৪*, মিল্ন ৭, সাউদি ১০*; মাশরাফি ০/৪৫, মুস্তাফিজ ১/৫২, তাসকিন ২/৪৩, রুবেল ১/৬০, সাকিব ০/৫২, মোসাদ্দেক ৩/১৩)।
বাংলাদেশ: ৪৭.২ ওভারে ২৬৮/৫ (তামিম ০, সৌম্য ৩, সাব্বির ৮, মুশফিক ১৪, সাকিব ১১৪, মাহমুদউল্লাহ ১০২, মোসাদ্দেক ৭; সাউদি ৩/৪৫, বোল্ট ১/৪৮, মিল্ন ১/৫৮, নিশাম ০/৩০, স্যান্টনার ০/৪৭, অ্যান্ডারসন ০/১৯, উইলিয়ামসন ০/১৯)।