আফিফা আর আফসারের শোকে পাথর কেরানীগঞ্জবাসী

পৃথিবীর ভাষা ঠিক মতো বুঝে ওঠার আগেই হিংস্র এক ট্রাক দুর্ঘটনায় প্রান গেল কেরানীগঞ্জের রাজেন্দপুর এলাকার আপন দুই ভাই বোন আফিফা আক্তার ও আফসার আহমেদ। নিহত দুই ভাই-বোনের নামাযের জানাযায় আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন কেরানীগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ।

দুর্ঘটনার পরের দিন মঙ্গলবার কেরানীগঞ্জের কসমোপলিটন ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে সকাল ১১ টার দিকে নিহতদের স্মরনে শোক সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই স্কুলেই আফিফা পঞ্চম শ্রেনীতে ও আফসার দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়াশোনা করতো। মিলাদে নিহতদের বাবা শামসুল আলম ডালিম, কসমোপলিটন স্কুলের শীক্ষার্থী- অভিভাবক সহ আশে পাশের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা অংশগ্রহন করেন।

সবাই এ সময় কালো ব্যাজ ধারন করেন। উপস্থিত সবার চোখেই ছিল কান্না শিক্ত। মিলাদ মাহফিলে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান সহ এলাকার বিশিষ্ট জনেরা ও এ সময় উপস্থিত ছিল।

কসমোপলিটন ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আর কতো লাশ পরলে আমরা নিরাপদ সড়ক পাব ? প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুর্ঘটনায় লাশ পড়ছে। সবারই নিরাপদে রাস্তায় চলা ফেরার অধিকার রয়েছে। আমরা নিরাপদ সড়কে চলতে চাই।
মিলাদ মাহফিলের আগে কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় নিহতদের শোকে ও ঘাতকদের বিচারের দাবীতে একটি শোক র‌্যালী আয়োজন করা হয়। র‌্যালীতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহন গ্রহন করে।

র‌্যালী থেকে আগামী বৃহস্পতিবার এই এলাকায় মানব বন্ধন করার ঘোষনা দেয়া হয়েছে। এ সময় দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার ওসি সবার উদ্যেশে বলেন আপনারা যেমন শোকাহত আমরাও তেমনী শোকাহত। আপনাদেও আমি কথা দিচ্ছি এ হত্যার উচিত শিক্ষা দেয়া হবে। ওই ট্রাক চালক ও হেলপারকে আমরা অতিশিগ্রই গ্রেপ্তার কওে আইনের আওতায় আনবো।

নিহতদের বাবা শামসুল আলম ডালিম বলেন, আর কোন বাবা মায়ের বুক যেন আমাদের মতো খালি না হয়। আর কোন সন্তানকে যেন রাস্তায় এভাবে না মরতে হয়। সরকারের কাছে আমার আবেদন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করুন। ঘাতক ট্রাক ড্রাইভার ও হেল্পারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করুন। এ সময় নিহত আফিফা আক্তার ও আফসারের মা পুতুল বেগম ছোট ছেলে রাফসানকে জড়িয়ে ধওে বাক রুদ্ধ হয়ে পড়ে থাকেন।

দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ জামান বলেন, প্রতিটা বাবা মায়ের কাছে তার সন্তান আদরের , যে হারিয়েছে সে বুঝে। একটা বাবার চোখের সামনে তার সন্তানের মৃত্যু কতটা মর্মান্তিক হতে পারে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। নিহতের বাবা বাদী হয়ে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমার দ্রুতই দোষীদের গ্রেপ্তার কওে আইনের আওতায় এনে বিচারের চেষ্টা করবো।

উল্লেখ্য গতকাল স্কুল থেকে বাবার মোটর সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারা যায় আফিফা আক্তার ও আফসার। বাসায় ফেরার পথে পিছন থেকে ঘাতক ট্রাক মোটর সাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে পাশের গর্তে ছিটকে পরে যায় আফিফা, আফসারের বাবা শামসুল আলম। আফিফা ও আফসার ট্রাকের সামনে পরলে ট্রাক ড্রাইভার গাড়িটি না থামিয়ে বাচ্চাগুলোর উপর দিয়েই ট্রাক উঠিয়ে দেয় ঘাতক ড্রাইভার। ঘটনাস্থলেই খন্ড বিখন্ড হয়ে যায় বাচ্চা দুটির দেহ। ট্রাকটি থামালে বেচ যেতে পারতো দুটি ফুটফুটে প্রান। #

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে [sharethis-inline-buttons]

Check Also

কেরানীগঞ্জে ৭ মার্চের ভাষণ সম্বলিত পঞ্চাশ হাজার লিফলেট বিতরণ

স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম ডাক প্রামাণ্য ঐতিহ্য বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নতুন …

error: Content is protected !!