করোনা মহামারিতে যেখানে অনেক হাসপাতাল বিভিন্ন রোগীদের সেবা দিতে অপরাগত প্রকাশ করছে, সেখানে সকল বিভাগে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে কেরানীগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালে। সেবা নিতে এসে কেউ যেন বঞ্চিত না হন সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন বিশেষ উদ্যোগ। ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে হাসপাতালটি। করোনা আতঙ্কে রোগীদের নানা জায়গায় হয়রানি হবার অভিযোগ মিললেও সুচিকিৎসা মিলছে সাজেদা হাসপাতাল।
খোজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালটিতে এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫০ জন রোগী সেবা নিচ্ছে। যেটা আগে স্বাভাবিক সময়ে প্রায় ২০০ জনের মতো হতো। চালু রয়েছে গর্ভবতী সেবা, শিশু বিভাগ,, মেডিসিন বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, অর্থপেডিক্স, সার্জারি, প্যাথলজি, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সহ প্রায় সকল বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম। এছাড়া এম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও রয়েছে ২৪ ঘন্টা।
করোনা প্রতিরোধে হাত জীবনুমুক্ত করতে হাসপাতালের সামনে রয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। সেখান থেকে রোগী ও রোগীর সাথে থাকা আত্মীয়-স্বজন হাত ধুয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। প্রবেশপথে নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছে রয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সেখান থেকেও হাত জীবানুমুক্ত করে হাসপাতালে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এছাড়াও প্রবেশপথে মাইকিং করে সকলকে মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে। জ্বর , ঠান্ডা , কাশি নিয়ে কোন রোগী আসলে তাকে আলাদা ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে বিশেষ কক্ষে । যদি করোনার মতো কোন উপসর্গ দেখা দেয়, তা হলে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত এমন কোন রোগী আসে নি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক উপেক্ষা করে অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাহসিকতার সাথে দিনরাত ২৪ ঘন্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসাপাতালে কর্তব্যরত ৩০জন ডাক্তার, ৬০ জন নার্স ও ৭০ জন সেবাকর্মীরা। তাদের নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয়েছে ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ। স্বাস্থ্যখাতের যোদ্ধা হিসেবে তারা এ দুর্যোগকালীন রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হাসাপাতালে নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও সেবা কর্মীরা।
আগানগর থেকে সেবা নিতে আসা সীমা আক্তার নামে এক রোগী জানান, আমার ডেলিভারির সময় হয়েছে। অনেক জায়গায় শুনছি ক্লিনিক বন্ধ। কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম সাজেদা হাসপাতাল খোলা আছে। তাও ভয়ে ছিলাম হাসপাতালে আসলে সেবা পাই কিনা। কিন্তু এখানে এসে সেবা পেলাম। এখন স্বস্তি বোধ করছি।
সুমা নামে আরেক রোগী বলেন, আমার বাচ্চাটার ঠান্ডাজনিত সমস্যা ,ওকে নিয়মিত সাজেদা হাসপাতালেই চেকআপ করাই। ‘আমরা খুব পেরেশানিতে ছিলাম হাসপাতাল খোলা থাকে কি না। অনেকে বলছে যাইয়েন না। তারপরও এসে দেখলাম হাসপাতাল খোলা। সেবা পেয়ে আমি সন্তুষ্ট।
এ বিষয়ে সাজেদা হাসপাতালের সিনিয়র ম্যানেজার মো: শাহজালাল ফরাজীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘স্বাস্থ্য সেবায় সাজেদা হাসপাতাল শুরু থেকে স্বল্পব্যয়ে মানসম্মত সেবা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বর্তমান করোনা মহামারিতেও আমরা ২৪ ঘণ্টা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের সাজেদা হাসপাতালের নারায়নগঞ্জ ব্রাঞ্চটি আমরা করোনা রোগীদের সেবার জন্য ব্যবহার করতে দিয়েছি। দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সাজেদা হাসপাতালের কেরানীগঞ্জ ব্রাঞ্চে কোন রোগী যেন সেবা নিতে এসে বঞ্চিত না হয় সেজন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য সব সময় সেবা দিয়ে যাচ্ছি। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা, আমাদের রোগীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা সেবা দিচ্ছি। সরকারী ডাক্তার নার্সরা আর হাসপাতালগুলো এই কঠিন পরিস্থিতিতে সেবা দিতে পারলে আমরা কেনো পারবো না ?