মোঃ খালেদ সাইফুল্লাহ, (জাবি): আজ রবিবার (২৪ ফেব্রুআরি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে র্যাগিং বিরোধী একটি র্যালি বের করা হয়।
‘র্যাগিং মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়বো, সকলে মিলে সৌন্দর্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করবো’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বিশাল এক র্যালি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।সকাল ১০ টায় শুরু হওয়া এই র্যালির উদ্বোধন করেন “দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, এম.পি।”
র্যালীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের নেতৃত্বে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এম.পি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আমির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ছাত্র-কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ প্রায় দুই হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
নিজেদের দেব চেক, দেব না আর র্যাগ’, ‘ভয় দেখিয়ে ভাই ডাকিয়ে, ভাই হওয়া যায় না’, ‘যে সিনিয়র ম্যানারস শেখায়, সেই সিনিয়র ভালোবাসে না’, ‘ ‘র্যাগিং এর মধ্যে নয়, এসো ভাই- বোনের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করি’- ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড নিয়ে র্যাগিং বিরোধী র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা শহীদ মিনার চত্বরে সমবেত হয়।র্যালিটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
র্যালি শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এম.পি বলেন,র্যাগিং একটি জঘন্য অপরাধ এবং এটি শিক্ষার্থীদের মনন বিকাশে বাধা দেয়। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হলে এটি প্রতিরোধ সম্ভব।
তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘র্যাগিং বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে এবং তাদের এই অপরাধ থেকে বের হয়ে আসতে হবে’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘র্যাগিং নির্মূলে ইতিপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। র্যাগিংয়ের বিষয়ে প্রমাণ পেলেই বহিষ্কার করা হবে। র্যাগ দিয়ে নয় বরং ভালোবাসা ও স্নেহ দিয়ে জুনিয়রদের আপন করে নেয়া শিখতে হবে।’
এছাড়াও,নতুন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একটু সময় লাগলেও ক্যাম্পাস নিজে চিনবে, কোনো সিনিয়র ডাকলে তাদের সঙ্গে যাবে না, নিজে প্রতিবাদ করবে, র্যাগিংয়ের আলামত পেলে প্রশাসনকে জানাবে, পরিচিতদের সঙ্গে চলাফেরা করবে।’
র্যাগিং প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পদক্ষেপসমূহের মধ্যে রয়েছে,
• কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিক এক বছরের জন্য তাকে বহিস্কার করা হবে।
• শিক্ষকদের নিয়ে র্যাগিং প্রতিরোধে একাডেমিক ভবন ভিত্তিক ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হবে।
• বিভাগীয় সভাপতি ও ছাত্র উপদেষ্টাগণ ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও কাউন্সেলিং করবেন।
• হল প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন, আবাসিক শিক্ষক, সহকারি আবাসিক শিক্ষক পালাক্রমে হলে উপস্থিত থাকবে।
• হলে ওঠার দিন থেকেই হল প্রশাসন নতুন শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রণয়ন করবেন।
• হল প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে প্রক্টরিয়াল বডি হলে প্রবেশ করতে পারবেন।
• প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা দিবা-রাত্রি মোবাইল ডিউটি পালন করবেন।
• পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাত ১০টার পরে জয় বাংলা গেট (প্রান্তিক গেট) ব্যতিত সকল গেট বন্ধ থাকবে প্রভৃতি।
উল্লেখ্য, আগামীকাল সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের পাদদেশ থেকে একই বিষয়ে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এ র্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এম শাহ্ নওয়াজ আলী।