দেশের সকল সাধারণ মানুষ এর নিরাপত্তা রক্ষা আর তাদেরকে সব ধরণের হয়রানি থেকে রক্ষার দায়িত্ব এদেশের পুলিশ প্রশাসন এর। কিন্তু সে পুলিশ প্রশাসন এর উপরেই যখন আসে চাঁদাবাজি আর হয়রানি করে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তখন দেশের আম জনতার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ ব্যবসায়ী, গ্রামবাসী। এছাড়া, ভারত ফেরত বাংলাদেশি ও ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রী আটক করে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে উক্ত থানার এসআই নূর আলমের বিরুদ্ধে। বিভিন্নভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে কনস্টবল থেকে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পাওয়া পুলিশের এই এস.আই হয়ে উঠেছেন অঢেল সম্পত্তির মালিক। আর সেই সম্পত্তি দিয়েই বেনাপোলের বড়আঁচড়া গ্রামে নির্মাণ করছেন আলিশান বাড়ি।
সম্প্রতি তাকে, ক্লোজড করে যশোর পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ভারতীয় পাঁচ পাসপোর্ট যাত্রীকে আটকে রেখে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে আদায় করেছেন ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুর্নীতির প্রতিবেদনে রয়েছে এসআই নূর আলমের নাম। রয়েছে তার বাড়ি নির্মাণের কথাও। কিন্তু এরপরও তাকে বেনাপোল পোর্ট থানায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে জমি, গাছ, ধান ও সংসারের আসবাবপত্র বিক্রি করে পুলিশের দাবীকৃত টাকা দিয়ে অনেকে রক্ষা পেলেও পুলিশি আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে অনেকে অবস্থান নিয়েছেন ভারতসহ বিভিন্ন এলাকায় ।
তিন মাসে এসআই নূর আলম বেনাপোল চেকপোস্ট ও বাজার এলাকা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি আর হয়রানি করে হাতিয়ে নিয়েছে ২০ লাখ টাকা।চেকপোস্টে অবস্থিত কামনা হেয়ার কাটিংয়ের মালিক বিনোদ জানান,
“চেকপোস্ট দোকান হওয়ায় কিছু পরিচিত মানুষ বৈধপথে পাসপোর্টের মাধ্যমে ভারত যেতে আমার দোকানে আসে। এ কারণে আমাকে মানুষ পাচারের সাথে জড়িত অভিযোগের কথা বলে ৩ দফায় নেয় প্রায় দুই লাখ টাকা।”
তুফান স্টোরের জিয়া জানান,
“হুন্ডির ব্যবসা করি এ অভিযোগ এনে আমার নিকট থেকে নেওয়া হয় ৩২ হাজার টাকা।”
টাকা না দিলে ফেনসিডিল দিয়ে চালান করার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা হাতেই নেয়া হয় কামাল নামে এক ব্যাবসায়ীর থেকে।
বেনাপোল বাজারের পলাশ হোটেলের মা
লিক জাহাঙ্গীর আলম জানান তার হোটেলের মেসিয়ারের সাথে কাজের মহিলার কথা কাটাকাটি হয়। আর এ ঘটনার জের ধরে “নারী নির্যাতন মামলার” হুমকি দিয়ে এসআই নূর আলম ১ লাখ টাকা দাবি করে। পরে বাজার কমিটি ও পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের হস্তক্ষেপে রক্ষা পান তিনি।বেনাপোল বাজারের সাতক্ষীরা ঘোষ ডেইরির মালিক নির্মল ঘোষ বলেন,
“আমাদের মিষ্টির দোকান। আমার ছেলে উৎপল ঘোষকে ফেনসিডিল দিয়ে চালান করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।”
চেকপোস্টে মামুন এন্টারপ্রাইজের মালিক মামুন জানান,
“এক সপ্তাহ আগে আমরা একজন মেয়ে ও পুরুষকে নারী পাচারের সন্দেহে পুলিশে খবর দিয়ে আটক করিয়ে দেই। পরে দারোগা নূর আলম নারী ও শিশু পাচারের সাথে জড়িত কথা বলে আমার দোকানের কর্মচারীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় লোকজন নিয়ে থানায় তার সাথে কথা বললে,সে এক লাখ টাকা দাবি বরে। পরে ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে রক্ষা হয়।”
এছাড়াও বেনাপোল চেকপোস্টের এলাকার তরিকুল, রঞ্জন, মুনতাজ, আশরাফ আলী, সিরাজ, কাদির, রাজ্জাক, আকতার, ছালাম, হাফিজুর, মফিজুরসহ প্রায় ২৮ জনের কাছ থেকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রা।
এভাবে চাঁদাবাজি আর হয়রানি তে অতিষ্ট হয়ে উঠেঁছে ওই এলাকার মানুষ। এ ব্যাপার এ প্রশ্ন তুললে, অভিযুক্ত এসআই নূর আলম জানান,
“আমি ট্র্যাপে পড়েছি। আমাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের আটক ও চালান দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে তারা এসব মিথ্যা অভিযোগ আনছে। আর এই বাড়ি আমার নয়। এটি আমার ভাইয়ের। সে মালয়েশিয়ার থাকে। সে ই নির্মাণ করছে এই বাড়িটি।”
এসআই নূর আলমের ক্লোজড হওয়ার ব্যাপারটা স্বীকার করেছেন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ আবু সরোয়ার । কিন্তু তিনি চেপে যান চাঁদাবাজি আর হয়রানি করার অভিযোগ । তিনি জানান,
“এসআই নূর আলমের বেনাপোলে চাঁদাবাজি নিয়ে কেউ অভিযোগ করে নি,তাদের কাছে । যদি কেউ তার বিরুদ্ধে এমন কোন যোগাযোগ আসে অভিযোগ করে তবে তদন্ত করে দেখা হবে।”
তথ্যসূত্রঃ পরিবর্তন ডট কম।
07-05-2017 Wed: 6.00.00 A.M bdST