কেরানীগঞ্জে প্রায় ছয় মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন

কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন নজরগঞ্জ কবরস্থান থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, থানা পুলিশের সহযোগিতায় প্রায় ছয় মাস পর এক যুবকের কবর থেকে লাশ উত্তোলন করেন সিআইডি পুলিশ। পরে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহতের নাম মোঃ শাকিল হোসেন (২৯)। সে নজরগঞ্জ এলাকার মৃত. নাইমউদ্দিনের মেঝ ছেলে। জানা যায়, নিহত শাকিল দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তিন ভাই এক বোন রেখে বাবা মারা যান। মা অসুস্থ তাকে নিয়ে সবাই নানী বাড়ি নজরগঞ্জ দিঘিরপাড় এলাকায় বসবাস করেন। একই এলাকায় গত মে মাসে একটি ডে-নাইট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলা চলছিল। নজরগঞ্জ বন্ধু একাদশ নামে নিহত শাকিলের একটি টিম ছিল। গত ২৮ মে সেখানে শাকিলের টিমের সাথে নজরগঞ্জ রেড ক্রিসেন্ট টিমের সাথে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা চলছিল। খেলা চলা অবস্থায় একটি নো বলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়।এক পর্যায়ে খেলা বন্ধ থাকার পর খেলার আয়োজক ও স্থানীয়রা বিয়ষটি মিটমাট করে পুনরায় খেলা চালু করে।

সে খেলায় নিহত শাকিলের টিম জিতেন এবং শাকিল ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়। এর দু’দিন পর ১মে শাকিল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্বজনরা তাকে মিটফোর্ড এলাকায় মুনলাইট হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরেরদিন ২মে সেখান তার অবস্থার অবনতি হলে মহাখালি কলেরা হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন মুনলাইট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই রাতেই শাকিলের স্বজনরা মাহাখালী না নিয়ে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষনা করে।

এরপর নিহতের স্বজনরা স্থানীয় নজরগঞ্জ কবরস্থানে তাকে দাফন করে। এ ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর নিহতের বড় ভাই মনির ও ছোট ভাই রাজা একটি ভিডিও ফুটেজ দেখে মামলার সিন্ধান্ত নেন। থানা পুলিশ বিষয়টি দীর্ঘদিন হওয়ায় কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দেন। এরপর নিহতের ছোট ভাই মোঃ রাজা বাদী হয়ে গত ২৭ আগষ্ট কোর্টে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশকে নিয়মিত মামলা রুজু করার আদেশ দেন। থানায় পুলিশ গত ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি রেকর্ড করার পর ২৮ সেপ্টেম্বর সিআইডতে হস্তান্তর হয়।

নিহতের ছোট ভাই এ মামলার বাদী মোঃ রাজা বলেন, ক্রিকেট খেলায় একটি নো বলকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের খেলোযাররা আমার ভাইকে মাথায় ও গাড়ে আঘাত করার ফলে মারা যায়। বিষয়টি আমরা জানতাম না। দীর্ঘ পাঁচ-ছয় মাস আমরা একটি ভিডিও ফুটেজ দেখতে পাই। সেটা দেখে মনকে আর ধরে লাখতে পারলাম না। ভাই হত্যার বিচার দাবী করে আমি ভিডিও ফুটেজ দেখে ১০জনকে নামে ও আরো ১০/১৫জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।
নাইট ক্রিকেট খেলার আয়োজক ও পঞ্চায়েত কমিটি সুত্রে জানাযায়, অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি ঘটার পর স্থানীয়রা সবাই একত্রিত হয়ে নিহত শাকিলের অসুস্থ মা ও ছোট একটি বোনের কথা চিন্তা করে ফাইনাল খেলা না দিয়ে খেলার সম্পূর্ন আয়োজনের টাকা প্রায় এক লাখ এবং গ্রাম থেকে আরো দুই লাখ টাকা উত্তোলন করে তিন লাখ টাকা দেওয়ার একটি প্রস্তাব দেন। এ টাকা কে নিভে তা নিয়ে নিহতের পরিবারের মধ্যে দুটি পক্ষ দাড়ায় এবং সিদ্ধন্তহীনতায় ভুগেন। এর প্রায় ছয় মাস পর নিহতের ভাই রাজা কোর্টে মামলা করে এলাকার নিরহ ছেলেদের হয়রানি করার চেস্টা করছে।

এ ব্যাপারে মামলা তদন্তকারী সিআইড পরিদর্শক বিষ্ণু ব্রত মল্লিক বলেন, এ হত্যা মামলাটি কেরানীগঞ্জ মডেল থানা থেকে সিআইডিতে হস্তান্তর হলে এর তদন্তভার পরে আমার উপর আসে। আমি মামলাটি ভাল করে পর্যক্ষেন করে  কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য ফের আদালতের আবেদন করি। আদালত আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে (আজ) গতকাল মঙ্গলবার মাধ্যমে লাশ উত্তোলনের আদেশ দিলে আমি কেরানীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট স্যারের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।

কেরানীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মতিউর রহমান শামীম বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পরিদর্শক বিষ্ণু ব্রত মল্লিক নিহত শাকিলের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে। পরে আমার উপস্থিতিতে নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়না তদন্তের জন্য মটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠান।

Check Also

কেরানীগঞ্জে চারতলা ভবন থেকে পড়ে নারীর মৃত্যু

কেরানীগঞ্জে চারতলা ভবন থেকে পড়ে নারীর মৃত্যু

ঢাকার কেরানীগঞ্জের বনগ্রামে নিজ বাড়ির চতুর্থ তলার বেলকনি থেকে পড়ে তাহমিনা (৩৫) নামে এক নারীর …