সন্তান হয় না — এমন দম্পতিরা নেদারল্যান্ডের এক নামী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। নারীরা নিজেরাই শুক্রানুদাতাকে নিয়ে আসতেন ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) করানোর জন্য ।সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দেখা গেল,রোগীর জন্ম গ্রহন করা সন্তান দেখতে হুবহু ওই ডাক্তারের মতোই। এমন কয়েকজন নারী এ অভিযোগ করেছেন। কারণ, ওই ডাক্তার নির্দিষ্ট দাতার শুক্রাণুর পরিবর্তে রোগীর গর্ভে নিজের শুক্রাণু প্রতিস্থাপন করতেন।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস নামক এক মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেদারল্যান্ডসের আইভিএফ বিশেষজ্ঞ জ্যঁ কারবাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ২২টি পরিবার। কারবাত ওই হাসপাতালের পরিচালক ও ডাক্তার ছিলেন।
আদালতে অভিযোগকারীরা আলোচিত ঐ ডাক্তারের ডি.এন.এ পরীক্ষা করানোর আবেদন করেছেন। তবে দু:খের ব্যাপার হচ্ছে ডাক্তার কারবাত আর পৃথিবীতে নেই। গত মাসে ৮৯ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন।
আদালতে দায়ের কৃত প্রতিবেদনে বলা হয় , ডাক্তার কারাবত কয়েক দশক ধরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। রোগীর গর্ভে শুক্রানু বদলের ঘটনা হয়তো তিনি অনেক আগের থেকেই করতেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালটি চালু থাকা অবস্থায় প্রায় ৬০ জন সন্তানের জন্ম হয়েছে কারবাতের শুক্রাণু দিয়ে।
অভিযোগ জানানো নারীদের মধ্যে ৩৬ বছর বয়সী এক মনোবিদ ডা: ও আছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নিজেদের ডাক্তার কারাবাতের শুক্রাণুর কারণে জন্ম নেওয়া সন্তান হিসেবে দাবি করা নারী ও পুরুষের সংখ্যা ১২ জন। তাঁদের বয়স আট থেকে ৩৬ বছর। আর কারবাতের তত্ত্বাবধানে আইভিএফ পদ্ধতিতে মা হওয়া ১০ নারীর সন্তানেরা এখনো অনেক ছোট।
১৯৮০ সাল থেকে ২০০৯ প্রায় ২৯ বছর কারবাত একটি শুক্রাণু ব্যাংক পরিচালনা করতেন। তাঁর ওই হাসপাতালের জন্ম নেয়া সন্তানের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। ২০১৫ সালে নীতিগত কারনে বন্ধ হয়ে যায় ওই হাসপাতাল ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মনিয়েক ওয়াসেনার গেল কয়েক বছর আগে বাড়িতে চিকিৎসক কারবাতের ছবি দেখে আতকে উঠেন । দেখতে প্রায় একই রকম তাঁরা। কারবাতই যে তাঁর জন্মদাতা বাবা এ থেকে তিনি নিশ্চিত হন। কারবাতের সঙ্গে দেখাও করেছেন তিনি একদিন। সব কিছু শুনার পর কারবাত তাঁকে বলছিলেন, ‘তোমার হাত দেখাও, সম্ভবত তুমি আমার ই সন্তান হবে।
কারাবাতের নামে মামলা করেন কয়েকজন। আইনজীবী লরা বস এই মামলাটি পরিচালনা করছেন। সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক একটি শিশু অধিকার সংস্থার জন্য তিনি কাজ করেন।তিনি বলেন আমরা একটি মামলা করেছি তার কারণ হচ্ছে সমাজে তাঁর প্রকৃত বাবার পরিচয় জানার অধিকার সব সন্তানের ই আছে।
ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডাম একাডেমিক মেডিকেল সেন্টারের সেন্টার ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোয়েরড রেপিং বলেন, ২০০৪ সালে নেদারল্যান্ডসে একটি আইন পাস হয়েছে। ওই আইনে বলা হয়েছে, শুক্রাণুদাতার শুক্রাণু থেকে কোনো সন্তানের জন্ম হলে ওই সন্তানের বয়স ১৬ বছর হলেই তাকে তা জানাতে হবে।
তথ্য: প্রথম আলো।