ঢাকার কেরানীগঞ্জে হঠাৎ করেই বেড়েছে খুন, ছিনতাই, ডাকাতি সহ নানা অপরাধের ঘটনা। গত কয়েক সপ্তাহে ঘটেছে বেশ কয়েকটি খুন ও ডাকাতির ঘটনা। এদের মধ্যে কয়েকটি ঘটনায় অপরাধী গ্রেপ্তার হলেও বেশির ভাগ অপরাধীই অধরা থেকে যাচ্ছে। খুন ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিচ্ছে।
জানা যায়, গত ১৮ আগষ্ট দিন দুপুরে প্রকাশ্যে কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুরে আল আমিন জুয়েলার্সে দোকানের মালিক স্বপনকে গুলি করে ডাকাতরা প্রায় ২০০ ভরি স্বর্নালংকার লুটে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় একমাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার অথবা লুট হওয়া স্বর্নালংকার উদ্ধার করতে পারে নি পুলিশ। দোকান মালিক স্বপনের ছোট ভাই বিপ্লব জানান, পুলিশ আমাদের আস্বস্ত করেছে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকাতদের গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কিছু হয় নি।
গত ২ আগষ্ট কেরানীগঞ্জের জিনজিরা জনি টাওয়ারের সামনে থেকে ৯৮ ভরি স্বর্ন ডাকাতি করা হয়। এ ঘটনায় দীর্ঘ চেষ্টার পরে ১১ সেপ্টেম্বর ৮ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ । এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫১ ভরি স্বর্ন ও ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া মাস দুয়েক আগে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের ঘোষ কান্দা গ্রামে ইসলাম মিয়া ও সালাম মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ১০ জনকে গুলিবিদ্ধ ও আহত করে যায়।
এছাড়াও সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে বেড়েই চলেছে খুনের ঘটনা। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে অপরাধীরা খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে।
১০ সেপ্টেম্বর কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া দক্ষিণপাড়া আখড়াবাড়ি এলাকায় খুন হয় সোনালী মন্ডল (১৮) নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী। নিহতের পরিবার দাবী করছে শশুড় বাড়ির লোকজন তাকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছে। অপরদিকে শশুর বাড়ির লোকজন বলছে সোনালী আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় নিহতের জা সন্ধ্যা রানী মন্ডলকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য আটক করেছে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
৪ সেপ্টেম্বর তারানগর ইউনিয়নের সিরাজনগর গ্রামে জমি সংক্রান্ত তুচ্ছ ঘটনায় খুন হয় মো: মোখলেস মিয়া (৩৮)। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোসলেম কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ৬/৭ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ ৩ জনকে ধরতে সক্ষম হয়েছে, বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানা যায়।
গত ৮ সেপ্টেম্বর কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া খাগাইল ঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদী থেকে একটি ভাসমান লাশ (৪০) উদ্ধার করা হয়। লাশটির পরিচয় এখনো পাওয়া যায় নি। কোন কারনে মৃত্যু হয়েছে তাও জানা যায় নি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর কেরানীগঞ্জের জিনজিরা গোলাম বাজার এলাকায় পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার হন সুভাষ (৪২) নামে এক ব্যাক্তি । পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তিনজনকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পলাতক রয়েছে আরো কয়েকজন।
এছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর শুভাঢ্যায় ইনজামুল খান নামে এক ব্যাক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ইনজামুলের পিতা ইব্রাহিম খান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, তার ছেলে কে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি ইনজামুলের স্ত্রী, মামা শশুর, শাশুড়ি ও নানী শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর বুড়িগঙ্গায় অজ্ঞাত (২৮) এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। লাশটির পড়নে ছিল জিন্সের প্যান্ট ও বাদামী টি শার্ট।
গত ২৭ জুলাই প্রকাশ্যে শাক্তার নুরন্ডি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুরাদ আহমেদ নামে এক ব্যাক্তিকে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা মজিবর রহমান কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হঠাৎ করেই খুন এবং ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতা ও হতাশায় ভুগছেন কেরানীগঞ্জবাসী।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবীর জানান, প্রত্যেকটা হত্যাকান্ডই একটা ক্রাইম। দেখা যায় যে, প্রতিটা হত্যাকান্ডের পিছনে পারিবারিক সহিংসতা, মাদক কেনা বেচা, জমি নিয়া দ্বন্ড, কিশোর গ্যাংয়ের কাহিনী রয়েছে। ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ অপরাধের প্রবনতা অনেক সময় বেড়ে যায়। এবং প্রত্যেকটা হত্যাকান্ডকে আমি আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এবং প্রত্যেকটা হত্যাকান্ডকে আমরা এতো সিরিয়াস ভাবে নেই যে মেক্সিমাম হত্যাকান্ডই ডিটেকটেড। প্রত্যেকটা হত্যাকান্ডই একটা হত্যাকান্ড। এবং প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডের পিছনেই আলাদা করে একটি গল্প রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে সবগুলোকে একভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। প্রত্যেকটা হত্যাকান্ডকেই আমরা সমান গুরুত্ব দিয়ে অপরাধীদের দ্রুত ধরতে দিনরাত পরিশ্রম করি। #