ঢাকার কেরানীগঞ্জে কালিন্দী ইউনিয়নের মধ্য চড়াইল এলাকায় হঠাৎ করেই একটি তিনতলা ভবন পাশের ডোবায় ধসে পড়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭ টার সময় ঘটনাটি ঘটে। ভবন ধসের ঘটনায় আশে পাশের আরো তিন চারটি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় ৭ জন আহত হলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটে নি।
জানা যায়, সবে মাত্র কয়েকদিন আগে ৩ তলার নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন ভবনটির মালিক জানে আলম। সেই খুশীতেই গতকাল আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে মিলাদ মাহফিল ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছিলেন ভবনটিতে । শুক্রবার ভোরে ডেকোরেটার থেকে হাড়ী পাতিলাও চলে আসে জানে আলমের বাড়ীতে। কিন্তু মিলাদ মাহফিলের আয়োজনই আর হলো না, ধসে পরলো জানে আলমে নবনির্মিত স্বপ্নের বাড়ীটি। এ ঘটনায় সাতজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এছাড়া ধসে পরা ভবনের আশপাশের ৩ টি ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে উপজেলা প্রশাসন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমী) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ সার্কেল সানজিদা পারভিন তিন্নি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ নির্দেশনা দেন।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনটি ধসে পড়ার কথা বলা হলেও এটি মূলত পিছন দিকে কাত হয়ে পরে গেছে পাশের ডোবায়। ডোবার পানিতে ভবনটি অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। বাড়ীর অন্যন্য লোকজন ঘরের মালামাল উদ্ধারে ব্যাস্ত এছাড়া জানে আলমের বাড়ীর আঙিনায় পরে আসে পানি ভর্তি ডেকোরেটারের হাড়ী ও পাতিলা। জাহিদ হাসান, হাজী মঞ্জর আলম ও মজিবুর রহমানের ৩ টি বাড়ী পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
ভবনটির মালিক জানে আলম জানায়, আজকে (গতকাল) আমার বাসায় মেহমান খাবারের কথা ছিলো। আমি ফজরের নামাজ পড়ে, বাবুর্চিরা আসছে ওদের সাথে বাড়ির সামনে কাজ করছিলাম। আমার স্ত্রী ৩ তলায় রান্না ঘরে নাস্তা বানাচ্ছিল, বাকি সদস্যরা ২য় তলায় ও নিচ তলায় ঘুমিয়ে ছিলো। হঠাৎ করে বিকট একটি শব্দ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি , বিল্ডিংটি আস্তে পিছনের দিকে বসে পড়লো। বিল্ডিং এ কোন ভাড়াটিয়া ছিলো না। আমার পরিবারের ৭ জন সদস্য ছিলো, আল্লাহর অশেষ রহমতে স্থানীয় জনগন ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। আগে এখানে মাটি ছিলো। আমি যখন বিল্ডিং করেছি তখন এখানে ক্ষেত ছিলো। গত ৮/১০ বছর ধরে এখানে পানি জমে যায়, পানি জমে যাওয়ার কারনেই দুর্ঘটনা ঘটেছে মনে হয়। এর আগে ফাটল, বেকা বা অন্য কোন লক্ষন দেখি নাই। আজকে হঠাৎ করেই বসে পড়েছে।
পার্শ¦বতী ভবন মালিক জাহিদ হাসান বলেন, সবে মাত্র বাড়ীটির ৩ তলার কাজ শেষ হয়েছিলো। আজকে আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে মিলাদের অনুষ্ঠান করার কথা ছিলো। কিন্তু অনুষ্ঠান আর করা হলো না। সকালে বিকট শব্দে ভবনটি ধসে পরে, প্রথমে ভেবেছিলাম ভূমিকম্প পরে দেখি আমাদের পাশের ভবনটি কাত হয়ে পড়ে রয়েছে ডোবায়।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, সকালে কেরানীগঞ্জের মধ্য চরাইল এলাকায় একটি তিন তলা ভবন ধসে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত অবস্থায় সাতজনকে উদ্ধার করে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমী) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ সার্কেল সানজিদা পারভিন তিন্নি বলেন, যে ভবনটি ধসে পড়েছে তার পাশের ভবনটির পিলার ও বিভিন্ন অংশ বাকা হয়ে গেছে। এই ভনটিরও ধসে পড়ার শংকা রয়েছে। তাই নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করা পাশ্ববর্র্তী ৩টি ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ১ ঘন্টার মধ্যে এসব ভবন খালি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এবং এসব ভবনের গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, মধ্য চরাইল এলাকায় ভবন ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত আহত অবস্থায় সাতজনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পার্শ¦বর্তী ৩ টি ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।#