ঢাকার কেরানীগঞ্জে মলম পার্টির ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত দুইটি সিএনজি জব্দ করা হয়েছে। দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ ও ঢাকা জেলা দক্ষিন ডিবির সমন্বয়ে গঠিত একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় কেরাণীগঞ্জ, দোহার, ডিএমপির বিভিন্ন এলাকা, নারায়নগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে গত কয়েক দিন ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে। শনিবার সকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীর।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীর জানান, দীর্ঘদিন ধরে কেরাণীগঞ্জে একদল সংঘবদ্ধ মলমপার্টি চক্র সিএনজি ব্যবহার করে ছিনতাইয়ের কাজ করে আসছিল। মলমপার্টির সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে কেরাণীগঞ্জের হাসনাবাদ, চুনকুটিয়া, কদমতলী, আব্দুল্লাপুর, আটিবাজার, রূহিতপুর ও রামেরবান্দা এলাকায় যাত্রীবেশে সিএনজিতে ওতঁপেতে বসে থাকত। তারপর যেসকল যাত্রীদের দেখে ভাল টাকা-পয়সা আছে বলে মনে হতো তাদের একজনকে সিএনজিতে তুলে নিতো। নিরীহ যাত্রীও সিএনজিতে আরও যাত্রী আছে দেখে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিবে মনে করে ঐ সিএনজিতে উঠে পড়ত। সিএনজি কিছুদুর যাওয়ার পরে সিএনজি চালক সিএনজিটি থামাতো তখন যাত্রীবেশে বসে থাকা মলমপার্টির সদস্যদের একজন সামনে থেকে পিছনে এসে বসতো। তারপর সিএনজি চলা শুরু হলে মলমপার্টির সদস্যরা পিছনের সিটে মাঝখানে বসে থাকা নিরীহ যাত্রীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে চোখ-মুখ বেধেঁ মারধর শুরু করে দিতো।
এভাবে চলন্ত সিএনজিতে মলমপার্টির সদস্যরা প্রথমে ভুক্তভোগী যাত্রীর কাছে থাকা নগদ টাকা-পয়সা, বিকাশ-নগদ ও রকেট একাউন্টে থাকা টাকা, স্বর্ণালংকার, ঘড়ি ইত্যাদি ছিনিয়ে নিতো তারপর ভুক্তভোগী যাত্রীর মোবাইল দিয়ে তার নিকট আত্মীয়দের ফোন করে বিকাশ/নগদে মুক্তিপণের টাকা দাবী করতো অন্যথায় জিম্মি যাত্রীকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিতো। অতঃপর ভুক্তভোগী যাত্রীর আত্মীয়-স্বজন যাত্রীর চিৎকার ও কান্না শুনে যেভাবে সম্ভব টাকা জোগাড় করে ভুক্তভোগী যাত্রীর নিজের বিকাশ/নগদ একাউন্টে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিতো। তারপর মলমপার্টির কিছু সদস্য ভুক্তভোগী যাত্রীকে নিয়ে সিএনজিতে বসে থাকতো এবং অপর সদস্য যাত্রীর মোবাইল নিয়ে সরাসরি বিকাশ/নগদ এজেন্টের দোকান থেকে টাকা ক্যাশআউট করে নিতো।
এরপর মলমপার্টির সদস্যরা চলন্ত সিএনজিতে ভুক্তভোগী যাত্রীর চোখে মলম লাগিয়ে কেরাণীগঞ্জের নির্জন কোন এক জায়গায় সুযোগ বুঝে যাত্রীকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেত। এভাবে সংঘবদ্ধ এই মলমপার্টির সদস্যরা দিনের পর দিন একাধিক যাত্রীকে মারধর করে সর্বস্ব লুটে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একাধিক দস্যুতার মামলা রুজু হয়।
দূর্ধর্ষ এই মলমপার্টির সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদারের নির্দেশনায় কেরাণীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীরের তত্বাবধানে ঢাকা জেলা দক্ষিন ডিবি পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত হোসেন এর নেতৃত্বে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ ও ডিবির সমন্বয়ে গঠিত একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় কেরাণীগঞ্জ, দোহার, ডিএমপির বিভিন্ন এলাকা, নারায়নগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে গত কয়েক দিন ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ এই মলমপার্টির ০৬ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন ০১) রাসেল বড় মিয়া, ২) নাজমুল হুদা, ৩) রমজান, ৪) ভাগিনা জামাল নাঈম, ৫) পিন্টু নিলয়, ৬) আমিনুল। পরবর্তীতে আসামীদের দেওয়া তথ্যমতে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ০২ টি সিএনজি জব্দ করা হয়।
রাসেল বড় মিয়া সংঘবদ্ধ এই মলমপার্টির সর্দার। আসামীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত মলমপার্টির সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক দস্যুতার মামলা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীর।#