আতিক মেসবাহ লগ্ন: গল্প বলা ও লেখা তার নেশা। নেশাকে আঁকড়ে ধরে হেটেছেন জীবনের সোনালি সময়ে। পেয়েছেন ভক্তদের পাহাড় সমান ভালোবাসা। কখনও মাইক্রোফোন, আবার কখনও বইয়ের পৃষ্ঠায় শব্দের আদৌলতে নিঙ্গড়ে দিয়েছেন উপলব্ধির শব্দমালাকে।
বলছিলাম লেখক মশিউর রহমান শান্ত’র কথা। দেশের রেডিওপ্রেমীদের কাছে তিনি পরিচিত আরজে শান্ত হিসেবে। লেখক কিংবা কথাবন্ধু, দুই নামেই সব্যসাচী বনে এগিয়ে এসেছেন সমান তালে। জীবনের বন্ধুর পথ পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আসা তার নিজের কাছেই অনুপ্রেরণা । লেখালেখি, সংবাদ পাঠ, উপস্থাপনা, মডেলিং সবখানেই তার পদচারণা।
শুরুটা ২০১০ সালে একুশে টেলিভিশনে ‘মুক্ত খবর’ অনুষ্ঠানে প্রতিবেদক ও সংবাদ পাঠক হিসেবে। এরপর এবিসি রেডিও, ঢাকা এফ এম ৯০.৪ সহ কাজ করেছেন অসংখ্য মিডিয়া প্লাটফর্মে। ‘বি পজেটিভ’, ‘পুলিশ ডায়েরী’ কিংবা ‘ধোকা’র মতো প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে মুখরিত করে রেখেছেন সমকালীন শ্রোতাদের।
বর্তমানে কাজ করছেন এসএ টেলিভিশন ও রেডিও ধ্বনি ৯১.২ এফ এম এ। কর্পোরেট জীবনে সফল মুখগুলোর সফলতার পেছনের গল্প নিয়ে রেডিও ধ্বনিতে তার বিশেষ শো ‘হোয়াট কালার’। সেই সাথে জীবনগল্প নিয়ে করা ‘আহা জীবন’ অল্প দিনেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। কথাবন্ধু হিসেবে প্রায় এক দশক পথচলা নিয়ে জানতে চাইলে খুব সহজ ও প্রাণবন্ত ভাবেই বললেন পথচলার গল্প।
এবার লেখক মশিউর রহমান শান্ত’র গল্প জানা যাক। ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি কাজ করত আলাদা মাদকতা। ‘জোসনা ও জননীর গল্প’ পড়ে হুমায়ুন আহমেদে মুগ্ধ হয়ে যেমন পড়েছেন তার অসংখ্য বই, তেমনি পার্থিব-সাতকাহনে আসক্তি ছিল চরম পর্যায়ে। আদর্শ পাঠক থেকেই শুরু করলেন পত্রিকায় লেখা। ‘দৈনিক যায়যায়দিন’ এ থেকে শুরু হয়ে দেশসেরা বিভিন্ন দৈনিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তার লেখার সংখ্যা গুণতে যে কাউকে বেশ কাঠখড়ই পোড়াতে হবে।
দীর্ঘ পথচলায় লিখেছেন ষোলোটি বই। এবারের বইমেলায় বর্ষাদুপুর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তার বই ‘অভিমানের শহর’। সূর্যোদয়, বি পজেটিভ, ট্রেন টু কাশমীর, রেডিও জকি, ভোরের রং কালোর মতো বইগুলো লেখক হিসেবে তাকে শুধু জনপ্রিয়তাই দেয় নি, স্থান দিয়েছে পাঠক হৃদয়ে।
জীবনের এই দীর্ঘ পথচলা নিয়ে জানতে চাইলে খুব সহজ ও হাস্যজ্জ্বল অবয়বেই বললেন, “গল্প বলতে ও লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাইক্রোফোন হোক আর বই’ই হোক আমার গল্পগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে গেলেই প্রশান্তি।”
এছাড়াও তরুণদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন অনুপ্রেরণামূলক গল্প বলার প্লাটফর্ম ‘টার্নিং টকস’। লেখালেখি ও উপস্থাপনায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য সদ্য ‘বিশ্ব যুব নেতা সম্মাননা-২০২১’ পেয়েছেন তিনি। নেপাল সরকার ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সংস্থার সহযোগিতায় গ্লোবাল ইয়ুথ পার্লামেন্টের উদ্যোগে কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব সম্মেলনে এ সম্মাননা পান তিনি।
বই ও গল্পপ্রেমীদের কাছে মশিউর রহমান শান্ত অনবদ্য এক নাম। কর্ণকুহরে পৌঁছে যাওয়া কন্ঠস্বর কিংবা চোখে দেখা বইয়ের শব্দই হোক, শান্ত’র সৃষ্টি অশান্ত করুক হৃদয়ের শান্ত সরোবরকে। পিন-পতন নিরবতা ভেঙ্গে শান্ততে মুগ্ধতা খুঁজুক পাঠক-শ্রোতারা।