এই নন্দিত লেখকের বই পড়েননি, কিংবা তাঁর টেলিভিশন নাটক দেখেননি- বাংলাদেশে কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে লেখাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন তিনি। গল্প উপন্যাস লিখেছেন, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন। হয়ে উঠেছেন সমাজের নানা শ্রেণির মানুষের, বিশেষ করে মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি। বাংলাদেশে তো বটেই, বাংলা সাহিত্যেও তাঁর মত এত জনপ্রিয় লেখক ও নাট্যকার এখন পযন্ত নেই বললেই চলে। বছরের পর বছর এককভাবে বইয়ের বাজার দখলে রাখা, গল্প-উপন্যাস-নাটকে পাঠক-দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা, বাংলা সাহিত্য ও বাংলা নাটকের ইতিহাসে রীতিমত চমকে দেওয়ার মতো সেই মানুষ- হ ুমায়ূন আহমেদ।
মৃত্যুর ১০ বছর পর এই জনপ্রিয় ও কীর্তিমান মানুষকে নিয়ে এবারের অমর একুশে বইমেলায় একটি ব্যতিক্রমী বই এনেছিলেন লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী প্রতীক ইজাজ। বইয়ের নাম- ‘হ ুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮-১৯ জুলাই ২০১২): কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে’। প্রকাশ করেছে বেহুলাবাংলা প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন চিত্রশিল্পী ও লেখক তৌহিন হাসান। বইটির মূল্য ৫৬০ টাকা। বইটি রাজধানীর ৬১, কনকর্ড টাওয়ার, কাটাবন, ঢাকায় বেহুলাবাংলার বই ঘরে এবং অনলাইনে রকমারি ডটকমে যাওয়া যাচ্ছে।
যদিও এটি কোনো মৌলিক গ্রন্থ নয়; কিন্তু বিষয়বস্তু মৌলিক। হুমায়ূন আহমেদেরে মৃত্যুর পর বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও অনলাইনে প্রকাশিত তাঁকে নিয়ে যত লেখা প্রকাশ হয়েছে, তার মধ্যে থেকে বাছাই করা লেখাগুলো সন্নিবিষ্ট হয়েছে এই বইয়ে। বইতে হুমায়ূন আহমেদের দুটি অপ্রকাশিত লেখাও রয়েছে। চারটি সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে অনেক অজানা তথ্য ও ভাবনা।
নানাজন হুমায়ূন আহমেদকে নানাভাবে দেখেছেন। নানা স্মৃতি বর্ণনা করেছেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম, নাটক ও চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা-বিশ্লেষণ করেছেন। খুব কাছে থেকে দেখা স্বজনেরা নিখুঁতভাবে তুলে এনেছেন তাঁর জীবনের অপ্রকাশিত গল্প। খণ্ড খণ্ড এসব লেখা একসাথে এক বইয়ে পূর্ণাঙ্গ রুপ পেয়েছে। এই বই একজন হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতি বলা চলে।
বিষয়ভিত্তিক ১৯টি অধ্যায়ে শতাধিক সাহিত্যিক, কবি, লেখক, শিক্ষক, গবেষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, নির্মাতা, প্রকাশক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার গুণীজনের প্রায় দেড়শ লেখা সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে। পাঠকের সুবিধার জন্য প্রত্যেকটি অধ্যায় শুরুর আগে ওই অধ্যায় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া দেওয়া হয়েছে। রয়েছে তাঁর জীবনের নানাদিক নিয়ে আলাদা আলাদা অধ্যায়। তাঁকে নিয়ে এই বইয়ের সম্পাদক প্রতীক ইজাজের লেখা পাঁচটি গদ্য রয়েছে।
যে পত্রিকা থেকে লেখাটি নেওয়া হয়েছে, লেখার শেষে ওই পত্রিকার নাম, লেখক ও সাংবাদিকের পরিচিতি ও প্রকাশের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি লেখা হুবহু তেমনই রাখা হয়েছে, এমনকি বানানরীতিও।
বইটি সম্পাদনা বেশ নান্দনিক। প্রত্যেক অধ্যায়ের আলাদা নামকরণ পাঠকমনে এক ধরণের মায়া ছড়িয়ে দেয়। বইয়ের নামটি জল-জ্যোস্নার বৃষ্টির মতো বিরহ-ভালবাসার গান শোনায়, আবেগ ছড়ায়। এর আগেও এই লেখকের এরকম আরেকটি বই প্রকাশ হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনকে নিয়ে- ‘সূযতপা সুচিত্রা’। এ ছাড়া দুটি গীতিনাট্য বা কাব্যনাট্য প্রকাশ হয়েছে- ‘চিত্রী বানুর সাথে খোলা কথা’ ও ‘ফাতেমা ও রাজকুমারের বয়ান’। গত মেলায় প্রকাশ হয়েছে আবৃত্তি বিষয়ক বই- ‘আবৃত্তি শিখি আবৃত্তি করি’।
‘কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে’- বইটি হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত ও পাঠকদের ভালো লাগবে নিশ্চয়। পাঠশূণ্য সময়ে মানুষকে নতুন করে পাঠে উদ্বুদ্ধ করবে। শুভ শক্তির সংহতি বাড়াবে। হুমায়ূন আহমেদ যে আমাদের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়- এই স্মারকগ্রন্থ তারই স্মারক।