কেরানীগঞ্জে শীতের কাপড় কিনতে ফুটপাতের দোকানেগুলোতে ভীড় জমাচ্ছে ক্রেতারা

কেরানীগঞ্জে শীতের প্রকোপ পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগেই তৈরী পোষাকের দোকানগুলোতে গরম পোশাক বিক্রির হিড়িক পরে গেছে। কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন অলিগলির ফুটপাতও এখন শীতবস্ত্রের দখলে। ক্রেতা সমাগমও প্রচুর।উপজেলার আগানগর, জিনজিরা, শুভাঢ্যা, কলাতিয়া, রোহিতপুরসহ প্রায়সব এলাকায় ফুটপাতে শীতবস্ত্রের বিক্রি বেড়েছে।

বিভিন্ন ধরনের পোষাকের মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে ছোট বাচ্চা ও বয়স্কদের কাপড়। মাথার টুপি, পায়ের মোজা, হাতমোজা, মাফলার, সোয়েটার,জাম্পার, ফুলহাতা গেঞ্জি কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন ইউনিয়নের ফুটপাত গুলোতে ভিড় করা ক্রেতারা বলছেন, হালকা শীতে পোষাকের তেমন কোন দরকার পরে না। কনকনে শীত থেকে বাঁচতে পারেন, ফুটপাতের দোকান গুলোতে এমন পোষাক খুজছেন তারা।

বিশেষ করে এবার যেহুতু শীতের মধ্যে করোনার প্রকোপ রয়েছে, তাই শীত আর করোনা এই দুইয়ের হাত থেকে বাচতে শীতের পোষাকের চাহিদা বেড়েছে অনেক। আর ক্রেতাদের এ চাহিদাকে পুঁজি করে বিক্রেতারা দাম হাঁকাচ্ছেন কয়েক গুণ বেশি।

‘ফ্যাশনের দরকার নাই। এমনিতেই করোনা, তার ওপর শুনতাসি এবার শীত পড়বো অনেক। ভারি সোয়েটার লাগবে। এসব হালকা-পাতলা সোয়েটারে শীত মানে না।’ কেরানীগঞ্জের আগানগর ইউনিয়নের জিলা পরিষদ রোডে ফুটপাতের এক হকারের কাছে এভাবেই নিজের চাহিদা তুলে ধরেন এক ক্রেতা।

দোকানির নানান বিজ্ঞাপনকে পাত্তা না দিয়ে তার পছন্দ মতো সোয়েটার খুঁজতে নিজেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। খুঁজেও বের করেন একটি। কিন্তু দোকানির কাছে দাম জিজ্ঞেস করে পরক্ষণেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই ক্রেতা। অনেক বেশি দাম চাওয়ার অভিযোগ তুলে দাম নিয়ে তর্কে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা।

তবে শেষমেষ অনেকটা অসহায়ের মতোই দোকানির চাওয়া দামেই কিনে নেন পছন্দের সোয়েটারটি। শীতে বাড়তে পারে করোনা প্রকোপ। এ ধারনা মাথায় রেখে জনগন বাড়তি সচেতনতা হাতে নিচ্ছে।


 

শীত থেকে সুরক্ষা পেতে বেশির ভাগ জনগনই আগে ভাগে শীতের পোষাক কেনা শুরু করে দিয়েছে। আর এ সুযোগ নিয়ে হকাররাও শীতের পোশাকের দাম হাঁকাচ্ছেন দ্বিগুণ।

গত বছর যে পোষাকটি ২০০-৩০০ টাকায বিক্রি হতো একই পোষাক এবার ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর বিক্রেতারা বলছেন, বর্তমানে শীতের কাপড়ের চাহিদা অনেক বেশি। বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করলেও গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম একটু বেশিই বলে স্বীকার করেন একাধিক বিক্রেতা।

কালিগঞ্জ বাজারের সামনের ফুটপাতের হকার আক্কাস মিয়া কম্বল বিক্রি করেন। তিনি জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০টি কম্বল বিক্রি হয়। শীতের শুরু তাই এখন পাতলা কম্বল বেশি বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ খানেক পর থেকে মোটা কম্বল বেশি বিক্রি হবে বলে জানান এ বিক্রেতা।

আক্কাস মিয়ার সাথে কম্বল দামাদামি করছেন মো: সবুর নামে এক ক্রেতা। পূর্বের তুলনায় কম্বলের দাম আকাশচুম্বী বলে দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, এই কম্বলটার দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা হলে ঠিক ছিলো। কিন্তু তিনি (আক্কাস মিয়া) একদাম তেরশ টাকা চেয়ে বসে আছেন।

দামের এ অস্বাভাবিক ব্যবধান সম্পর্কে জানতে চাইলে আক্কাস মিয়া বলেন, আমি তাকে কম্বল নিতে অনুরোধ করিনি। দামে মিললে নেবেন, না মিললে নাই।

জিনজিরা বাসস্ট্যান্ড রোডে ফুটপাত ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন জানান, বাচ্চাদের শীতের পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। তার দোকানে শুধু বাচ্চাদের পোশাকই বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার।

চুনকুটিয়া মোড়ে ভ্যানে করে শীতের পুরনো কাপড় বিক্রি করছিলেন মো: শামীম। তিনি সারা বছর ভ্যানে করে বিভিন্ন ধরনের কাপড় বিক্রি করেন। শামীম বলেন, গত ২-৩ দিনে যে পরিমাণ বেচাকেনা হয়েছে, তা গত দেড়মাসেও হয়নি।

শীত শুরু হওয়াার সাথে সাথে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাবার জন্য শীতের কাপড় সংগ্রহ করতে ও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনে কেরানীগঞ্জের মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের মানুষেরা ভীড় জমাচ্ছে ফুটপাতের শীতের পোষাকের দোকানগুলোতে।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে [sharethis-inline-buttons]

Check Also

কেরানীগঞ্জে ৭ মার্চের ভাষণ সম্বলিত পঞ্চাশ হাজার লিফলেট বিতরণ

স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম ডাক প্রামাণ্য ঐতিহ্য বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নতুন …

error: Content is protected !!