নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে উপজেলার বানিয়াপুকুর ও গাড়াখেলা গ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াসিন-রাজু গ্যাং ও তার সহযোগীরা। গাড়াখোলা ও বানিয়াপুকুর গ্রামের বিলডাকাতিয়া কেন্দ্রিক মাছ চাষীদের আতঙ্ক ইয়াসিন-রাজু গ্যাং। উপজেলায় তাদের আধিপত্যে অসহায় ঘের মালিক ও স্থানীয় জনসাধারণ। ঘের থেকে মাছ লুট,চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন তাদের নিয়মিত কাজ। এছাড়া উপজেলায় মাদকব্যবসায়ী হিসেবে সন্ত্রাসী ইয়াসিন ও রাজু গ্যাং পরিচিত।
মাদক বিক্রি, আধিপত্য বিস্তার, প্রকাশ্যে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, মাদক সেবন ও চাঁদাবাজিতে উপজেলায় বেপরোয়া ইয়াসিন-রাজু গ্যাং।
উপজেলায় ইয়াসিন-রাজু গ্যাং ও তার সহযোগীদের তৎপরতায় স্থানীয় ঘের ব্যবসায়ীরা নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে।সরেজমিন ঘুরে জানা যায় ইয়াসিন-রাজু গ্যাং এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলে বা প্রতিবাদ করলে অভিযোগকারীর মাৎস্য ঘেরে ঔষধ প্রয়োগ করে মাছ লুট এবং অস্ত্রদিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
তবে প্রশাসনের এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় চিংড়ি চাষী ও ঘের মালিক বানিয়াপুকুর গ্রামের ইয়াসিন এবং তার সহযোগী গাড়াখোলা গ্রামের ভাগ্নে রাজু এবং বেগুনবাড়িয়া গ্রামের ছোট রাজুর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। ইয়াসিন-রাজু গ্যাং এর কর্মকান্ড রুখতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উপজেলার স্থানীয় জনগণ তৎকালীন সময়ে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার,জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট গণস্বাক্ষর সহ ইয়াসিন-রাজু গ্যাং এর কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রতিকার চেয়ে আবেদন জমা দেয়।
এছাড়া ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর ফুলতলা উপজেলার গাড়াখোলা গ্রামে ইয়াসিন-রাজু গ্যাং এর মাছ লুট প্রতিরোধ ও মাদকবিরোধী সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর স্থানীয় গণমাধ্যমে মাদকবিরোধী সমাবেশের সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তবে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও ইয়াসিন-রাজু গ্যাং এর বেপরোয়া আচরণ থেকে আশানুরূপ কোন প্রতিকার মেলেনি। এছাড়া ফুলতার সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনসাধারণ স্থানীয় জনসাধারণ উদ্বেগ প্রকাশ করে। গত এপ্রিল ৩ তারিখে প্রকাশ্য দিবালোকে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে বহিরাগত মাদকাসক্তদের ছুরিকাঘাতে ফুলতলা মোজাম মহলদার (এম এম) কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের অনার্স পড়ুয়া ছাত্র সৈয়দ আলিফ রোহান হত্যাকান্ড ঘটে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফুলতলা বাজার বণিক কল্যাণ সোসাইটির নির্বাচিত ক্রীড়া সম্পাদক রকিবুলকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
ইয়াসিন-রাজু গ্যাং ছাড়াও ফুলতলার উঠতি কিশোর গ্যাং উত্থান ও তাদের আধিপত্য বিস্তারের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
একইসাথে স্থানীয় প্রশাসনের মাদকবিরোধী তৎপরতা না থাকা এবং উঠতি সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং নির্মূলে নিয়মিত অভিযান না থাকায় উপজেলার সুশীল সমাজ ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। উপজেলার বিশিষ্টজনেরা ইয়াসিন-রাজু গ্যাং এর তৎপরতায় তরুণ প্রজন্মের মাদকাসক্ত হওয়া এবং চিংড়ি শিল্প বিকাশের অন্তরায় বলে উল্লেখ করেন।
খুলনা জেলার ফুলতলা থানার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সর্বিক বিষয়ে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মাদক চোরাচালান ও কিশোর গ্যাং রোধে আমাদের নিয়মিত অভিযান রয়েছে। আমাদের স্পেশাল টিম এর সংখ্যা কম এটি স্বীকার করছি তবে অভিযান অব্যহত থাকবে এবং স্পেশাল টিম এর সংখ্যা প্রয়োজনে বৃদ্ধি করা হবে । সাম্প্রতিক সময়ে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এর সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ইয়াসিন -রাজু গ্যাং এর বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার কাজ করছি।এছাড়া স্থানীয় গ্রুপিং এর বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন পুলিশ সবসময় আন্তরিক রয়েছে অপরাধমূলক কার্যক্রম কমিয়ে আনতে।
উল্লেখ্য ইয়াসিন-রাজু ও তাদের গ্যাং এর একাধিক সহযোগীর বিরুদ্ধে ফুলতলা থানায় বিভিন্ন সময়ে ঘেরের মাছ লুট ,ধর্ষণ,হত্যা,হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র এবং মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।