জবি প্রতিনিধি: রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজনৈতিক অঙ্গন। একই দিনে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ ডেকেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রধান দু-দলের সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনার মধ্যেই জামায়াতে ইসলামী একই দিন মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। দলগুলোর কর্মসূচি ঘিরে তৎপর দলগুলোর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ সম্পৃক্ত অন্য সংগঠনগুলো।
ইতিমধ্যেই বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) বিবৃতি দিয়ে সবাইকে সমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থলের ঠিক পাশেই অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির রহস্যজনক নিরবতা ও এই সময়ে তাদের অন্যান্য কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী শিক্ষকেরা।
তারা বলছেন, বর্তমান শিক্ষক সমিতি নিজেদেরকে সবসময় আওয়ামিলীগের প্রতিনিধিত্বকারী দাবি করে নানা সুযোগসুবিধা নিলেও দলের কঠিন সময়ে তাদের পাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন পদে খালি হলেই নিজেদের পন্থী শিক্ষকদের সেই পদে নিয়োগ দিয়ে উঠেপড়ে লাগেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এমনকি এসব বিষয়ে অযথা বিবৃতি ও সম্মেলন করে বারবার সমালোচনারও জন্ম দিয়েছেন তারা। তবে দলের এই সময়ে তাদের বিবৃতি আর কোন সংবাদ সম্মেলন খুঁজে পাওয়া যায় না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনদলে বিভক্ত আওয়ামিলীগ পন্থী শিক্ষক সংগঠন নীলদল। তাই শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জয়ী হতে প্রদান ফ্যাক্টর কাজ করে বিএনপি পন্থী সাদাদলের শিক্ষকদের ভোট। অভিযোগ আছে, গত দুইবারের নির্বাচনে সাদাদলের সঙ্গে আঁতাত করে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বর্তমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান।
আওয়ামীপন্থী অন্যান্য শিক্ষকদের অভিযোগ, সাদা দলের সঙ্গে আঁতাতের কারণে আওয়ামিলীগের কঠিন সময়ে নিশ্চুপ আছেন বর্তমান শিক্ষক সমিতি। সাদাদল নাখোশ হবে এই জন্যই জবি শিক্ষক সমিতি সমাবেশ স্থলের কাছে থেকেও দলের সমর্থনে কোন কার্যক্রম চোখে পড়ছেনা। উপরন্তু তারা এই সময়ে বিভিন্ন পদ ভাগিয়ে নিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান।
বর্তমানে রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৬ নভেম্বর। ড. কামালউদ্দীন আহমদের শেষ সময়ে তাকে বিরক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শিক্ষক সমিতি। কোন উপলক্ষ ছাড়াই মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্টের চেষ্টা সংগঠনটির।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গুরুতর অসুস্থ থাকায় কয়েকমাস ধরে সিন্ডিকেট সভা হচ্ছেনা৷ যার জন্য শিক্ষকদের পদোন্নতি, উচ্চ শিক্ষার ছুটি নবায়ন, শিক্ষকদের চিকিৎসা ছুটি, এমফিল-পিএইচডি ভর্তি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি ও নিয়োগ আটকে আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় যেন আর পিছিয়ে না পড়ে এজন্য অসুস্থ অবস্থাতেই অনলাইনে সিন্ডিকেট সভার ব্যবস্থা করেছেন উপাচার্য। কিন্তু সেই সিন্ডিকেট সভাটিও পন্ড করার চেষ্টায় মরিয়া শিক্ষক সমিতি। উপরন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে উপাচার্যকে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।
এছাড়াও সময়ে সময়ে নানান কৃত্রিম ইস্যু তৈরী করে সেগুলো দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত পরিবেশ অশান্ত করে আসছে শিক্ষক সমিতি। যাতে করে থমকে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বাভাবিক গতি।
এবিষয়ে জানতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সাধারণ সম্পাদক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমানকে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি মুঠোফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।