দরজায় কাড়া নারছে পবিত্র ঈদ উল আযহা অথবা কোরবানীর ঈদ। ঈদের বাকি ১ মাসের ও কম সময়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে খামারের গরু মোটাতাজা করনে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কেরানীগঞ্জের খামারিরা। ভালো দাম পাওয়ার আশায় খামারারি শেষ সময়ে গরুর সর্বোচ্চ পরিচর্যা করছেন । এবার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ৫৮৩৪ টি পশু আসন্ন কোরবানী ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ১২টি ইউনিয়নের ৫৬২ টি খামারে এসব পশু পালন করা হচ্ছে। হাটে উঠানোর আগে খামারেই গরু ক্রয়- বিক্রয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন খামারিরা। তবে গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, দেশের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি, বৈশ্বিক যুদ্ধের কারনে পশুর ন্যায্য দাম প্রাপ্তি নিয়ে চিন্তিত খামারিরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কেরানীগঞ্জে কোরবানী পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। আসন্ন কোরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে কেরানীগঞ্জের ছোট বড় ৫৬২ টি খামারে হৃষ্টপুষ্টকরন পদ্ধতিতে প্রস্তু করা হচ্ছে ৫ হাজার ৮৩৫ টি পশু। এর মধ্যে দেশি ষাড় রয়েছে ৪ হাজার ৯৩৭ টি, বলদ রয়েছে ১৬৫ টি, গাভী রয়েছে ১৬৯ টি, মহিষ রয়েছে ৯৪ টি । এছাড়া ৩৫৯ টি ছাগল ও ১১১ টি ভেড়া রয়েছে।
সরেজমিন কেরানীগঞ্জের বেশ কয়েকটি খামার ঘুড়ে দেখা যায়, দেশীয় পদ্ধত্বিতে প্রতিটা খামারে গরু মোটা তাজা করা হচ্ছে। ঈদ কে সামনে রেখে, খামারিরা গরুর বাড়তি পরিচর্যায় দিন পার করছেন। খামারে ক্রয়ের উদ্দৈশ্যে এখোনো ক্রেতারা না আসলেও, ক্রেতারা এসে যেন খামার গুলিতে সুন্দর ভাবে পশু দেখতে পারে সেই জন্য খামার গুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সাজানো গোছানো হয়েছে। একাধিক খামারির সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের বাহির থেকে গরু না আসলে এবার খামারিরা ভালো দাম পাবেন। যদিও বন্যা পরিস্থিতি, বৈশ্বিক যুদ্ধ যদিও চিন্তার কারন হয়ে দাড়িয়েছে খামারিদের জন্য।
কেরানীগঞ্জে কৃষি জমি কমে যাওয়ায়, কাচা ঘাসের সংকট রয়েছে প্রতিটি খামারেই। তাই দানাদার খাদ্যর উপর ই ভরসা খামারিদের। এদিকে বাজারে দানাদার খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত বিনিয়োগ করতে হচ্ছে যার কারনে খামারের প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পরেছেন অনেক খামারি।
রোহিতপুর ইউনিয়নের ফিট এন্ড ফ্রেশ এগ্রো খামারের সত্তাধিকারী শহিদুল ইসলাম রাজুর সাথে কথা বলে জানা যায়, এবারের কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে তার খামারে ৭৫ টি গরু বিক্রির জন্য তৈরী করা হয়েছে। তবে দেশের সম সাময়িক বন্যা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারনে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। গরুর ন্যায্য দাম পাবেন কি না এ নিয়ে সংকিতো তিনি । শহিদুল ইসলাম রাজু জানান, যদি বাজার ভালো হয় ন্যায্য দাম পাই তাহলে সব গরু বিক্রি করার চেষ্টা করবো। বাজার মন্দা হলে ১৫-২০ বিক্রি করে বাকি গুলো আগামী বছরের জন্য রেখে দিবো।
দক্ষিন কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ায় বিসমিল্লাহ এগ্রোর মালিক আবুল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ বছর তার খামারে ৮০-৯০ টা গরু বিক্রির জন্য তৈরী করা হয়েছে। শেষ সময় এসে সর্বোচ্চ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। সারাদিন ই খামারে সময় দেন আবুল হোসেন। তিনি জানান, বন্যা ঢাকার বাজারে প্রভাব না ফেললেও গো খাদ্যের দামের কারনে গরুর বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, সরকার যদি আমাদের খামারিদের প্রতি একটু দৃষ্টি দেয়, গবাদি পশুর খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রন করে তাহলে আমরা খামারিরা পশু বিক্রি করে ২ টা পয়শার মুখ দেখতে পারবো। সেই সাথে দেশের চাহিদা মেটাতে পারবো। বাহির থেকে আমাদের আর পশু আনতে হবে না। আগামী ঈদ উপলক্ষে ৪৫০ টকা লাইভ ওয়েটে পশু বিক্রি করছেন বলে জানান আবুল হোসেন।
হযরতপুর ইউনিয়নের কৃষক মো: তালেব মিয়া জানান, কৃষি কাজের পাশাপাশি আমি প্রতি বছর কোরবানী ঈদে বিক্রির জন্য বাড়িতে ৮/১০ টা ষাড় গরু পালন করে থাকি। এ বছর ৯ টা ষাড় ঈদের জন্য প্রস্তুত করছি। তবে গো খাদ্যের দামের যে অবস্থা , ঘরের চাল কিনতে যা খরচ হয় গো খাদ্যের জন্যও তেমন খরচ হয়। প্রতি বছর গরু বিক্রি করে লাভের মুখ দেখি, এবার দেশের যা পরিস্থিতি, দেখা যাক আল্লাহ কপালে কি লেখসে।
কেরানীগঞ্জের উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মনছুর আহমেদ বলেন, কেরানীগঞ্জের খামারিরা প্রাকৃতিক ভাবে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। এখানো কোন খামারেই গরু মোটা তাজা করতে ক্ষতিকারক স্টরয়েড জাতীয় ঔষুধ ব্যবহার করা হয় না। এখানকার খামারগুলোতে প্রায় ৬ হাজার পশু কোরবানী ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ঈদের আগে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খামারিরা বিক্রির উদ্দেশ্যে আরো কিছু পশু সংগ্রহ করে নিয়ে আসবেন।#