আজিজ উল্লাহ, উপকূলীয় প্রতিনিধি:
টেকনাফের বাহারছড়া মাথাভাঙা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একই পরিবারে চারজন ভাই-বোন মানসিক ভারসাম্যহীনভাবে দিনাতিপাত করে আসছে। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের দেখাশোনার মতো একেবারে কেহ নেই। মা জীবিত থাককে তাদের দুমুঠো খাবার হলেও জুটতো। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে তার। তারা যে বাড়িতে থাকেন তা একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। যেখানে রাতে আলো নেই, রান্নাবান্না নেই। নেই গোসলের ব্যবস্থা। এভাবেই অনাহারে-অর্ধহারে চিকিৎসাহীন অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এদের পরিবারের ছেলে-মেয়ে সবাই মোটামুটি শিক্ষিত ছিল। টাকা পয়সা জমিজমামার কমতি ছিল না। পিতা ছিলেন একজন আলেম। সবাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাসের পাশাপাশি একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবার ছিল। হঠাৎ একদিন পুরো পরিবারে চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েন।পরিবারের একে একে চারজন সদস্যই বাকরুদ্ধ, পঙ্গু, বোবা, এবং বলতে গেলেই সবাই পাগল হয়ে যায়। সেই তখন থেকেই দীর্ঘ দিন ধরে এক পরিবারের চারজনেই সুস্থ থেকে হঠাৎ মানসিক রোগীতে পরিনত হয়। ফলে মানবের জীবনযাপন করে আছেন। পরিবারে বাবা-মা বলতে তাদের আর কেহ নেই। পাগল হলেও ভাই-বোন একে অপরকে আধাঁরে-আলোতে ঝড়ে বৃষ্টিতে সেই ঘর থেকে ছেড়ে যায়নি।
টেকনাফের বাহার ছড়া মাথাভাঙ্গা পাহাড়ের পাদদেশে একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে অবস্থানরত স্থানীয় মৃত মৌলভী কবির আহমেদের ছেলে-মেয়ে । যার মধ্যে রয়েছেন পুত্র তাহের উদ্দিন (৪০) সেই একসময় সুনামের সহিত পল্লী চিকিৎসক হিসেবে অনেক রোগীকে সেবা প্রদান করতেন। আজ সেই নিজেই মানসিক রোগী। কেহ এই পতিত বাড়িতে গেলে নিতান্তই অসহায়ত্বের নয়নে থাকিয়ে থাকেন। ভাব দেখে মনে হয় অনেক কিছু বলতে চায় কিন্তু বলা সম্ভব হয় না। এছড়া তার আরেক ছোট ভাই দেলোয়ার(৩০) সেই বাড়ি ছাড়া হয়ে পথেপ্রান্তে মানসিক রোগী হয়ে ঘুরে বেড়ায়। ছেনুআরা নামের আরেকটি মেয়ে রয়েছে সেই একদিকে মানসিক রোগী অন্যদিকে পঙ্গু হয়ে কোনমতে নড়াচড়া করেন। এছড়া তার একটি পায়ে টিউমার রয়েছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসাহীনতার কারণে তার একটি পা পচনধরা শুরু হয়েছে। তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল পরে মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার সংসার ভেঙে যায়। সেই মোটামুটি শিক্ষিত পাগল হলেও সেই কবিতা, ছড়া এবং একাকী গুন গুননিয়ে গান গেয়ে যায়। কেহ গেলে জরাজীর্ণ পুরনো বাড়ির কোণের দিকে কিছু একটা ইশারা দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেন। আরেক ছোট মেয়ে রুবি (৩০) সেই একেবারেই বোবা নিজের চুল টেনে ছিঁড়তে ব্যস্ত। সেই কোন আত্মীয় গেলেও ফিরিয়েও থাকায় না।পাহাড়ের পাদদেশে অকার্যকর হয়ে ভেঙে পড়ার উপক্রম বাড়িটি যেকোন সময় খুঁটি বা ছাল ভেঙে মৃত্যুর আশঙ্কাও রয়েছে।
এলাকার সচেতনমহলের প্রশ্ন সমাজ কী এই দায় এড়াতে পারে? তবু মৃত্যুই যেন তাদের এই অমানবিক মানবেতর জীবন থেক মুক্তির একটা পথ। দিনে সূর্যের আলোর দিশা পেলেও রাতে কখনো আলো জ্বলে না সেই জরাজীর্ণ বাড়িতে। বাড়ির চতুর্থ দিক থেকে যেন খোলামেলা। প্রস্রাব, পায়খানা এবং ঘুমানোর সবকিছুই যেন এক স্থানে। তাদের দিকে থাকালে যেকোন বিবেকবান ও মানবিক মানবের হৃদয় মোচড় দিয়ে উঠবে । পৃথিবীতে আত্মীয় বলতে তাদের একটি বোন ছাড়া দেখাশোনা করার মতো কেহ নেই।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ উল্লাহ জানান,” একসময় তাদের পরিবারে দুনা দুন সম্পত্তি ছিল এই অমানবিক পরিস্থিতি সব শেষ করে দিলো। চিকিৎসা করার মতো কোন মানবিক মানুষ যদি এগিয়ে আসেন অন্তত মৃত্যুর আগে সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা কিছু টা এড়িয়ে যেতে পারবেন। তাদের শেষ বারের মতো একটু কী চিকিৎসা করার মতো চেষ্টা করা দরকার। তাদের চিকিৎসা ও মাথাগোঁজার জন্য একটা ঘর প্রয়োজন। তাই সকল মানবিক মানুষের উচিৎ তাদের পাশে দাঁড়ানো।
তাদের সুস্থ একমাত্র বোন ফেরদৌস বেগম বলেন,” তারা রান্নাবান্না, ঘর পরিষ্কার ও গোসল নিজেরা কিছুই করতে পারে না। বাবা-মাও নেই। আমি অন্য পরিবারের বউ আমার সংসার সামলাতে কষ্ট হয়। প্রতিদিন সকালে-বেকালে ৩ কিলোমিটার দূর থেকে এসে তাদের দেখাশোনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের চিকিৎসার জন্য সহায়তা প্রয়োজন। তারা নিজেরা নিজেকে চিনতে পারে না। বোন একটার পায়ে টিউমারে হয়ে পচনধরা শুরু হয়েছে।”