মেরিনড্রাইভ ভাঙ্গনের প্রভাব সমুদ্রের বালিয়াড়ি থেকে অবাধে বালি ও শামুক-ঝিনুক উত্তোলন!

আজিজ উল্লাহ, উপকূলীয় প্রতিনিধি:

প্রায় প্রতি বছর বর্ষার এই সময়টাতে সাগরে নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল হয়। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সমুদ্রের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়।এতে করে সামুদ্রিক জোয়ারের পানির স্রোতও প্রবল হয়। এদিকে সমুদ্র তীর ঘেঁষে নির্মিত হয়েছে ৮৪ কিলোমিটার মেরিনড্রাইভ। যার ফলে টেকনাফ-কক্সবাজর সমুদ্র তীর ঘেঁষা স্বপ্নের মেরিনড্রাইভ বঙ্গোপসাগরের প্রবল ঢেউয়ের হানার মুখে। বিশেষ করে সাবরাং জিরো পয়েন্টের আগে খুরেরমুখ এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন ধরেছে। যার ফলে ঝুঁকির আশঙ্কায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্কসহ পাশাপাশি এলাকায় বসতবাড়ির কয়েকশ পরিবার। এসবের নেপথ্যে সমুদ্রের তীর থেকে অবাধে বালি ও শামুক-ঝিনুক উত্তোলন করে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়েছে।
গত, বুধবার থেকে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ হেতু সমুদ্রের জোয়ারের পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাবরাং খুরের মুখ মেরিনড্রাইভ অংশে প্রায় ৬০-১৫০ মিটার জুড়ে পশ্চিম পাশের সড়কের অখণ্ড লাইন সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। সমুদ্র তীর ঘেঁষে বেড়ে উঠা কয়েকটি ঝাউগাছ নুয়ে পড়েছে। যার ফলাফলে বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন স্বপ্নের মেরিনড্রাইভ। এদিকে ভাঙ্গন রোধে সড়ক রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি বিশেষ ইউনিট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, টেকনাফের বাহারছড়া উত্তর শিলখালী একটি স্পটসহ সড়ক ও জনপদ বিভাগের জন্য জাহাজপুরা, হাজমপাড়া, কচ্ছপিয়া ও নোয়াখালী এলাকায় বিশাল বিশাল প্লট সমুদ্র তীর থেকে অবাধে বালি উত্তোলন করে সমুদ্র তীর ধ্বংস করা হয়েছে। বালি উত্তোলন করেছে কয়েকটি কোম্পানিসহ ট্যুরিজম পার্ক। এতে লাখ লাখ টন বালি সমুদ্র থেকে উত্তোলন হওয়ার কারণে এসব এলাকায় সমুদ্র তীর নিচু হয়ে বঙ্গোপসাগরের প্রবল ঢেউয়ের আঘাত সরাসরি মেরিনড্রাইভে পতিত হচ্ছে। ফলে ভাঙ্গনের কবলে মেরিনড্রাইভ।
এদিকে বাহারছড়া কচ্ছপিয়া এলাকার শামুকখেকো ইলিয়াসের উদ্যোগে অবৈধভাবে সমুদ্রের বিশাল এলাকা থেকে অবাধে হাজার হাজার টন শামুক-ঝিনুক উত্তোলন করে পাচার করে যাচ্ছে। বিশেষ করে মাথাভাঙা, কচ্চপিয়া এলাকায় তার কয়েকশ শ্রমিক রয়েছে যারা সমুদ্র থেকে শামুক উত্তোলন করে। এভাবে অবাধে চর ধ্বংস করে শামুক উত্তোলনের কারণে সেসব মেরিনড্রাইব সংলগ্ন সমুদ্র তীর নিচু হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে ঢেউয়ের আঘাত সরাসরি মেরিনড্রাইভে আঘাত করছে।

স্থানীয় পরিবেশ কর্মী ও শামলাপুর বিজিএফ সভাপতি আমির মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন,” প্রকৃতি রক্ষা করতে হলে সমুদ্র থেকে বালি ও ঝিনুক তুলা বন্ধ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সামুদ্রিক ঝিনুক ও বালিয়াড়ি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। এসব কার্যক্রম বন্ধ করতে না পালরে স্বপ্নের মেরিনড্রাইভ অদূর ভবিষ্যতে সাগরে হারিয়ে যাব।”

শামুক উত্তোলন সম্পর্কে কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাওয়ার আলমের সঙে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,” শামুক ঝিনুকের উত্তোলনের জন্য নয় মেরিনড্রাইভের ক্ষতি হচ্ছে না তবু শামুক ঝিনুক পাচার ঠেকাতে বন বিভাগ কাজ করছে। তাদের ধরাও হচ্ছে।”

সমুদ্র থেকে বালি উত্তোলন সম্পর্কে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান (ইউএনও) সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,” আমি টেকনাফ আসছি নয় মাস চলছে। এসময় সমুদ্র থেকে বালি উত্তোলন হয়নি। তবু সামনে কেহ অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, বালি উত্তোলনের কারণে মেরিনড্রাইভ ভাঙ্গনে প্রভাব পড়ছে।”

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে [sharethis-inline-buttons]

Check Also

বাহারছড়ায় ১নং থেকে ৪ নং ওয়ার্ডে ভিজিডি তালিকাভুক্ত দুস্থ নারীদের মাঝে কার্ড বিতরণ সম্পন্ন!

আজিজ উল্লাহ, উপকূলীয় প্রতিনিধি সারাদিন প্রচন্ড গরমকে উপেক্ষা করে টেকনাফের বাহারছড়া ১ নং ওয়ার্ড থেকে …

error: Content is protected !!